জুলাই মাসের আকাশ বিমোহিত করেছে মানুষকে। কি অপরুপ এক চিত্র! মুগ্ধতায় দুই নয়ন যেন জুড়িয়ে যাবার উপক্রম। তবে বছর জুড়েই তো ক্রিকেট মাঠের মুগ্ধতা ছড়াবার দায়িত্ব নিজ কাঁধে নিয়ে ফেলেছেন লিটন কুমার দাস। বাংলাদেশের সবচেয়ে স্টাইলিশ ব্যাটার লিটন নিজের স্টাইল ছড়িয়ে দিচ্ছেন গোটা বিশ্বে।
এই লিটনের ব্যাটিং দেখতে ফতুল্লা ছুটে গিয়েছিলেন মাশরাফি বিন মর্তুজা। এই লিটনের প্রশংসায় পঞ্চমুখ ছিল গোটা বাংলাদেশের ক্রিকেট পাড়া। তবে জাতীয় দলের শুরুর দিকটায় কেমন যেন ফিঁকে ছিলেন লিটন। বীজ বপণ করার পর বড্ড বেশি সময় লেগে যাচ্ছিল। সবার কপালে যেন চিন্তার ভাঁজ।
এই বীজ থেকে তো দৃষ্টিনন্দন এক ফুল ফোঁটার কথা ছিল। সে ফুলের সুবাস তো দুই মেরু অবধি ছড়িয়ে যাবার কথা ছিল। তবে তা আর হচ্ছিল কই! কিন্তু ‘সবুরে মেওয়া ফলে’। ধৈর্য্য ধরে বিশ্বাস করে যাওয়ার প্রতিদান দিতে শুরু করেছেন লিটন। লিটন নামের যে ফুলটার অপেক্ষায় একটা দীর্ঘ সময় পার করেছে সবাই সে ফুলটা ফুটতে শুরু করেছে।
অপলক তাকিয়ে থাকার মতই সৌন্দর্য ছড়িয়ে দিচ্ছে গোটা ক্রিকেটাঙ্গনে। ২০২২ সালটা যেন নিজের করে নেওয়ার দিকেই সব মনোযোগ তাঁর। ব্যাট হাতে সে কাজটাই করে যাচ্ছেন লিটন। তিনি যেন ছুটছেন আপন গতিতে। এখন অবধি সবার উপরে রয়েছেন তিনি। এমনকি দুর্দান্ত সময় পার করা জনি বেয়ারস্টোর উপরে রয়েছেন তিনি রানের বিচারে।
এই বছর যেন নতুন এক উদ্দ্যমে শুরু করেছে ইংল্যান্ড জাতীয় দল। গেল বছর টেস্ট ক্রিকেটে নিদারুণ ভরাডুবির পর একেবারে ৩৬০ ডিগ্রি পালটে গেছে দৃশ্যপট। হেসে খেলে চতুর্থ দিনে রেকর্ড গড়ে জয় তুলে নিচ্ছে ইংল্যান্ড। আর এসব জয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন জনি বেয়ারস্টো। তবে তা অবশ্যই ব্যাট হাতে। তবুও তাঁর সব ফরম্যাটে রানের যোগফল ছাড়াতে পারেনি লিটনের রানের ট্যালি।
ধারাবাহিক লিটন যে সবাইকে ছাপিয়ে যেতে পারেন, সেটাই প্রমাণে নিজেকে মশগুল করে রেখেছেন লিটন কুমার দাস। পাকিস্তানের অধিনায়ক বাবর আজম বিগত বছর গুলো থেকেই বড্ড বেশি ধারাবাহিক। তবে তিনি এই বছর রানের বিচারে রয়েছেন লিটনের নিচে। লিটনের সামনে সুযোগ রয়েছে তিনি যে উজ্জ্বল এক তারকা হতেই এসেছেন ক্রিকেট পাড়ায় সেটা সবাইকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেবার।
ইতোমধ্যেই প্রায় বারোশ রান করে ফেলেছেন লিটন। তাঁর ব্যাট যেন থামাতেই চাইছে না। ভিন্ন সব ফরম্যাটেও যেন অটল লিটন। টেস্টে এই বছর দুই খানা শতক তুলে নিয়েছেন। লাল বলের ক্রিকেটের চার খানা অর্ধশতকও করেছেন ডানহাতি এই ব্যাটার। রঙিন পোশাকের বড় ফরম্যাটে একটি শতকের পাশাপাশি তিন অর্ধশতক রঙ ছড়াচ্ছে। তিন ফরম্যাট মিলিয়ে গড়টা চল্লিশের ঘরে।
নিজের গড়টাই যেন আরও একটু বাড়িয়ে নেওয়ার প্রচেষ্টা চালাবেন বাংলাদেশের আশার আলো লিটন। তাঁর ব্যাটটা যখন হাসে তখন যেন পুরো বাংলাদেশই আনন্দে ভাসে। ব্যাটটা যেন তরবারি হয়ে আঘাত করে প্রতিপক্ষকে। এমন আঘাতে ক্ষত-বিক্ষত হয় প্রতিপক্ষের হৃদয় ও স্বপ্ন। আর অন্যদিকে টাইগার সমর্থকদের মনটা ভরে যায় প্রফুল্লতায়।
বছরটা ঠিক কোথায় শেষ করবেন লিটন সেটা জানা নেই। তবে এই যে লিটন নিজের কক্ষপথ খুঁজে পেলেন এটাই তো সবচেয়ে স্বস্তির বিষয়। এই বিষয়টাই যেন একটা শীতল সাগর বইয়ে দিচ্ছে বাংলাদেশের ক্রিকেটকে। এই লিটন কখনও কক্ষচ্যুত না হোক। এই প্রত্যাশা অন্তত সবাই করে।