রোনালদো, নট ফর সেল

আরেকটি ইউরোপীয় গ্রীষ্ম – আরেকবার আলোচনায় ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো। ৩৭ বছর বয়সে এসেও তিনি এখনো মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে আছেন। আভিজাত্যময় এক ক্যারিয়ারের শেষদিকে এসে রোনালদো ফিরেছিলেন নিজের পুরোনো বাড়ি ওল্ড ট্র্যাফোর্ড।

কিন্তু গত মৌসুমে দলের বাজে পারফরম্যান্সের কারণে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছিল রোনালদো-কে নিয়ে। কারো কাছে তিনি ছিলেন দলের ভারসাম্য নষ্টের কারণ, আবার কারো কাছে তিনিই ছিলেন ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের লজ্জা রক্ষার কারিগর।

এত এত বিতর্কের পরেও নতুন কোচ এরিক টেন হ্যাগের পরিকল্পনায় বেশ ভালভাবেই আছেন এই পর্তুগিজ তারকা। বর্তমানে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড চায় রোনালদোর চুক্তির বাকি ১২ মাস পূরণ করতে। ইতোমধ্যে তারা রোনালদো’র ট্রান্সফার ইস্যুতে ‘নট ফর সেল’ বা ‘বিক্রির জন্য নয়’ ট্যাগ বসিয়ে দিয়েছে।

অবশ্য এটা এখনও নিশ্চিত নয় যে, রোনালদো পরবর্তী মৌসুমে রেড ডেভিলদের হয়েই খেলবেন কি না। স্বাভাবিকভাবেই চ্যাম্পিয়ন্স লিগে খেলতে চাইবেন সর্বকালের অন্যতম সেরা এই ফুটবলার। ক্যারিয়ারের শেষ বেলায় বিধ্বস্ত অবস্থায় থাকা একটি ক্লাবের পুনর্নির্মাণের অংশ হবেন কিনা রোনালদো, তা নিয়েও প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে।

ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর ঘনিষ্ঠ সূত্রগুলো বিশ্বাস করে যে, তার চলে যাওয়ার কিছুটা সম্ভাবনা এখনো রয়েছে। ইতোমধ্যে এই স্ট্রাইকারের এজেন্ট হোর্হে মেন্ডেসের সাথে বায়ার্ন মিউনিখ, চেলসি এবং এএস রোমা’র মত কয়েকটি ক্লাবের মিটিংয়ের খবর প্রকাশ হয়েছে মিডিয়ায়।

অন্যদিকে ইউনাইটেডের নিজেদের এই পুর্নগঠনের সময় সম্পূর্ণ মনোযোগী এবং ইনফর্ম রোনালদোকে প্রয়োজন। মূলত নতুন কোন ভালো মানের স্ট্রাইকার দলে ভেড়াতে ব্যর্থ হওয়ায় রোনালদোর দিকেই তাকিয়ে থাকতে হচ্ছে ইংলিশ ক্লাবটিকে।

এই গ্রীষ্মে তাদের অগ্রাধিকারের তালিকায় একজন নতুন স্ট্রাইকার ছিল। সাবেকদের মত নতুন কোচ টেন হ্যাগও একজন সেন্টার ফরোয়ার্ড দলের জন্য আবশ্যক বলেই মতামত দিয়েছেন। কিন্তু কোচের চাহিদা পূরনে ব্যর্থ হয়েছে ক্লাবটি।

শুরুতে নরওয়ে ফুটবলার আর্লিং হ্যালান্ড ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের প্রাথমিক লক্ষ্য ছিল। কিন্তু প্রতিদ্বন্দ্বী ম্যানচেস্টার সিটি ইতোমধ্যে এই উদীয়মান তারকাকে নিজেদের করে নিয়েছে। সত্যি বলতে, হ্যালান্ডকে সাইন করানোর দৌঁড়েই টিকতে পারেনি ইউনাইটেড। এছাড়া আরেক পর্তুগিজ ইয়াংস্টার ডারউইন নুনেজের দিকেও চোখ ছিল দলটির। কিন্তু ইউর্গেন ক্লপের লিভারপুলের কাছে এখানটায় হার মানতে হয় তাদের।

