স্লট, লেন্থ, স্লোয়ার – প্রসিদ্ধ কৃষ্ণার পর পর তিন ভিন্ন ডেলিভারিতে তিন ছক্কা; ডেভিড মিলার ঝড়ে ফাইনালে গুজরাট টাইটান্স।
২০১৬ সালে ইডেন গার্ডেন্সে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালে এক রোমাঞ্চকর লড়াইয়ের সাক্ষী হয়েছিল ক্রিকেট দুনিয়া। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে জয়ের জন্য শেষ ওভারে ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রয়োজন ছিল ১৯ রানের। বেন স্টোকসের প্রথম চার বলে চার ছক্কা হাঁকিয়ে অবিশ্বাস্য এক জয় এনে দেন কার্লোস ব্রাথওয়েট। প্রায় ছয় বছর বাদে প্রায় একই দৃশ্য আবার যেন দেখা মিলল ইডেনে।
ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের (আইপিএল) পঞ্চদশ আসরের প্রথম কোয়ালিফায়ারে রাজস্থান রয়্যালসের বিপক্ষে জয়ের জন্য শেষ ওভারে গুজরাটের প্রয়োজন ছিল ১৬ রানের। প্রসিদ কৃষ্ণার ওভারে প্রথম তিন বলে তিন ছক্কা হাঁকিয়ে জয়টা নিশ্চিত করে ফেলেন ডেভিড মিলার।
পঞ্চদশ আসরের মেগা নিলামের প্রথম দিনে ছিলেন অবিক্রীত। ১ কোটি টাকা ভিত্তিমূল্য থাকলেও কেউই আগ্রহ দেখায়নি ডেভিড মিলারের উপর। নিলামের দ্বিতীয় দিনের শেষভাগে অবিক্রীত থাকা কিছু তারকা ক্রিকেটারের নাম পুনরায়ন তোলা হল। সেই তালিকায় ছিলেন মিলারও। এবার অবশ্য ডাক উঠলো। রাজস্থান রয়্যালসের সাথে অনেকটা প্রতিযোগিতা করেই মিলারকে দলে ভেড়ায় নব্য দল গুজরাট টাইটান্স। প্রথম দিনে দল না পাওয়া মিলার নিলামের একদম শেষ অংশে বিক্রি হলেন ৩ কোটি রুপিতে।
এরপর বাকি পথটা ছিল মিলারের জন্য সুখের চাঁদরে মোড়ানো। আইপিএল ইতিহাসে নিজের সেরা ফর্মে ছিলেন তিনি। ১৫ ম্যাচে ৬৪ গড়ে ১৪১ স্ট্রাইক রেটে রান করেছেন ৪৪৯; এবারের আসরে এখন পর্যন্ত ষষ্ঠ সর্বোচ্চ। গুজরাটের হয়ে হার্দিক পান্ডিয়ার পর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক তিনি। গড়ের দিক থেকে কমপক্ষে একশো রান করা ক্রিকেটারদের মধ্যে সেরা অবস্থানে আছেন এই প্রোটিয়া তারকা।
লোয়ার অর্ডারে মিলারের বিধ্বংসী রূপটা সবারই জানা। দক্ষিণ আফ্রিকার জার্সি গায়ে কিংবা ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে (আইপিএল) – ফিনিশিংয়ে মিলার থাকা মানেই ব্যাট হাতে ঝড়ো ইনিংস। ক্লিন হিটে বলকে সীমানা ছাড়া করাটা রীতিমতো মিলারের এক অভ্যাস। তবুও আইপিএলে গেল কয়েক আসর ধরেই তিনি ছিলেন অনেকটাই উপেক্ষিত। গেল দুই আসরে খেলেছিলেন মোটে দশ ম্যাচ; এবারের আসরে পনেরো। উপেক্ষার কাল ছায়া সরিয়ে এবারের আসরে বিধ্বংসী রূপে দেখা গেছে এই প্রোটিয়া তারকাকে।
প্রথম ১৪ বল থেকে করেছিলেন মোটে দশ রান। সেখান থেকে খেললেন। ৩৮ বলে ৬৮ রানের তাণ্ডব এক ইনিংস। ৩ চারের সাথে হাঁকালেন ৫ ছক্কা। রাজস্থানের দেওয়া ১৮৯ রানের লক্ষ্যমাত্রা তাড়া করতে নেমে শেষ ওভারে গুজরাটের প্রয়োজন ছিল ১৬ রানের। প্রসিদ কৃষ্ণার ওভারে প্রথম তিন বলে তিন ছক্কা হাঁকিয়ে জয় নিশ্চিত করে ফেলেন ডেভিড মিলার।
দল হিসেবে প্রথমবার আইপিএলের আসরে। আর প্রথম আসরে খেলতে এসে প্রথম দল হিসেবে ফাইনালে পা দিল গুজরাট টাইটান্স। আর নতুন জার্সি গায়ে ব্যাট হাতে পুরো আসর জুড়েই দুর্দান্ত ফর্মে ছিলেন প্রোটিয়া তারকা ডেভিড মিলার। নামের আগে কিলার তকমাটা আছে লম্বা সময় ধরে।
খুনে মেজাজের ব্যাটিংয়ে প্রতিপক্ষের উপর দাপট দেখিয়েছেন বহুবার। এবার অপেক্ষা শিরোপা জয়ের। উড়ন্ত ফর্মে থাকা মিলার কি এবার শিরোপা ছুঁতে পারবে? নাকি দক্ষিণ আফ্রিকার মত চোকার্স তকমায় আইপিএলেও শিরোপা জয়ের স্বাদ মিলবে না এই তারকার। অপেক্ষা মাত্র এক ম্যাচের।