পেল না সে প্রতিভার দামটা

প্যাভিলিয়নে বসেই দিন কাটাচ্ছিলেন। লিগ পর্বের সবগুলো ম্যাচ শেষ। তবুও সুযোগ মেলেনি একটি বারের জন্য। নিজের ভেতর একটা জেদ পুষে রেখেছিলেন গ্যারি গিলমোর। অপেক্ষার প্রহর গুনছিলেন। কি অদ্ভুত! সুযোগ এলো সেমিফাইনালে। প্রথম দানেই বাজিমাত।

গিলমোর জন্মেছিলেন অস্ট্রেলিয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসে। ১৯৫১ সালের ২৬ জুন। ক্রিকেট পাড়ায় তিনি পা রেখেছিলেন অলরাউন্ডার হিসেবে। খুব একটা লম্বা নয় তাঁর ক্যারিয়ার। তবে রোমাঞ্চকর দুই ম্যাচের কারিগর তো তিনি। ১৯৭৫ সালে হওয়া বিশ্বকাপ দলে ছিলেন তিনি। কোন এক কারণে সুযোগ পাননি তিনি লিগ পর্বের ম্যাচে। সুযোগ পেয়ে তিনি গড়ে ফেলেন বিশ্বরেকর্ড।

বিশ্বকাপের মহামঞ্চে প্রথম বারের মত টানা দুই ম্যাচে পাঁচ উইকেট শিকার করেন গিলমোর। তাও আবার সেমিফাইনাল ও ফাইনাল দুই ম্যাচ। সেমিফাইনালে তিনি সুযোগটা পান ইংল্যান্ডের বিপক্ষে। গিলমোরের বোলিং তাণ্ডবে মাত্র ৯৩ রানেই গুটিয়ে যায় ইংল্যান্ড। সেমিফাইনেল প্রথমবার খেলতে নেমেই গিলমোর তুলে নেন ছয়টি উইকেট। বিনিময়ে তিনি খরচ করেন মাত্র ১৪ রান। ‘উইজডেন’ সেই বোলিংকে সর্বকালের সেরা স্পেল হিসেবেও আখ্যায়িত করেছে।

নিজের বোলিং পারফরমেন্সের ধারাবাহিকতা তিনি অব্যাহত রাখেন ফাইনাল ম্যাচেও। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে এবার তাঁর ঝুলিতে উইকেট পাঁচটি। তাতে অবশ্য লাভের লাভটা হয়নি। ব্যাটিং বিপর্যয়ে শিরোপা হাতছাড়া হয়েছিল অজিদের। তবে সে টুর্নামেন্টেই নিজের সম্ভাবনার সবটুকুই যেন নিংড়ে দিয়েছিলেন গিলমোর।

তবে ঘরোয়া ক্রিকেটে তিনি মাত্র বিশ বছর বয়সে পদাপর্ণ করেই নজর কেড়ে নিয়েছিলেন। নিজের অভিষেক ম্যাচেই তিনি প্রথম শ্রেণি ক্রিকেটে নিজের প্রথম শতকের দেখা পান। মাত্র বিশ বছরের তরুণের কাছ থেকে এমন দৃঢ়তা সে সময়ে ছিল ভীষণ বিরল। সময়ের পরিক্রমায় তিনি একসময় সুযোগ পেয়ে যান অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় দলে। টেস্ট ক্রিকেটের অভিষেকটা তিনি নিজের মত করেই উদযাপন করেছিলেন।

যেকোন প্রথমই সম্ভবত গিলমোরের বেশ প্রিয় ছিল। নিজের অভিষেক টেস্ট ম্যাচেই তিনি মুগ্ধ করেছিলেন সবাইকে। নবম ব্যাটার হিসেবে ব্যাট করতে নেমে, তুলে নেন নিজের ক্যারিয়ারের প্রথম অর্ধশতক। এরপর আবার বল হাতে জাদু ছড়িয়েছেন গিলমোর। নিয়েছিলেন চার উইকেট। সমৃদ্ধ একজন ক্রিকেটার হয়েই তিনি পা রেখেছিলেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে।

তাঁর প্রথম আন্তর্জাতিক শতক পাওয়ার পেছনে তো রয়েছে আরও বিস্ময়কর গল্প। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে যে টেস্টে তিনি শতক পেয়েছিলেন, সেই ম্যাচে প্রথম ইনিংসে ব্যাট করতে নামার আগে প্রচুর মদ পান করেছিলেন গিলমোর সাথে ছিলেন ডগ ওয়াল্টার্স। তবে খুব দ্রুতই এই দুইজনকে ব্যাট করতে নেমে যেতে হয় বাইশ গজে। তন্দ্রচ্ছন্নতা যেন বাইশ গজে নামার সাথে সাথে উধাও।

দুইজনে মিলে সামলে নিলেন নিউজিল্যান্ডের সব বোলারদের। দিনের খেলা শেষ করেই ফেরেন। এরপর দুইজনে মিলে আবার মদ্যপান করেন। পরদিন গিলমোর পেয়ে যান নিজের ক্যারিয়ারের প্রথম ও একমাত্র সেঞ্চুরি। মদ্যপ অবস্থায় গিলমোর ও ওয়াল্টার্স। দুই জনের মিলে গড়েন রেকর্ড ২১৭ রানের জুটি। এমন উদ্ভট কাণ্ড করেও শুধুমাত্র প্রতিভার জোরেই তিনি খেলেছিলেন জাতীয় দলে।

প্রতিভায় কোন খাদ না থাকলেও শরীর তো আর নিরেট নয়। আঘাত হানে ইনজুরি। পায়ের ইনজুরি খানিকটা বিপাকে ফেলে। আবার সেই ইনজুরির ভুল চিকিৎসায় তিনি যেন বিপন্ন। মাত্র ২৯ বছর বয়সেই তিনি প্রথম শ্রেণি ক্রিকেট থেকে অবসর নিয়ে নেন। ইনজুরিই ছিল প্রধান কারণ।

অন্যদিকে মাত্র ১৫  টেস্ট ও পাঁচ ওয়ানডেতে থেমে যায় তাঁর আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার। প্রতিভার প্রতিচ্ছবি তো তাঁর পরিসংখ্যান। টেস্টে ৫৪ উইকেটের বিপরীতে রয়েছে ৪৮৩ রান। অন্যদিকে ওয়ানডেতে দুই ইনিংস ব্যাট করে মোট ৪২ রান করলেও উইকেট নিয়েছেন ১৬টা। স্বল্প সময়েই এই প্রতিভাবান অলরাউন্ডারের ক্যারিয়ার থমকে যায়। ক্রিকেট মাঠ থেকে হয় প্রস্থান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link