সাইলেন্ট কিলার সরব হবেন কবে!

টেস্ট ক্রিকেটে নিজের ক্যারিয়ার সেরা ইনিংসটি খেলেই অবসর নিয়ে নিলেন। সে অবসরে যতটা না ছিল ক্রিকেটিয় কারণ তারচেয়ে অনেক বেশি অভিমানের সুর। ফলে এখন মাহমুদউল্লাহ শুধু খেলেন ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট। সেটিও আগামী দুই মাস খেলছেনা বাংলাদেশ দল। ফলে বাংলাদেশের ক্রিকেটের সাইলেন্ট কিলারকে বেশকিছুদিন সাইলেন্টই থাকতে হবে।

বাংলাদেশকে অনেক হারতে থাকা ম্যাচ জিতিয়েছেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। মিডল অর্ডারে নেমে নীরবে প্রতিপক্ষের হাত থেকে ম্যাচ করে আনতে পারার ক্ষমতার জন্যই সাইলেন্ট কিলার উপাধি পেয়েছিলেন। তবে ব্যাট হাতে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের সেই সার্ভিস বাংলাদেশ পাচ্ছেনা অনেকদিন ধরেই। ওয়ানডে কিংবা টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে তাঁর ব্যাটের সেই ধাঁর নেই অনেকদিন ধরেই।

এছাড়া সহসাই ম্যাচ খেলারও সুযোগ পাচ্ছেন না এই ব্যাটিং অলরাউন্ডার। এবার ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ খেলেছেন মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের হয়ে। বড় বড় তারকাদের নিয়েই সাজানো হয়েছিল দলটি। এমনকি রিয়াদ নিজেও দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে ফিরে দলটির হয়ে সাতটি ম্যাচ খেলেছেন। তবুও মোহামেডান পৌছাতে পারেনি সুপার লিগে।

ওদিকে ঐতিহ্যবাহী এই দলটার হয়ে রিয়াদের পারফর্মেন্সও ছিল সাদামাটা। রিয়াদ যেই সাতটা ম্যাচ খেলেছেন সেগুলোর মাত্র তিনটাতে জয় পেয়েছে মোহামেডান। এমনকি সাত ম্যাচে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ হাফ সেঞ্চুরির দেখা পেয়েছেন মাত্র এক ম্যাচে। এছাড়া বল হাতে পেয়েছেন তিন উইকেট। ফলে ঢাকা লিগেও রিয়াদের পুরনো সেই রূপ খুঁজে পাওয়া যায়নি।

ওদিকে জাতীয় দলের অন্য ক্রিকেটাররা খেলছেন সুপার লিগে। তবে মোহামেডান বাদ পড়ে যাওয়ায় রিয়াদ আর কোন ম্যাচ খেলার সুযোগ পাচ্ছেন না। এছাড়া আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেও অনেকদিন মাঠে নামার সুযোগ নেই রিয়াদের সামনে। কেননা ঈদের পরেই বাংলাদেশে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ খেলতে আসছে শ্রীলঙ্কা। টেস্ট থেকে অবসর নেয়া রিয়াদ তাই এই সিরিজে খেলছেন না।

এরপর বাংলাদেশ রঙিন পোশাকের ক্রিকেটে মাঠে নামার কথা জুনের শেষ দিকে। জুন-জুলাইয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলার কথা বাংলাদেশের। সেখানেই আবার মাঠে নামার সুযোগ পাচ্ছেন এই ক্রিকেটার। তবে প্রায় তিন মাস পর সরাসরি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে মাঠা নামাটা বেশ কঠিন চ্যালেঞ্জই হবে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের জন্য।

এছাড়া আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেও খুব বেশি ছন্দে ছিলেন না এই ব্যাটসম্যন। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি দলের অধিনায়ক হলেও তাঁর স্ট্রাইকরেট নিয়ে প্রশ্নটা অনেকদিন ধরেই। ব্যাট হাতে ঠিক টি-টোয়েন্টি মেজাজটা ধরতে পারছেন না এই অধিনায়ক।

যেমন ২০২১ সালে বাংলাদেশের হয়ে ২৬ টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছেন তিনি। সেখানে ২৩.৬১ গড়ে তাঁর ব্যাট থেকে এসেছিল ৪৯৬ রান। ২৬ ম্যাচে হাফ সেঞ্চুরির দেখা পেয়েছিলেন মাত্র দুইবার। তবে সবচেয়ে বড় সমস্যা ছিল তাঁর স্ট্রাইকরেট। ২০২১ সালে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ছয় নম্বরে ব্যাট করা রিয়াদের স্ট্রাইক রেট ছিল মাত্র ১০৫.৩০। ফলে তাঁর এই মন্থর ইনিংস গুলো ভালো ভাবেই বাংলাদেশকে ভুগিয়েছে।

এছাড়া ওয়ানডে ক্রিকেটেও দেখা গিয়েছে একইরকম চিত্র। যেমন আফগানিস্তানের বিপক্ষে শেষ ওয়ানডে সিরিজেও রিয়াদের এমন ধীরগতির ইনিংস দেখা গিয়েছে। প্রথম দুই ম্যাচে একেবারেই ব্যর্থ হবার পর তৃতীয় ওয়ানডে ম্যাচে খানিকক্ষণ বাইশ গজে থাকতে পেরেছিলেন। তবে ৫৩ বলের সেই ইনিংসটিতে ছিল না একটিও বাউন্ডারি। ৫৪.৭১ স্ট্রাইকরেটে করেছিলেন মাত্র ২৯ রান।

ছয় নাম্বারে নেমে রঙিন পোশাকের ক্রিকেটে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের এই ইনিংস গুলো নিয়ে সমালোচনার জায়গা অনেক। রিয়াদ তাঁর ক্যারিয়ার জুড়ে যে ধরনের ব্যাটিং করে এসেছেন সেটা এখন আর তিনি পারছেন না। ফলে প্রশ্নটা করতেই হয়, সাইলেন্ট কিলার কি সাইলেন্ট হয়েই থাকবেন নাকি আবার সরব হবেন?

লেখক পরিচিতি

আমার ডায়েরির প্রতিটা পৃষ্ঠাই আমার বাইশ গজ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link