মূলত ইউনাইটেড কখনোই উঠতি তারকা খেলোয়াড়দের পছন্দের তালিকায় ছিল না। এর সবচেয়ে বড় কারন পরবর্তী মৌসুমে উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগে অংশগ্রহণ করতে পারছে না ইংল্যান্ডের ঐতিহ্যবাহী দলটি। এছাড়া তাদের ক্লাবের স্পোর্টস প্রজেক্ট বা ভবিষ্যত পরিকল্পনা হ্যালান্ড, নুনেজদের মুগ্ধ করতে পারেনি।

অবশ্য প্লেয়ার সাইনিং-এর ক্ষেত্রে একেবারে পিছিয়ে নেই ইউনাইটেড। বর্তমান পরিস্থিতিতে বার্সেলোনার ফ্রেঙ্কি ডি ইয়ং এবং আয়াক্সের অ্যান্টনির ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে আগমন নিয়ে আলোচনা চলছে। আর তাই মেক শিফট সেন্টার ফরোয়ার্ড হিসেবে কোচ চাইলে ক্লাবে থাকা মার্কাস রাশফোর্ড কিংবা অ্যান্টনির মত উইঙ্গারকে ব্যবহার করতে পারে।

কিন্তু, ডাচ ট্যাকটিশিয়ানের একজন পারফেক্ট স্ট্রাইকার প্রয়োজন – এজন্যই রোনালদো এখন ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের সবচেয়ে বড় ভরসা হয়ে উঠেছেন। তিনিই এখন দলের একমাত্র স্বীকৃত স্ট্রাইকার।

কিন্তু সমস্যা হচ্ছে পর্তুগিজ অধিনায়ক কখনোই হাই-প্রেস করার মত খেলোয়াড় নয়। অন্যদিকে টেন হ্যাগের কৌশলের বেশ গুরুত্বপূর্ণ অংশ হচ্ছে প্রেসিং। এক্ষেত্রে রোনালদোকে ব্যবহার করতে বিকল্প কোন পরিকল্পনা ভাবতে হবে তাকে। কেননা মাঠে রোনালদোর উপস্থিত মানেই ভিন্ন কিছু।

তিনি হয়তো সর্বশেষ মৌসুমের মতই হ্যাটট্রিক করে দল জেতাবেন, কখনো আবার ইনজুরি সময়ে গোল করে শেষ মুহূর্তের বিজয়ী বনে যাবেন – সব মিলিয়ে রোনালদোকে আক্রমন ভাগের সেরা অস্ত্র ভাবতেই পারেন টেন হ্যাগ।

তবে, রোনালদো সবচেয়ে বড় যে প্রভাব রাখতে পারেন সেটা হলো দলকে আরো ভাল পারফরম্যান্সের দিকে টেনে নেয়া। আর্মব্যান্ড না পরলেও তিনি দলকে শক্ত নেতৃত্ব দিতে জানেন। এছাড়া দলীয় প্রশিক্ষণের সময় রোনালদোকে আদর্শ হিসেবে উপস্থাপন করতে পারবেন কোচরা।

রোনালদো’র থাকা কিংবা না থাকার এই বিতর্কে থেকে যাওয়ার সম্ভাবনা-ই বেশি। সেক্ষেত্রে এরিক টেন হ্যাগের প্রথম কাজই থাকবে রোনালদো’র কাছ থেকে সর্বোচ্চ আউটপুট আদায় করে নেয়া। তাছাড়া ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের এমন ভঙ্গুর অবস্থাতেও তারা যে কাঙ্ক্ষিত কিছু অর্জন করতে পারে, এমন উপলব্ধি রোনালদোসহ সব রেড ডেভিল সদস্যদের হৃদয়ে পৌঁছে দেয়াটাও তার দায়িত্ব।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link