অবিশ্রাম গতির এক মেইল ট্রেন

২০০৮ উদ্বোধনী আসরে অস্ট্রেলিয়ান কিংবদন্তি তারকা শেন ওয়ার্নের হাত ধরে আইপিএলের শিরোপা জয় করে রাজস্থান রয়্যালস। এরপর কেটে গেছে আরও তেরো আসর। আইপিএলের মঞ্চে আর ফাইনালে উঠতে পারেনি রাজস্থান। তবে তেরো বসন্ত পেরিয়ে পঞ্চদশ আসরে দ্বিতীয়বারের মত ফাইনালে উঠেছে রাজস্থান। আর এর পেছনে অন্যতম সেরা কারিগর ওপেনার জশ বাটলার।

টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে বর্তমানে বিশ্বের সেরা তারকা কে? এই প্রশ্নের জবাবে কোনো দ্বিধা ছাড়াই আপনি বলতে বাধ্য হবেন জশ বাটলারের নাম। ব্যাট হাতে তিনি ছুটছেন অদম্য গতিতে, রানের ফোয়ারা তুলছেন; প্রতিপক্ষকে ধরাশায়ী করছেন নিজের বিধ্বংসী ব্যাটিংয়ে।

মেইল ট্রেনের মত ছুটছেন অবিশ্রাম গতিতে। থামার যেন সম্ভাবনাই নেই। ট্রেনের পিছু দৌড়ে মি আর ট্রেন ধরা যায়? ব্যাট হাতে এই ছুঁটে চলতে চলতে বাটলার পেছনে ফেলছেন বহু তারকাকে। নিজেকেও যেন ছাড়িয়ে যাচ্ছেন তিনি। পঞ্চদশ আসরের ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে (আইপিএল) নিজেকে নিয়ে গেছেন ধরা ছোঁয়ার বাইরে। প্রতিপক্ষের বোলার উপর তাণ্ডব চালানোটা এখন তাঁর রোজকার রুটিন।

কভার ড্রাইভ, লং অনের উপর দিয়ে বিশাল ছক্কা, পুল শটে বাউন্ডারি পার কিংবা স্কুপে কিপারকে বোনা বানিয়ে চার বা ছক্কা – বাটলারের ব্যাটে এই শট গুলো যেন স্থায়ীভাবেই লেপ্টে আছে। তিনি যেন শুধু ট্রিগার টিপে একেকবার একেক শটে বাউন্ডারি আদায় করছেন।

আইপিএল ইতিহাসে এক মৌসুমে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহ বিরাট কোহলি; এক মৌসুমে সর্বোচ্চ সেঞ্চুরির রেকর্ডটাও তাঁর-ই ছিল। হ্যাঁ, ছিল তবে সেই রেকর্ডে এখন ভাগ বসিয়েছেন বাটলার। পঞ্চদশ আসরের দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালুরুর বিপক্ষে তাণ্ডবময় এক সেঞ্চুরির পথে আসরে ব্যক্তিগত চতুর্থ সেঞ্চুরি তুলে নিয়েছেন বাটলার। এক মৌসুমে সর্বোচ্চ সেঞ্চুরির রেকর্ডে বিরাট ও বাটলারের অবস্থান এখন যৌথভাবে শীর্ষে।

২০১৬ সালটা স্বপ্নের মতই কেটেছিল বিরাটের; ছিলেন উড়ন্ত ফর্মে। ব্যাট হাতে করেছিলেন ৯৭৩ রান। এক মৌসুমে সর্বোচ্চ সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড নিজের নামে করেছিলেন। বিরাট ছাড়া কেউই পেরোতে পারেনি নয়শো রানের কোটা। এক মৌসুমে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহের তালিকায় বাটলারের অবস্থান তিনে। ৮২৪ রান নিয়ে এবারের আসরে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক রাজস্থান রয়্যালসের এই ওপেনার।

চার সেঞ্চুরি আর চার ফিফটিতে পুরো আসর জুড়েই দাপট দেখান বাটলার। হাতছানি ছিল বিরাটের সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড ভেঙে প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে আইপিএলে হাজার রানের মাইলফলক স্পর্শ করার। তবে শেষদিকে টানা কয়েক ইনিংসে ব্যর্থ হওয়ায় খানিকটা পিছিয়ে পড়েন তিনি।

প্রথম কোয়ালিফায়ারে গুজরাট টাইটান্সের বিপক্ষে খেলেছিলেন ৫৬ বলে ৮৯ রানের ঝড়ো ইনিংস। মাত্র ১১ রানের জন্য দেখা পাননি সেঞ্চুরির; সেই আক্ষেপটা তো ছিলই। এর চেয়ে বড় আক্ষেপ সেঞ্চুরি করেও দলকে ফাইনালে তুলতে পারেননি। সেই আক্ষেপটা ঘুঁচালেন দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারে। ফাইনালে যাওয়ার লড়াইয়ে ‘ডু অর ডাই’ ম্যাচ। আবার হাসলো বাটলারের ব্যাট; ফাইনালের আগে আহমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামে বয়ে গেল বাটলার ঝড়।

১৫৮ রানের লক্ষ্যমাত্রা তাড়া করতে নেমে খেললেন ৬০ বলে ৬ ছক্কা আর ১০ চারে ১০৬ রানের হার না মানা বিধ্বংসী এক ইনিংস। এবার আর আক্ষেপ কিংবা হতাশা নেই। দেখা পেয়েছেন সেঞ্চুরির, ছক্কা হাঁকিয়ে দলকে জিতিয়ে তবেই মাঠ ছেড়েছেন; রাজস্থানকে নিয়ে গেছেন ফাইনালের মঞ্চে।

ক্রিকেটে উইকেটরক্ষক ব্যাটার হিসেবে খেললেও ক্রীড়াঙ্গনে তিনি অবশ্য অলরাউন্ডার। ছোটবেলা থেকেই রাগবি, হকি, টেনিস আর ফুটবলে ছিলেন সমান পারদর্শী। যার জন্য হাতে কব্জির জোরটাও একটু বেশি। একটু বেশি না বলে অনেক বেশি বললেও ভুল হবে না। যার কারণে বলকে সহজেই বাউন্ডারি ছাড়া করতে পারেন এই ইংলিশ তারকা।

মিডল অর্ডার থেকে উঠে এসেছিলেন ওপেনিংয়ে। জাতীয় দলের জার্সি গায়ে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে নিজেকে নিয়ে গেছেন সময়ের সেরাদের কাতারে। আইপিএলের মঞ্চেও টেনে আনলেন সেই বিধ্বংসী ফর্ম। দলকে কাঁধে চড়িয়ে পৌঁছে দিলেন ফাইনালের মঞ্চে। শেষটা ভাল করতে পারবেন তো? ফাইনালে কি আবার দেখা মিলবে বাটলার শো? – শিরোপা জয় করতে এবারের আসরে শেষবারের মত বাটলারের ব্যাটে তাকিয়ে রাজস্থান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link