সাব্বির ২.০

নিজেকে ফিরে পাওয়ার তাড়না, নিজেকে আবার জাতীয় দলে দেখার ইচ্ছে এসবকিছুই যেন এখন সাব্বির রহমান রুম্মনের প্রধান চ্যালেঞ্জ। বাংলাদেশের ব্যাটারদে মধ্যে বলকে ক্লিনহিট করা ব্যাটারদের একজন হিসেবেই ধরা হয় সাব্বিরকে। তাঁর ব্যাটে বলের সংযোগ বেশ একটা শ্রুতিমধুর ধ্বনি উৎপন্ন করে সে তো আর নতুন কিছু নয়।

বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল) থেকে উঠে এসেছেন তিনি। সম্ভাবনার আলো জ্বালিয়ে তিনি এসেছিলেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে। সাদা বলের ক্রিকেটে তাঁকে নিয়ে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিল গোটা বাংলাদেশ। তবে সে স্বপ্ন যেন সময়ের সাথে মলিন হয়েছে। ফর্মহীনতা আর শৃঙ্খলতার গণ্ডির পেরিয়ে যাবার আকাঙ্ক্ষাই হয়ত তাঁর জন্যে কাল হয়ে দাঁড়িয়েছিল। তিনি ক্রমেই নিজের জায়গা হারালেন জাতীয় দল থেকে।

তবে এবারের ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগকে আর বাকি সবার মত করেই নিজেকে প্রমাণের মঞ্চ হিসেবে বেছে নিয়েছেন সাব্বির রহমান। তাঁর ব্যাট থেকে রানও আসছে নিয়ম করে। এই ব্যাটারের রান করাটাও যেন চোখে প্রশান্তি। দারুণ ব্যাটিং স্টাইলের ব্যাটিং তো একটা লম্বা সময় ধরে কোনরকম বিরক্তি ছাড়াই। তিনি হয়ত একটু দেরিতে হলেও সে বিষয়টি আন্দাজ করতে পেরেছেন।

ডিপিএলের শুরুতে তিনি নিজের স্বভাবচারিত পজিশনেই খেলেছেন। ছয় কিংবা পাঁচ নম্বর পজিশনেই তাঁকে বিবেচনা করা হত জাতীয় দলে। মূলত ফিনিশারের যে অভাবটা ছিল সে অভাবটা পূরণের জন্যেই জাতীয় দলে ডাক পেয়েছিলেন সাব্বির। তবে তিনি সে প্রত্যাশার পূর্ণতা হয়ে উঠতে পারেননি। তবুও তিনি কালেভদ্রে দূর্দান্ত কিছু ইনিংস খেলে তাঁর সে ফিনিশার সত্ত্বার প্রমাণ রাখার চেষ্টাটা করে গেছেন।

তাছাড়া পেশিশক্তিও রয়েছে তাঁর। বলকে সজোরে আঘাত করতে সক্ষম তিনি। সে বিবেচনায় হার্ডহিটার তকমাও হয়ত জুড়ে দেওয়া যেত। তবে তিনি আর স্থায়ী হলেন কই! সে ব্যর্থতা থেকেই হয়ত তিনি ডিপিএলে ছয়-সাতে নিজেকে আবার ঝালিয়ে নেওয়ার প্রত্যয়ে ব্যাটিং করেছেন। তবে তিনি যেন সে বৃত্ত থেকে বেড়িয়ে আসতে চাইছেন। তিনি যেন একজন পুরোদস্তুর ব্যাটার হয়েই আবার ফিরতে চাইছেন জাতীয় দলে।

সে ভাবনা থেকেই হয়ত তিনি ডিপিএলের সুপার লিগ থেকে টপ অর্ডারে ব্যাটিং করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তাঁর সে সিদ্ধান্তে সায় ছিল লেজেন্ড অব রুপগঞ্জের টিম ম্যানেজমেন্টেরও। সে সম্মতি আর নিজের সিদ্ধান্তের প্রতিফলনে সাব্বির বিন্দুমাত্র নিরাশ করেননি। তিনি তিন নম্বরে ব্যাট করতে নেমে রুপগঞ্জ টাইগার্সের বিপক্ষে ১২৫ রানের দূর্দান্ত এক ইনিংস খেলেছেন। গাজি গ্রুপ ক্রিকেটার্সের বিপক্ষেও ‘নার্ভাস নাইন্টিস’ এর শিকার হন সাব্বির। সে ম্যাচেও খেলেছেন তিন নম্বরে করেন ৮৩ বলে ৯০ রান। প্রমাণ করেছেন সাব্বির রহমান একজন ব্যাটার।

তিনি টপ অর্ডারের চাপ সামলে নিতে জানেন। তিনি জানেন টপ অর্ডারে ঠিক কি করে ব্যাটিং করতে হয়। তিনি হয়ত একটা ম্যাসেজ দিতে চাইছেন জাতীয় দলের টিম ম্যানেজমেন্টকে। শুধুমাত্র একজন ফিনিশার হিসেবে নয়, একজন টপ ব্যাটার হিসেবেও তাঁকে বিবেচনা করা যেতে পারে জাতীয় দলে। তবে শুধুমাত্র একটি ইনিংস দিয়ে আসলে তাঁকে বিচার করা ভুল।

তবে তাঁকে ধারাবাহিক হতে হবে। কিন্তু এটা স্পষ্ট যে সাব্বির চেষ্টাটা করে যেতে চাইছেন। ওই দুই ইনিংসের ছাড়া আর তেমন কোন বড় ইনিংস তিনি করতে পারেননি টপ অর্ডারে। ঠিক এই জায়গাটায় তাঁর চেষ্টাটা ফিঁকে হয়ে যেতে শুরু করে। তিনি ঠিক এখানটায় পিছিয়ে যান বাকি সবার থেকে। তবে নিশ্চয়ই সাব্বির থেমে যাবেন না। নিজের চেষ্টা অব্যাহত রাখবেন। অমসৃণ পথটা একদিন তাঁর মসৃণ হবে হয়ত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link