গত কয়েক বছরে সাদা পোশাকের ক্রিকেটে সাকিবের মাঠে নামাটা যেন বেশ জটিল হয়ে উঠেছিল। এমনকি এবার সাকিবের হাতে টেস্ট অধিনায়কত্ব তুলে দেয়ার আগেও সবচেয়ে বড় চিন্তার জায়গাটা ছিল তাঁর প্রাপ্যতা। ফলে সাকিবের হাতে অধিনায়কত্বের দায়িত্ব তুলে দেয়াটা এদিক থেকে দেখলে ভালোই মনে হয়। কিন্তু আসলেই কী তাই?
সাকিব আল হাসান বাংলাদেশের হয়ে গত ছয় বছরে বাংলাদেশের হয়ে টেস্ট ম্যাচ খেলেছেন মাত্র ২০ টি। আর এই সময়ে বাংলাদেশ ম্যাচ খেলেছে ৩৯ টি। ফলে প্রায় অর্ধেক সংখ্যক ম্যাচে বিশ্বসেরা এই অলরাউন্ডারকে দলে পায়নি বাংলাদেশ। সাকিবকে এই না পাওয়ার পিছনে অবশ্য নির্দিষ্ট কোন কারণ ছিল না।
একেক সিরিজে ভিন্ন ভিন্ন কারনে সাকিবকে টেস্ট দলে পাওয়া যায়নি। তিনি কখনো ম্যাচ মিস করেছেন আইপিএলের জন্য। তবে গত দুই-তিন বছরে বড় বাধা হয়ে দাড়িয়েছিল তাঁর পরিবার। সাকিবের পরিবার এখন বসবাস করে আমেরিকায়। ফলে খেলার ফাকে প্রায়ই তিনি চলে যান আমেরিকাতে। এটাও সাকিবকে টেস্টে না পাওয়ার বড় কারণ।
এছাড়া সাকিব এখন তাঁর ক্যারিয়ারের প্রায় শেষ ধাপে। ফলে এই সময়ে এসে অনেক ক্রিকেটারই তিন ফরম্যাটে খেলতে চাননা। এমনকি সাকিব নিজেও এক ফরম্যাট থেকে নিজেকে সরিয়ে নেয়ার আভাষ দিয়েছিলেন। ফলে কিছুদিন আগেও ধরে নেয়া হচ্ছিল সাকিবকে আর খুব বেশিদিন লাল বল হাতে দেখা যাবেনা।
তবে সাকিবের মত একজন পারফর্মারকে কোনভাবেই হাত ছাড়া করতে রাজি ছিল না বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড। সেজন্যই এবছর দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজ খেলতে যাওয়ার আগে সাকিবের সাথে বৈঠকে বসেছিলেন বোর্ড সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন। সেই বৈঠকের পর অবশ্য সাকিব তিন ফরম্যাটেই খেলার আশ্বাস দিয়েছিলেন।
যদিও এতে ঠিক সাকিবকে টেস্টে পাওয়ার ব্যাপারে আস্থা পাওয়া যাচ্ছিল না। এরমধ্যে মুমিনুল হক টেস্ট অধিনায়কত্ব ছেড়ে দেয়ার পর বিসিবির কাছে সাকিবকে সবচেয়ে যোগ্য লোক মনে হয়েছে। জানা যায় এই টেস্ট অধিনায়ক হবার পিছনে সাকিবেরও সম্মতি ছিল। অথচ এই দফায় অধিনায়ক হবার সপ্তাহখানেক আগেও সাকিব সংবাদ সম্মেলনে এসে জানিয়েছিলেন এই মুহূর্তে টেস্টে মুমিনুলের চেয়ে ভালো অপশন বাংলাদেশের হাতে নেই। তাই মুমিনুলের উপরই ভরসা রাখা উচিৎ।
এর কয়েকদিন পরেই সাকিবকে বাংলাদেশের টেস্ট অধিনায়ক করা হয়। যদিও এই সমইয়ে সবচেয়ে বড় চিন্তা ছিল ওই একটিই। সাকিবকে সব ম্যাচে পাওয়া যাবে তো? তবে অনেকে আবার বোর্ডের এই সিদ্ধান্তকে স্মার্ট চালই ভাবছেন। কেননা অধিনায়কের দায়িত্ব নিলে তো সাকিবকে সব ম্যাচে খেলতেই হবে।
কিন্তু বাস্তবতা আসলে এতটা সহজ হবে বলে মনে হচ্ছেনা। সাকিব ইতোমধ্যেই জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজে তাঁর না খেলতে চাওয়ার কথা বোর্ডকে জানিয়েছেন। ফলে সেই সিরিজে খুব সম্ভবত লিটনকেই নেতৃত্ব দিতে হবে।
এছাড়া এবার অধিনায়ক হবার পর সাকিবের প্রথম অ্যাসাইমেন্ট ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফর। কিন্তু এবারো দলের সাথে দেশ ছাড়তে পারেননি তিনি। ছুটি নিয়ে তিনি চলে গিয়েছিলেন আমেরিকায় তাঁর পরিবারের কাছে।
ছুটি কাটিয়ে ১০ জুন তাঁর দলের সাথে যোগ দেয়ার কথা ছিল। আর ১১ তারিখ ওয়েস্ট ইন্ডিজ প্রেসিডেন্ট একাদশের বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচে তাঁর মাঠে নামার কথা ছিল। কিন্তু জানা যায় গতকাল তিনি দলের সাথে যোগ দিতে পারেননি। ফলে টেস্ট সিরিজের আগে একমাত্র প্রস্তুতি ম্যাচও তাঁর খেলা হচ্ছেনা।
সাকিবের মাপের ক্রিকেটারের হয়তো প্রস্তুতি ম্যাচ খেলাটা খুব বেশি গুরুত্বপূর্ণ না। তবে অধিনায়ক হিসেবে সাকিবের এই ম্যাচটা খেলা বাংলাদেশ দলের জন্য জরুরি ছিল। এই ম্যাচে মাঠে নেমে তিনি হয়তো অধিনায়ক হিসেবে তাঁর চিন্তাটা দলে বাকি ক্রিকেটারদের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে পারতেন। টেস্ট ক্রিকেট নিয়ে তাঁর পরিকল্পনাটা স্পষ্ট করতে পারতেন। কিন্তু তা আর হলো কই।
গত কয়েকবছরে টেস্টে সাকিবের খেলা না খেলা নিয়ে অনেক জল ঘোলা হয়েছে। তাঁর জায়গায় নতুন কোন ক্রিকেটারকেও নিয়মিত খেলানো সম্ভব হয়নি। ফলে টেস্টে সাকিবকে এমন পাওয়া না পাওয়া বাংলাদেশকে বেশ ভুগিয়েছে। এখন অধিনায়ক হবার পরেপো যদি চিত্রটা একই থাকে তাহলে সেই ক্ষতি বাংলাদেশ পুষিয়ে উঠতে পারবে তো?
এই ব্যাপারগুলো বোর্ডের আগে থেকেই জানা ছিল। সেজন্যই সংবাদ সম্মেলনে নাজমুল হাসান পাপনকে সাকিবকে অধিনায়ক করার ব্যাপারে প্রশ্নও করা হয়েছিল। তিনি জানিয়েছিলেন এই মুহূর্তে সাকিবই তাঁদের ‘বেস্ট অপশন’। সাকিব ‘বেস্ট অপশন’ হয়তো কিন্তু ঠিক অপশন কিনা সেটা সময়ই বলে দিবে।