হাস্যজ্বল হাসারাঙ্গা

বড় বড় তারকার বিদায়, বোর্ডের দূর্নীতিতে মুখ থুবড়ে পড়ে শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট। একসময় সিংহের মত ২২ গজ দাপিয়ে বেড়ানো সেই লঙ্কান দলটা এখন নিষ্প্রভ প্রায়। থিসারা পেরেরা বিদায়ে একজন বিধ্বংসী অলরাউন্ডারের বড় অভাব দেখা দেয় শ্রীলঙ্কা দলে। দলের এমন দুর্দশায় আশার আলো হয়ে আসেন এক তরুণ অলরাউন্ডার; লেগ স্পিন অলরাউন্ডার। লোয়ার-মিডল অর্ডারে দুর্দান্ত ব্যাটিং আর লেগ স্পিন ভেলকি দিয়ে অল্পতেই নজর কাড়েন।

মুখ থুবড়ে পড়া লঙ্কান ক্রিকেটকে নতুন করে আশা দেখান। বনে গেলেন দলের অন্যতম ভরসা আর আস্থার নাম। সেই ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গার হাত ধরেই যেন আবার মাথাচাড়া দিচ্ছে শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট।

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে শিকার করেছিলেন দুর্দান্ত এক হ্যাটট্রিক। বিশ্বকাপে বল হাতে দলের হয়ে ছিলেন অন্যতম সেরা পারফরমার। পরের মিশনটা আইপিএল। ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের (আইপিএল) পঞ্চদশ আসরের মেগা নিলামের আগে ফ্র‍্যাঞ্চাইজিগুলোর নজরেই ছিলেন ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা। নিলামঘরে তাঁকে নিয়ে যে রীতিমতো একটা হৈচৈ রব উঠবে সেটাও অনুমেয় ছিল।

টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের পরবর্তী ‘বড় তারকা’ আখ্যা পেয়েছেন বেশ কম সময়ে। আইপিএলের মঞ্চে নিজেকে প্রমাণের পালা। গেল আসরে মাত্র দুই ম্যাচে সুযোগ পেয়েছিলেন। নিজেকে প্রমাণ করতে পারেননি তিনি। পঞ্চদশ আসরেও তিনি দল পাবেন সেটা নিশ্চিতই ছিল। চড়া মূল্যে বিক্রি হতে পারেন সেটাও অনেকেই অনুমান করেছিলেন।

সবার ধারণাই যেন সত্যি হল নিলাম ঘরে। অনেকটা সময় লড়াইয়ের পর ১০.৭৫ কোটি রুপিতে হাসারাঙ্গাকে দলে ভেড়ায় রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালুরু। শ্রীলঙ্কার ইতিহাসে আইপিএলে কোনো ক্রিকেটারই এর আগে এত দাম পায়নি। নিলামের পর থেকে অবশ্য সমালোচনা শুরু হয় এই লঙ্কান লেগ স্পিন অলরাউন্ডারকে নিয়ে। নিন্দুকদের একাংশ বলতে শুরু করলেন – ‘হাসারাঙ্গা এত দাম পাওয়ার মত যোগ্য না।’

সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদের বিপক্ষে গেল ম্যাচেই মেইডেন পাঁচ উইকেট শিকার করেছেন হাসারাঙ্গা। হায়দ্রাবাদের ব্যাটিং শিবির একাই ধসিয়ে দেন এই লেগ স্পিনার। হাসারাঙ্গার স্পিন ভেলকির সামনে হায়দ্রাবাদের অসহায়ত্ব ছিল স্পষ্ট। পাঁচ উইকেট শিকারের মধ্যে দিয়ে এবারের আসরে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি হিসেবে উঠে আসেন হাসারাঙ্গা।

নিন্দুকদের সব সমালোচনা এখন রূপ নিয়েছে প্রশংসার বাণীতে। মাত্র ১৮ রানে ৫ উইকেট শিকারে – ব্যাঙ্গালুরুর হয়ে আইপিএলে দ্বিতীয় সেরা বোলিং ফিগার এখন হাসারাঙ্গার। এক ওভারে মেইডেন সহ দুই উইকেট নেন এই লেগ স্পিন তারকা।

চলতি আসরে ২২ উইকেট নিয়ে সর্বোচ্চ উইকেটশিকারির শীর্ষে অবস্থান করছেন রাজস্থান রয়্যালসের যুজবেন্দ্র চাহাল। মাত্র এক উইকেট কমে ২১ উইকেট নিয়ে চাহালের ঠিক পেছনেই অবস্থান হাসারাঙ্গার।

আগের আসর গুলোতেও দেখা গেছে অনেক ক্রিকেটারই চড়া দামে বিকলেও পারফরম্যান্স ছিল সাদামাটা। এবারের আসরেও এমন কয়েকজনের দেখা মিলেছে। তবে ব্যতিক্রম ছিলেন হাসারাঙ্গা। এই লঙ্কান তারকা শুরু থেকেই দুর্দান্ত পারফরম করছেন।

অনেকের চোখ কপালে তুলে চড়ামূল্যে বিক্রি হয়েছিলেন হাসারাঙ্গা। তবে দামের সাথে পারফরম্যান্সটাও দিচ্ছেন নজরকাঁড়া। সমালোচনার সুযোগ খুব একটা দেননি। প্রায় প্রতি ম্যাচেই বল হাতে দ্যুতি ছড়াচ্ছেন। ডট বল দিচ্ছেন, উইকেট নিচ্ছেন; স্পিন ম্যাজিকে প্রতিপক্ষকে চাপে ফেলছেন। নিজের পারফরম্যান্স দিয়েই সমালোচকদের মুখে কুলুপ এঁটে দিয়েছেন। হাসারাঙ্গা এখন পার্পেল ক্যাপের দৌড়ে বেশ এগিয়ে। বাকি ম্যাচগুলো ধারাবাহিকতা ধরে রাখলে হয়ত টুর্নামেন্ট শেষে মাথায় উঠতে পারে সেই মহামূল্যবান সর্বোচ্চ উইকেটশিকারির ক্যাপটা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link