একজন লোক সাড়ে পনেরো বছর ব্যবধানে দু’টি ম্যাচে ম্যাচ সেরার পুরস্কার পেলেন, টি-টোয়েন্টির মত ‘ছোট হয়ে আসা’ খেলায়। গত এক জুন যিনি পেরিয়ে গেছেন ৩৭ বছরের চৌকাঠ।
ভারতের প্রথম টি-টোয়েন্টি, জোহানেসবার্গে। ২০০৬ সালের ১ ডিসেম্বরে। ২৮ বলে অপরাজিত ৩১ রান। কাট টু ২০২২ সালের ১৭ জুন। ২৭ বলে ৫৫ রান। দু’টোতেই তিনি ম্যাচ সেরা।
কিন্তু এর বাইরে না বলা থেকে যায় অনেক কিছুই। তার মাঠের নাছোড়বান্দা লড়াই, মোটামুটি সাফল্য আর অতলস্পর্শী ব্যর্থতা। এবং জীবনের লড়াই, ভেঙে যাওয়া আর উঠে দাঁড়ানো। পরেরটা সবটাই সবার জানা। তাই প্রথমটাতে অল্প ঢুকছি আজ।
মাঠের লড়াই, মোটামুটি সাফল্য আর অতলস্পর্শী ব্যর্থতা। এর সবটাই তার ক্রিকেট স্ট্যাটসে ধরা আছে। ধারাবাহিক না থাকার ধারাবাহিকতায় তিনি ঢেকে গেছেন বারবার। ২৬ টি টেস্ট খেলে ৪২ ইনিংসে ২৫.০০ গড়ে একটি শতরান আর সাতটি অর্ধশতরানের জোরে ১০২৫ রান আর ৫৭ টি ক্যাচ ও ছয়টি স্ট্যাম্পিং আছে তাঁর।
আর ৯৪ টি ওডিআইতে ৭৯ ইনিংসে ৩০.২১ গড়ে (স্ট্রাইক রেট ৭৩.২৪) নয়টি অর্ধশতরানসহ ১৭৫২ রান করা ছাড়াও ৬৪ টি ক্যাচ ও সাতটি স্ট্যাম্পিং আছে তার কিটিতে। প্রায় একই রকম তার টি-টোয়েন্টি ম্যাচের পারফরমেন্সও।
প্রসঙ্গত, টি-টোয়েন্টি ম্যাচের প্রথম অর্ধশতরান তিনি পেলেন সেদিনই, সাড়ে পনেরো বছরের টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে। এটাও কৌতূহলের উদ্রেককারী যে সাড়ে পনেরো বছরে তিনি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছেন মাত্র ৩৬ টি। সাড়ে পনেরো বছরের টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে স্থায়ীত্বের দিক থেকে তিনি বিশ্বে তৃতীয়, আগে শুধু দুই ক্যারিবিয়ান – ক্রিস গেইল ও ডোয়াইন ব্রাভো।
এবার মনে রাখুন যে এমন একটা সময়কালে তিনি ভারতীয় ক্রিকেট সার্কিটে উইকেটরক্ষক হিসেবে ছিলেন ও আছেন যার অধিকাংশ সময়েই তিনি ঢাকা ছিলেন মহেন্দ্র সিং ধোনির লম্বা ছায়ায়। এটা মনে রাখলে দেখবেন তার এই স্ট্যাটসটাই অনেক বড় লাগছে।
দু’টি বিশ্বকাপে ভারতীয় দলে ছিলেন, ২০০৭ আর ২০১৯, দলে ফিরেছিলেন ১২ বছর পরে। ২০১৯ সালের সেমিফাইনালে কিউয়িদের কাছে পরাজিত প্রথম একাদশেও ছিলেন। ২০০৭ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জয়ী ভারতীয় ১৫ জনের দলেও সদস্য ছিলেন তিনি।
১৪ বছর, ১৫ বছর আর ১৫ বছরের বেশি হলো তার টেস্ট (২০১৮ সালে শেষ খেলেছেন), ওডিআই (২০১৯ সালে শেষ খেলেছেন) আর টি-টোয়েন্টি (২০১৯ সালের পরে আবার খেলছেন বর্তমান দক্ষিণ আফ্রিকা ৫ ম্যাচের সিরিজে) খেলার স্প্যান। ৮৭ ম্যাচের পরে একবার তিনি টেস্ট দলে ফিরেছেন।
টি-টোয়েন্টিতে এক ইনিংসে তাঁর স্ট্রাইক রেট ছিল ৩৬২.৫০ (১৮ মার্চ ২০১৮। শ্রীলঙ্কাতে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ৮ বলে ২৯, দুটি চার আর তিনটি ছক্কা সহ, নিদাহাস ট্রফির ফাইনাল ম্যাচে)। আবার ৮ ডিসেম্বর ২০০৭ সালে, পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ব্যাঙ্গালুরু টেস্টে একটি টেস্ট ইনিংসে ৩৫ টি বাই রান দেবার দু:সহ রেকর্ডও গড়া হয়েছিল তার হাতেই।
দলে আসা, বাদ যাওয়া, আবার দলে ফিরে আসা, আবার বাদ যাওয়া, যেন যে কোন সাধারণ মানুষের জীবনের গল্পটাই তার ক্রিকেট ক্যারিয়ার জুড়ে। আসলে ১৫ বছর ধরে ওই টিঁকে থাকার নাছোড়বান্দা লড়াইটাই তিনি। তার এবারে রাজকোটে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে ইনিংসটাও ওই নাছোড়বান্দা লড়াইর ছাঁচেই তৈরি হয়েছিল।
হারিয়ে যেতে যেতেও শুধুমাত্র লেগে থাকা আর লড়াইয়ের জোরে ফিনিক্স পাখির মত ফিরে আসাটারই ডাকনাম কৃষ্ণশঙ্কর দীনেশ কার্তিক।