শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়াম, বাংলাদেশ ক্রিকেটের ঘরবাড়ি। এখানেই যত আয়োজন সবই ক্রিকেটকে ঘিরে। এখানেই আবার কতশত ঘটনার সূত্রপাত ঘটে। ঈদের পরে স্টেডিয়াম পাড়া বেশ ক’দিন ছিল শুনশান। বাংলাদেশ দল রয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজে। আর বাংলাদেশ টাইগার্স ছুটেছে খুলনা, সেখানে হবে ক্যাম্প।
তো ঈদের আমেজটা বিরাজমান মিরপুরে। হঠাৎ করেই একটা ছোট্ট জটলার দেখা মিলল। সামনে এগুতেই দেখা মেলে চিরচেনা এক মুখের। শাহরিয়ার নাফিসকে ঘিরেই সৃষ্টি হয়েছে জটলা। তবে না আলোচনার বিষয়ের কেন্দ্রে নেই শাহরিয়ার নাফিস। বরং সে জায়গাটা দখল করেছে তাঁর নিয়ে আসা এক গাড়ি। বেশ দৃষ্টিনন্দন এক চার চাকার বাহন। বেশ পুরোনো মডেল।
ভিনটেজ গাড়ি বলতে যা বোঝায়। সেটাকে ঘিরেই আলোচনা। নানান বিস্ময়ের উত্তর দেওয়ার প্রচেষ্টা। সাংবাদিকদের আগ্রহ বাড়ে সাথে প্রশ্ন আর সেই সাথে তাল মিলিয়ে চলে শাহরিয়ার নাফিসের গাড়ি বিবরণ। সত্তর দশকের গাড়ি। জরাজীর্ণ অবস্থায় তিনি তা খুঁজে পেয়েছিলেন খুলনার এক রাস্তায়। সেটার পেছনে ব্যয় করেছেন নিজের সময় আর অর্থ। এরপর গাড়িটিকে চলনসই করেছেন নাফিস।
লেন্সার এ ৭০ মডেলের এই গাড়িটি শাহরিয়ার নাফিস ২০১২ সালে খুলনার রাস্তার ধারে পড়ে থাকতে দেখেন। তিনি তখন চালাচ্ছিলেন অন্য আরেকটি গাড়ি। লেন্সার এ ৭০ মডেলের গাড়িটি দেখা মাত্রই থমকে দাঁড়ান নাফিস, নেমে গিয়ে কিনে ফেলেন গাড়িটি।
গাড়ির প্রতি এই নেশাটা নাফিসের বহু আগে থেকেই। একেবারে ছেলে বেলা থেকেই। বাবা সেনাবাহিনীর সদস্য হওয়ার সুবাদে বাহিনীর গাড়িগুলো বেশ আকৃষ্ট করে শাহরিয়ার নাফিসকে। ছেলেবেলা থেকে সখ তিনি গাড়ি চালাবেন।
তবে বাকি যুকবদের থেকে খানিকটা ভিন্ন নাফিসের পছন্দ। যেখানে বাকি যুবকদের পছন্দের তালিকায় থাকে নতুন গাড়ি, সেখানে নাফিসের পছন্দের তালিকায় থাকে পুরোনো গাড়ি। তবে স্বাভাবিকভাবেই গাড়ি চালানো বা শেখার অনুমতি ছিল না নাফিসের। বাবা-মায়ের কড়া নির্দেশ ছিল ধরা যাবে না গাড়ির স্টেয়ারিং। তবে ক্রিকেটের মাঠে কিছু করে দেখানোর মত করেই গাড়ি চালানোর একটা জেদ ভর করেছিল শাহরিয়ার নাফিসের উপর।
তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন নিজের অর্থায়নে যেদিন গাড়ি কিনতে পারবেন সেদিনই শিখবেন গাড়ি চালানো। করেনও তাই। ২০০৭ সালের বিশ্বকাপ খেলে আসার পর তিনি নিজের টাকায় কিনেছিলেন নিজের প্রথম গাড়ি। সে গাড়িতেই তিনি শিখেছিলেন।
এই বাংলার সব ছেলের ছোটবেলাই কাটে খেলনা গাড়ি দিয়ে খেলে। তবে সত্যিকার গাড়ি প্রতি টান জন্মায় খুব কম সংখ্যক ছেলের মাঝেই। আর টান জন্মালেও তো আর সবার সামর্থ্য হয়না গাড়ি কিনবার। কিন্তু শাহরিয়ার নাফিসরা সবসময় একটা দৃষ্টান্ত স্থাপন করে দিয়ে যান। তাঁরা প্রমাণ করেন সখ পূরণ করতে হয় নিজ যোগ্যতায়। নিজের সখ পূরণ করতে অন্তত নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করা প্রয়োজন।
আজ হয়ত শাহরিয়ার নাফিসের গ্যারেজে শোভা পায় নানান রকমের গাড়ি। তবে সে গাড়িগুলোর সবগুলোই তো তিনি অর্জন করেছেন। নিজের কাজটা ঠিকঠাক করে গেছেন। আর এভাবেই তো করতে হয় স্বপ্ন পূরণ। ছোট থেকে ছোট সখ পূরণের পূর্বে নিজেকে হতে হয় বড়।