১৯৯৩ সালের জুনের চার তারিখ। অস্ট্রেলিয়ার মুখোমুখি হয়েছিল প্রতিদ্বন্দ্বী ইংল্যান্ড। ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে সেদিন অ্যাশেজ সিরিজের প্রথম টেস্ট অনুষ্ঠিত হয়েছিল৷ দলীয় আশি রানের মাথায় ইংল্যান্ডের হয়ে তখন ব্যাট করছিলেন মাইক গ্যাটিং। অন্য প্রান্তে বল হাতে আক্রমণে ছিলেন সর্বকালের সেরা লেগ স্পিনার শেন ওয়ার্ন।
শেন ওয়ার্নের করা একটা ডেলিভারি লেগ স্ট্যাম্পের একটু বাইরে পিচ করে নিমিষেই মাইক গ্যাটিংয়ের অফ স্ট্যাম্পে আঘাত হেনেছিল। এমনিতেই ওয়ার্নের বলে স্পিন একটু বেশি হয়, তাই তার বিপক্ষে ব্যাটাররা থাকতেন বেশ সতর্ক। কিন্তু সেদিনের ওই বল থেকে বাঁচার কোন উপায় জানা ছিল না গ্যাটিংয়ের; থাকবেই বা কি করে, সেটা তো শতাব্দীর সেরা ডেলিভারি ছিল।
প্রয়াত শেন ওয়ার্নের অবিশ্বাস্য সেই মুহুর্তটি আবার ফিরে এসেছে। না, পুরোনো কোন ভিডিওতে নয় বরং একেবারে বাস্তবেই। ২০২২ সালের জুলাইয়ের ১৮, শ্রীলঙ্কায় তখন স্বাগতিকদের বিপক্ষে লড়ছিল পাকিস্তান। ইন ফর্ম ব্যাটার কুশল মেন্ডিস তখন ব্যাট হাতে বাইশ গজে, অধিনায়ক বাবর আজম বল তুলে দিলেন লেগি ইয়াসির শাহ এর হাতে।
এরপর যা করলেন ইয়াসির সেটি একেবারে অবাস্তব। ২৩ বছর আগে ওয়ার্ন যা করেছিলেন ঠিক তেমনটাই করে বসলেন পাকিস্তানি তারকা। কুশল মেন্ডিসকে হতভম্ব করে দিয়ে লেগ স্ট্যাম্পে পিচ করা ইয়াসিরের বলটি টার্ন করে অফ স্ট্যাম্পে আঘাত করলো। পুরোপুরি টেক্সট বুক লেগ স্পিন দিয়েই লঙ্কান ব্যাটারকে সাজ ঘরে ফেরালেন ইয়াসির।
সাথেই সাথেই স্মৃতিতে উঁকি দিলো ১৯৯৩ সালে অভিজ্ঞ মাইক গ্যাটিংকে আউট করার জন্য ওয়ার্নের জাদুকরী সেই ডেলিভারির মুহূর্তটি। মাঠে থাকা ধারাভাষ্যকাররাও তাৎক্ষণিক দুইটি ডেলিভারির মধ্যে তুলনা করা শুরু করেছিলেন। অবশ্য ইয়াসির আর ওয়ার্নের ডেলিভারি যে পুরোপুরি একই সেটা বলা যায় না, কিছুটা পার্থক্য থাকাটাই স্বাভাবিক।
নিঃসন্দেহে শেন ওয়ার্ন গত শতাব্দীর সবচেয়ে মনোমুগ্ধকর বলটি করেছিলেন ইংল্যান্ডের বিপক্ষে। এরপর অনেক লেগিই বল করেছেন, কিন্তু এমন কোন দৃশ্যের পুনরায় মঞ্চায়ন হয়নি। ইয়াসির শাহ এবার সেই আক্ষেপ পূর্ণ করেছেন, পুরোপুরি না পারলেও সবচেয়ে কাছাকাছি উপায়ে তিনি ওয়ার্নের সেই ‘শতাব্দীর সেরা ডেলিভারি’ করতে সক্ষম হয়েছেন।
দুইজনই লেগ স্পিন বোলিং করলেও বেশকিছু পার্থক্য অবশ্য আছে ইয়াসির শাহ এবং শেন ওয়ার্নের। একদিকে ওয়ার্ন বল করতেন স্লো রানআপে অন্যদিকে ইয়াসিরের রান আপ বেশ দ্রুতগতির। তাছাড়া দুইজন ক্যারিয়ারেও আছে ভিন্নতা। শেন ওয়ার্ন নিজের সময়ে দাপিয়ে বেড়িয়েছেন ক্রিকেটের সব সংস্করণেই। কিন্তু লাল বল ছাড়া ইয়াসির শাহকে খুব একটা দেখা যায় না পাকিস্তানের সবুজ জার্সিতে।
এটা মেনে নিতেই হবে যে, শেন ওয়ার্নের অত্যাশ্চর্য বলের সৌন্দর্য্যকে অতিক্রম করা অনেক কঠিন কাজ। তবে ইয়াসির শাহ অবশ্যই প্রায় অসম্ভব সেই কাজটি করার সবচেয়ে কাছাকাছি অবস্থায় গিয়েছেন। আর পাকিস্তানের এই লেগি ডেলিভারিটিকে এখন পর্যন্ত চলতি শতাব্দীর সেরা বললেও আপত্তি করার কথা নয়৷
আর তিনি এমন একটি ডেলিভারি করেছেন যেটি নিয়ে নিশ্চিতভাবেই আগামী বছরগুলোতে বিস্তর আলোচনা করা হবে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতেও ইতোমধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে ইয়াসির শাহ এবং শেন ওয়ার্নের এই দুই ডেলিভারির ভিডিওচিত্র।
শেন ওয়ার্ন সেই ম্যাচে মাইক গ্যাটিং ছাড়াও দুই ইনিংস মিলিয়ে আরো সাতজন ব্যাটসম্যানকে প্যাভিলিয়নের পথ দেখিয়েছিলেন। এর ফলে ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরষ্কারও উঠেছিল এই অজি কিংবদন্তির হাতে। অবশ্য এমন কিছু ঘটেনি ইয়াসিরের ভাগ্যে, দুই ইনিংস মিলিয়ে মাত্র পাঁচ উইকেট পেয়েছেন তিনি।
তবে যে মুহূর্ত উপহার দিয়েছেন তাতেই ক্রিকেট সমর্থকদের কাছে অনেকদিন স্মরণীয় হয়ে থাকবেন এই পাকিস্তানি ক্রিকেটার।