চেন্নাইয়ের সুপার কিং

আইপিএল মানেই তারুণ ক্রিকেটার উত্থানের সবচেয়ে বড় মঞ্চ। প্রতি আসরেই বেশ কিছু তরুণ প্রতিভাবানদের দেখা মিলে এই মঞ্চে; ব্যতিক্রম নয় এবারের আসরেও। ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের (আইপিএল) পঞ্চদশ আসরে এখন পর্যন্ত দেখে মিলেছে বেশ কিছু তরুণ তারকার। আয়ুশ বাদোনি, মহসিন খান, উমরান মালিক, তিলক ভার্মারা নজরকাড়া পারফরম্যান্স দেখিয়েছেন। তবে তরুণ এই পারফরমারদের মধ্যে সবাইকে ছাড়িয়ে সেরা অবস্থানে আছেন চেন্নাই সুপার কিংসের পেসার মুকেশ চৌধুরী।

একেবারেই অপরিচিত এক নাম; প্রথমবার খেলছেন আইপিএলের মঞ্চে। বাঁ-হাতি এই পেসারের বলে খুব বেশি গতি নেই। কিন্তু নিঁখুত লাইন-লেন্থ আর দুর্দান্ত ইনস্যুইংয়ে ১৩৫-১৬ কিলোমিটার/ঘন্টার গতিতে এবারের আসরে বিশেষভাবে নজর কেড়েছেন এই পেসার।

প্রতি ম্যাচেই দুর্দান্ত বোলিং করে উইকেট পাচ্ছেন। টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ উইকেটশিকারির তালিকায় সেরাদের সাথে আছে তিনিও। এই বাঁ-হাতি পেসার স্যুইং ভেলকি এবারের আসরে অনেক বড় বড় তারকা ব্যাটাররাও অসহায় আত্মসমর্পণ করেছেন।

তবে রানও দিয়েছেন বেশ। প্রায় ম্যাচেই ছিলেন বেশ খরুচে। আবার কতক ম্যাচে বেধরক মারও খেয়েছেন তবে দলের প্রয়োজনে অনেকটা নিয়মিতই উইকেট এনে দিয়েছেন তিনি। ইনিংসের শুরুতে প্রতিপক্ষের ওপেনিং জুটি ভেঙেছেন বেশ কয়েকবার।

এইতো, গেল আসরেই সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদের নেট বোলার হিসেবে ছিলেন। নেটে দুর্দান্ত বোলিংয়ে উঠে আসেন আইপিএলের মূল মঞ্চে। পঞ্চদশ আসরের মেগা নিলাম থেকে মুকেশকে দলে ভেড়ায় চেন্নাই সুপার কিংস।

রাজস্থানের বিলবাড়া জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। আশির দশকে মুকেশের বাবা গোপাল ও মা প্রেমবাই রাজস্থান থেকে দারহোতে পাড়ি দেন। ইয়াভাতমল থেকে এক ঘন্টা দূরে ছোট্ট এক শহর দারহো। জয়পুরে দাদা-দাদীর কাছে থেকে স্কুল জীবন পার করেছেন। মুকেশের বাবা গোপাল ইট ভাঙতেন।

বাবা-মার ইচ্ছে ছিল দুই ছেলে পড়াশোনা করে বড় কিছু করবে। জয়পুরের এক হোস্টেলে থেকে পড়াশোনা করেন মুকেশ ও তার ভাই। ক্লাস এইটে থাকা অবস্থায় বড় ভাই সমেত পুনেতে শিফট করা হয় মুকেশকে। সেখানেও হোস্টেল জীবন; নতুন হোস্টেলে থেকে বাকি পড়াশোনার শুরু। সেখানেই ক্রিকেটের প্রতি ঝোঁক হয় মুকেশের। কলেজ ক্রিকেটে খেলা শুরু করেন। কলেজ মাঠে মুকেশের বোলিং দেখার পর লোকাল একজন তাঁকে নিয়ে আসেন ২২ ইয়ার্ডস ক্রিকেট অ্যাকাডেমিতে।

ববধনে তখন ২২ ইয়ার্ডস ক্রিকেট অ্যাকাডেমির প্রধান কোচ ছিলেন রাজেশ মাহুকর। ২০১৫ সালের দিকে অ্যাকাডেমিতে যোগ দেন মুকেশ। শুরুতে বলে খুব বেশি গতি ছিল না, কিন্তু মুকেশের প্রতিভা ছিল বেশ। কোচের সহচার্যে থেকে ফিটনেস আর গতির বেশ উন্নতি হয় মুকেশের। অনুশীলন কখনোই মিস করতেন না, কঠোর পরিশ্রম করতে কখনোই পেছপা হননি; কোচদের কাছে শেখার জন্য মুখিয়ে থাকতেন এই পেসার।

২২ ইয়ার্ডস অ্যাকাডেমিতে আসার বছর দুয়েকের মাঝেই অভিষেক হয় প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে। ২০১৭ সালে মহারাষ্ট্রের হয়ে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে অভিষেক হয় এই পেসারের। সেখানে কয়েক বছর খেলার পর আইপিএলে নেট বোলার হিসেবে জায়গা পান। আর ভাগ্য সহায় হওয়ায় নজর কাড়েন দ্রুতই। উঠে আসেন আইপিএলের মূল মঞ্চে।

পঞ্চদশ আসরে প্রথমবার খেলতে নেমে এখন পর্যন্ত ১২ ম্যাচে ১৬ উইকেট নিয়েছেন এই তরুণ সম্ভাবনাময় পেসার; যদিও ইকনমি রেটটা ৯ এর খানিকটা বেশি। হায়দ্রাবাদের বিপক্ষে ৪৬ রানে শিকার করেছেন ক্যারিয়ার সেরা ৪ উইকেট। এরপর দিল্লীর বিপক্ষে ২২ রানে ২ উইকেট শিকারের পর মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের বিপক্ষে মাত্র ২৩ রানে নেন ৩ উইকেট।

দুর্দান্ত বোলিংয়ে আইপিএলের মঞ্চে নিজের সামর্থ্যের সেরাটা দিচ্ছেন এই বাঁ-হাতি পেসার। এবারের আসরে ইমার্জিং প্লেয়ার হবার দৌড়ে হায়দ্রাবাদের উমরান মালিকের সাথে বেশ এগিয়ে আছেন মুকেশ চৌধুরী।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link