চিরতরুণ অদম্য ইব্রাহিমোভিচ

সব যোদ্ধারা হয়ত বারুদের সামনে বুক পেতে দেন না। সব যোদ্ধা হয়ত দেশের হয়ে ইউনিফর্ম পরে দায়িত্ব পালন করে না। কিছু যোদ্ধা তাঁদের প্যাশনের জন্যে শেষবিন্দু পর্যন্ত লড়ে যান। কেউ কেউ নিজের সর্বস্ব বিলিয়ে দেন। তেমনই একজন জ্লাতান ইব্রাহিমোভিচ।

সব যোদ্ধারা হয়ত বারুদের সামনে বুক পেতে দেন না। সব যোদ্ধা হয়ত দেশের হয়ে ইউনিফর্ম পরে দায়িত্ব পালন করে না। কিছু যোদ্ধা তাঁদের প্যাশনের জন্যে শেষবিন্দু পর্যন্ত লড়ে যান। কেউ কেউ নিজের সর্বস্ব বিলিয়ে দেন। তেমনই একজন জ্লাতান ইব্রাহিমোভিচ।

ফুটবলের ‘ব্যাড বয়’ কিংবা ‘স্যাভেজ’ এই সব তকমা যার সাথে যুক্ত তিনিই জ্লাতান ইব্রাহিমোভিচ। ৪০ বছর বয়সী মধ্যবয়সী জ্লাতানের যেখানে এখন ফুটবলকে বিদায় বলে অবসর জীবন পার করার কথা কিংবা কোচিং লাইসেন্স নিয়ে ফুটবলের প্রশিক্ষক হিসেবে কাজ করার কথা সেই ইব্রাহিমোভিচ দিব্বি খেলে যাচ্ছেন ফুটবল। তাও আবার ইউরোপের শীর্ষ লিগে।

তিনি যে শুধু ফুটবল খেলছেন তা নয়, তিনি শিরোপাও জিতছেন। এই তো ক’দিন আগে দীর্ঘ দিনের খরা কাটিয়ে ইতালিয়ান সিরি-আয়ের শিরোপা জিতল ঐতিহ্যবাহী ক্লাব এসি মিলান। সে দলেই তো ছিলেন ইব্রাহোমিভিচ। চল্লিশ বছরের বুড়ো। ফুটবলের প্রেক্ষাপটে তিনি বুড়ো। তবে এই ফুটবলই তাঁকে করে রেখেছেন চিরতরুণ। তিনি যেন আজও বিশ বছর বয়সে আঠারো বছর না পেরোনো আয়াক্সের সেই কিশোর ইব্রাহিমোভিচ।

কেন বলছি এই জ্লাতান ইব্রাহিমোভিচের কথা, তাই ভাবছেন? ভাববেন না কেন বলুন তো। ইউরোপ ফুটবলের ভক্ত কেউ কি ইব্রাহিমোভিচকে মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলতে পারবে? সম্ভবই না। এবার যে কাণ্ড করে বসেছেন তিনি, তারপর নিশ্চয়ই আরও ভোলা সম্ভব। তিনি বিগত ছয়টা মাস ধরে খেলেছেন ‘এসিএল’ ছাড়া। ফুটবল খেলোয়াড়দের বড্ড জটিল এক ইনজুরি বটে।

‘অ্যান্টেরিয়র ক্রুসিয়েট লিগামেন্ট’ এই লিগ্যামেন্ট আমাদের হাঁটুর ভারসাম্যতা রক্ষা করে থাকে। আর এই লিগামেন্ট ছাড়াই ইব্রাহিমোভিচ খেলে গেছেন বিগত ছয় মাস ধরে। চিন্তা করুণ। আমি, আপনি আমরা যারা সাধারণ মানুষ তাঁরা কি এই কাজটা করতে পারতাম? আমরা হয়ত ঘরের এককোণে চুপটি করে বসে থাকতাম। অথচ তিনি মাঠে নেমেছেন, দলকে শিরোপা জিততে সহায়তা করেছেন।

প্রচণ্ড ব্যথায় কাতর হওয়া তো দূরে থাক, তিনি যেন নতুন এক প্রেরণা নিয়ে প্রতিদিন একটু একটু করে নিজেকে উঠে দাঁড়িয়ে লড়াই করতে বাধ্য করেছেন। বদ্ধ উন্মাদ! ফুটবলই কেবল এসব উন্মাদদের প্রশ্রয় দেয়। ক্রমশ আরও উন্মাদনা বাড়ে। সেই উন্মাদনায় ছড়িয়ে পড়ে গোটা বিশ্বে। এই যে ইব্রাহিমোভিচদের এমন পাগলাটে কর্মকাণ্ডওই তো আর বেশি ফুটবলকে ভালবাসতে বাধ্য করে।

আমাদের দেশের ক্রিকেটের মহারথী মাশরাফি বিন মর্তুজারও ঠিক একই ধরণের সমস্যা ছিল। মাশরাফি যেমন প্রায় প্রতিটি ম্যাচ শেষে ইঞ্জেকশন দিয়ে হাটুতে জমা পানি বের করতেন, ঠিক তেমনি ছয় মাস ধরে প্রায় প্রতি সপ্তাহে করতে হয়েছে ইব্রাহিমোভিচকে। ফুটবলের সবটাই তো ওই পা দিয়ে। ঠিক কতটা পরিমাণ আবেগ দিয়ে ভালবাসলে, কতটা পরিমাণ নিবেদিত প্রাণ হলে এমন সময়ে খেলা যায়!

স্যাভেজ জ্লাতান ইব্রাহিমোভিচ ফুটবলকে যেন নিজের থেকেও বেশি ভালবাসেন। তাঁর এমন উদ্ভট কাণ্ডের পর তাঁর উপর ভরসা না করে উপায় আছে? নিশ্চয়ই নেই। ছয় মাস ধরে পায়ের এত গুরুতর এক ইনজুরি নিয়েও দলের প্রয়োজনে তিনি ২৩ খানা লিগ ম্যাচ খেলেছেন এবারের সিরি-আতে। শুধু তাই নয় আট খানা গোলও করেছেন তিনি। সেই সাথে তিনটি গোলও করিয়েছেন।

মানুষটা জ্লাতান ইব্রাহিমোভিচ বলেই হয়ত এমন পাগলাটে হওয়া সম্ভব। তাইতো খোদ সৃষ্টিকর্তাও তাঁকে লম্বা ফুটবল থেকে দূরে রাখতে চাননা। হাঁটুর সে ইনজুরি তিনি ক্রমশ কাটিয়ে উঠছেন। সাম্প্রতিক সময়েই তিনি এসিএল অস্ত্রাপচার করিয়েছেন। হয়ত আট মাসের মত তাঁকে থাকতে হবে মাঠের বাইরে। তবে সেখান থেকে ফিরে ছয় ফুট চার ইঞ্চির এই সিংহ আবার গর্জন করবে ফুটবল মাঠে। নিশ্চয়ই করবেন, মানুষটা তো জ্লাতান ইব্রাহিমোভিচ।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...