দুই যুবরাজের এক রাত

অভিষেক ম্যাচ মানেই যেকোনো ক্রিকেটারের জন্যই ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বড় এক শুরু। অনেক বড় এক চ্যালেঞ্জ। সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করার আগে স্নায়ুচাপ তো অবশ্যই থাকে। ভারতীয় ক্রিকেটের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার ও স্টাইলিশ ব্যাটার হিসেবে পরিচিত যুবরাজ সিং অভিষেক ম্যাচের আগে ঘুমাতেই পারেননি। সে সময় ভারতের অধিনায়ক সৌরভ গাঙ্গুলির এক কথায় আগের রাতে ঘুম উড়ে গিয়েছিল এই অলরাউন্ডারের।

২০০০ সালে আইসিসি নক আউট টুর্নামেন্ট দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হয় যুবরাজের। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে অভিষেক ইনিংসের আগে যুবরাজকে গাঙ্গুলি জিজ্ঞেস করেন ওপেনিংয়ে খেলতে পারবে কিনা। এমনটা জানার পর ওই রাতে ঘুমাতেই পারেননি এই অলরাউন্ডার।

‘হোম অফ হিরোস’ নামক এক ইভেন্টে সঞ্জয় মঞ্জরেকরকে একটি মজার ঘটনা বলেছিলেন যুবরাজ সিং। তিনি বলেন, অভিষেক ম্যাচের আগের দিন সন্ধ্যায় সৌরভ যুবরাজকে জিজ্ঞেস করেছিলেন যে সে ওপেনার হিসাবে খেলতে প্রস্তুত কিনা। যুবরাজ বলেন, ‘আমি তাঁকে বলেছিলাম যে তিনি যদি চান তবে আমি অবশ্যই ওপেন করব। এর পর আমি সারা রাত ঘুমাতে পারিনি।’

ভারতীয় ক্রিকেটের দু:সময়ে দলের দায়িত্ব নিয়েছিলেন সৌরভ। এরপর দলকে পুনরায় উঠে দাঁড়াতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন তিনি। যুবরাজ, রায়নাদের গড়ে ওঠার পেছনেও সৌরভের অবদান ছিল অনেক। সেসময় যুবরাজের অভিষেকের সৌরভ স্রেফ মজার ছলেই তাঁকে উদেশ্য করে ওপেনিংয়ে খেলার কথা বলেন।

পরবর্তীতে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে নিজের অভিষেক ইনিংসে পাঁচ নম্বরে ব্যাট করতে নেমে ৮০ বলে ৮৪ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংস খেলেন যুবরাজ। ৩৭ রানে অবশ্য জীবনও পেয়েছিলেন তিনি। তবে ব্রেট লি, গ্লেন ম্যাগ্রা, জেসন গিলেস্পিদের বিপক্ষে খেলতে নেমে দুর্দান্ত এই ইনিংস নিজের ক্যারিয়ারের জন্য সেরা মনে করেন যুবরাজ।

যুবরাজ বলেন, ‘আমি ৫ নম্বরে ব্যাটিং করছিলাম। আমি খুব স্নায়ুচাপে ছিলাম। কিন্তু যখন আমি ব্যাট করতে গেলাম আমি শুধু বলের স্যুইংয়ের দিকে ফোকাস করছিলাম। আমাকে যদি আজকের দিনে বলা হয় আমি অস্ট্রেলিয়ার এই বোলিং আক্রমণের বিপক্ষে ৩৭ রান করেছি আমি খুব খুশি হবো। আমি সৌভাগ্যবান যে আমি ৮৪ করেছি এবং স্বাভাবিক খেলার সাহায্যে বলটি কাছে নিয়ে গিয়ে জোরে আঘাত করেছি। অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে প্লেয়ার অফ দ্য ম্যাচের পুরষ্কার জেতাটা আমার জন্য অনেক বড় ব্যাপার ছিল।’

দলের বাকিদের ব্যর্থতার পরেও যুবরাজের দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে ৯ উইকেটে ২৬৫ রান সংগ্রহ করে ভারত। জবাবে ব্যাট করতে নেমে ভারতীয় বোলারদের দাপুটে বোলিংয়ে ২৪৫ রানেই গুড়িয়ে যায় অজিদের ইনিংস। যুবরাজের অসাধারণ পারফরম্যান্সে ওই ম্যাচে ২০ রানের অসাধারণ এক জয় পায় ভারত। অনবদ্য এক ইনিংসে অভিষেকেই ম্যাচ সেরার পুরস্কার জেতেন যুবরাজ সিং।

অস্ট্রেলিয়ার অন্যতম সেরা বোলিং আক্রমণের বিপক্ষে ৮৪ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংস দিয়ে ক্যারিয়ারের শুরু। এরপর চলেছেন লম্বা পথ। মাঝে ক্যান্সারের কারণে জীবনটাই থমকে যাবার পথে ছিল। কিন্তু তিনি হার মানেননি বরং ক্যান্সারকে হার মানিয়ে ঠিক ২২ গজে আবার ফিরেছেন তিনি। অলরাউন্ড নৈপুণ্যে ভারতের ২০১১ বিশ্বকাপ জয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন তিনি। জেতেন টুর্নামেন্ট সেরার পুরস্কারও।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link