একটা সুবাতাস বয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ ক্রিকেটে। এমনটাই তো শোনা যাচ্ছে। অন্তত টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের ক্ষেত্রে কথাটা প্রযোজ্য। কেননা তথাকথিত সিনিয়র খেলোয়াড়দের ছাড়াই বাংলাদেশ পূর্ণাঙ্গ একটা টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলতে গিয়েছে জিম্বাবুয়েতে। তবে একটা প্রশ্ন কিন্তু উঠতেই পারে ঠিক কতগুলো ম্যাচ খেললে সিনিয়র হওয়া যায়?
হ্যাঁ, এমন প্রশ্ন করাটা অবান্তর নয়। এই সিনিয়র খেলোয়াড়দের উপর দোষ চাপিয়ে দিয়ে একটু নির্ভার হতে চাওয়ার একটা প্রবণতা কিন্তু বিদ্যমান। সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ এই তিনজনই এখন অবধি টিকে আছেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে। এদের সময়টা প্রায় ফুরিয়ে এসেছে। এখনও বাংলাদেশের পরবর্তী প্রজন্ম ঠিকঠাক দায়িত্ব নেওয়াটাই যেন শিখছে না।
এই যে তারুণ্যের জয়গানের কথা বলা হচ্ছে, সেটার শুরু তো নুরুল হাসান সোহানের অধিকায়ত্ব পাওয়ার মধ্য দিয়েই। তবে ৩৩ টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলা সোহান কি বিবেচিত হন না একজন সিনিয়র খেলোয়াড় হিসেবে? হবার তো কথা। ৩৩ টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলে ফেলা তো আর চাট্টিখানি কথা নয়। তবুও তাঁকে বিবেচনা করা হচ্ছে একজন তরুণ ক্রিকেটার হিসেবে।
মুস্তাফিজুরের নিশ্চয়ই অভিজ্ঞতার কমতি নেই। বিশ্ব ক্রিকেটের নানাপ্রান্ত ঘুরে আসা একজন খেলোয়াড়কে আর যাই হোক বয়সের বিচারে তরুণ বলাটা নেহায়েত বোকামির শামিল। তাঁর পরিমাণ অভিজ্ঞতা বাংলাদেশের আর কোন খেলোয়াড়ের নেই। এগিয়ে রয়েছেন কেবল সাকিব আল হাসান। ৬৬ টি টি-টোয়েন্টি খেলেছেন তিনি বাংলাদেশের হয়ে। আর ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটে খেলা ম্যাচগুলোর এই পরিসংখ্যানকে আরও ভারি করবে নিশ্চয়ই।
অন্যদিকে লিটন দাস ফর্মে রয়েছেন। তিনি দায়িত্ব নিয়ে ব্যাটিং করতে শুরু করেছেন। তিনিও প্রায় পঞ্চাশের বেশি আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলে ফেলেছেন। আফিফ হোসেন ওয়ানডে ক্রিকেটে সাম্প্রতিক সময় নিজের সামর্থ্যের প্রমাণ রেখেছেন। তবে তিনিও প্রায় পঞ্চাশের কাছাকাছি ম্যাচ খেলে ফেলেছেন। এমন একজন খেলোয়াড়ের অভিজ্ঞতা নিশ্চয়ই কম হবার কথা নয়।
সত্যি বলতে বড়জোর আর দুই বছর। এই দুই বছর বাদেই এই খেলোয়াড়দেরকেই সামলাতে হবে বাংলাদেশের ক্রিকেটকে। এখনও ঠিক জুনিয়র ক্রিকেটার তকমাটা নিজেদের নামের পাশে জুড়ে নিয়ে দায়সারা পারফরম করবার সুযোগ নেই। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে প্রথম টি-টোয়েন্টি ম্যাচটা হেরেছে দল। সেখানে বোলারদের দোষটাই সবচেয়ে বেশি। বোলারদের কেউই কিন্তু একেবারে সদ্য যুক্ত হওয়া খেলোয়াড় নন।
তবুও শেষের দিকে অবাধে রান খরচ করেছেন তাসকিন আহমেদ, শরিফুল ইসলাম ও মুস্তাফিজরা। এমন পারফরমেন্সের সবটুকুই দায় তো তাদেরই। এদের কেউই তো অনভিজ্ঞ নন। প্রায় প্রত্যেকে বাংলাদেশকে বহু ম্যাচে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের ময়দানে প্রতিনিধিত্ব করেছে। তাঁদের কাছ থেকে জিম্বাবুয়ের মত একটা দলের বিপক্ষে শেষ পাঁচ ওভারে ৭৭ রান ব্যয় মেনে নেওয়ার যুক্তি নেই।
তবুও এদের হাতেই ছাড়তে হবে বাংলাদেশের আগামী দিনের ক্রিকেটকে। কিন্তু একটা শঙ্কা থেকেই যায়। তাঁরা কি পারবেন বাংলাদেশের ক্রিকেটকে এগিয়ে নিয়ে যেতে? সে উত্তর হয়ত সময় বলে দে। তাঁরাই যে গুরুত্বপূর্ণ এবং তাঁরাই যে সিনিয়র খেলোয়াড় সেটা বুঝতে হবে। এই দলের প্রতিটা খেলোয়াড়কে নিজেদের অবস্থানটুকু নিয়ে সঠিক ধারণা থাকতে হবে।
সর্বোপরী তাঁদের প্রত্যেকের মাঝেই সে উপলব্ধিটা আসা প্রয়োজন যে তাঁরা বাংলাদেশ ক্রিকেটের কাণ্ডারি। সেজন্য তাঁদের মধ্যে থাকতে হবে পারফরম করার স্পৃহা। নতুবা বাংলাদেশ ক্রিকেট হারিয়ে যেতে পারে গভীর অতলে।