বৈচিত্রময় এক দুনিয়ায় বসবাস। এখানকার বাসিন্দাদের মধ্যে বৈচিত্র্যতা থাকবে না তা তো আর হতে পারে না। তেমনই একই ব্রহ্মাণ্ডের বৈচিত্র্যময় চরিত্র আরশাদ আইয়ুব। একেবারে সুপরিচিত কোন চরিত্র তিনি নন। তবে নায়ক তাঁকে বলাই যায়। ভারতের আরও একটি এশিয়া কাপের শিরোপা জয়ের নায়ক তিনি।
একেবারে অথৈ সাগরে ডুব দিয়ে নিশ্চয়ই আরশাদ আইয়ুবকে খুঁজে বের করবার দরকার খুব একটা নেই। ভারত ক্রিকেট যদি হয় এক মহাসমুদ্র, তবে তিনি সে সমুদ্রের লক্ষ্য কোটি জলজ প্রাণির একজন। ঘরোয়া ক্রিকেটে লম্বা সময় ধরে খেললেও, ভারত জাতীয় দলে তিনি খুব অল্প সময়ই নিজের সামর্থ্যের প্রমাণ রাখতে পেরেছিলেন। এর পেছনের কারণটা হয়ত কেবল আইয়ুবের একান্ত লুকিয়ে রাখা কোন এক কথা।
১৯৫৮ সালের দুই আগস্ট ভারতের হায়দ্রাবাদ প্রদেশে জন্ম তাঁর। ভারত ক্রিকেটকে হায়দ্রাবাদ বহুবার তুখোড় সব খেলোয়াড় উপহার দিয়েছে। তেমনই একজন আরশাদ আইয়ুব। একজন অফ-স্পিনার হিসেবেই তাঁর আগমন ঘটে ভারত জাতীয় দলে। ১৯৮৭ থেকে ১৯৯০ এই সময়কালে তিনি খেলেছেন ভারতের জাতীয় দলে। একেবারে অনুজ্জ্বল এক তারকা হয়েই তাঁর প্রস্থান ঘটেনি।
তিনি বরং শুরুটা করেছেন দুর্দান্তভাবে। তখনকার সময়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ছিল বিশ্বক্রিকেটের দুর্ধর্ষ এক পরাশক্তি। সে দলের বিপক্ষেই এক টেস্ট ম্যাচে অভিষেক আইয়ুবের। সে ম্যাচটা ভারত হেরেছিল স্যার ভিভিয়ান রিচার্ডসের দুর্দান্ত এক শতকে। শেষের ইনিংসে ক্যারিবীয়ানদের উইকেট পড়েছিল পাঁচটি। যার চারটি উইকেটই নিয়েছিলেন আরশাদ আইয়ুব। সেবার তিনি পকেটে পুরেছিলেন গর্ডন গ্রিনিজ, ডেসমন্ড হেইন্স, উইনস্টন ডেভিসদের উইকেট।
এর থেকে খুব ভাল শুরু হয়ত সে সময় তাঁর কাছ থেকে কেউ প্রত্যাশাও করেনি। এর সুবাদেই তিনি জাতীয় দলে কেবল তিন বছরের মেয়াদকাল পেয়েছিলেন। এ সময়ে কেবল ১৩ খানা টেস্ট ম্যাচ খেলার সুযোগ পেয়েছিলেন তিনি। সেখানে তিন দফা ফাইফার পেয়েছিলেন তিনি। দুইবার তিনি এই কীর্তি গড়েন ওয়েস্ট ইন্ডিজের স্বর্ণ যুগের খেলোয়াড়দের বিপক্ষে। ১৯৮৯ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরেই পাঁচ বা তার বেশি উইকেট তিনি নিয়েছিলেন। যার মধ্যে স্যার ভিভিয়ান রিচার্ডসের মহামূল্যবান উইকেটও ছিল।
স্বল্প সময়েই ভারতের ক্রিকেট ইতিহাসে তিনি ছাপ ফেলে রেখে যান। ১৯৮৭ সালে তৃতীয় এশিয়া কাপের ফাইনাল ম্যাচে তিনি শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে নয় ওভারে মাত্র ২৯ রান খরচ করেছিলেন। তাঁর সেই বোলিং ফিগারই ভারতকে শিরোপা জয়ের ভিত গড়ে দিয়েছিল। এর আগেই অবশ্য তিনি গৌরবের দিকে ভারতকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সবচেয়ে বেশি সহয়তা করেছিলেন আরশাদ আইয়ুব।
পাকিস্তানের বিপক্ষে মহাগুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে তাঁর বোলিং ফিগারটা ছিল ৯-০-২১-৫। পাকিস্তানের ব্যাটিং লাইনআপকে একাই সেদিন ধসিয়ে দিয়েছিলেন ডানহাতি অফ-স্পিনার। ইতিহাসে একটা ছাপ ফেলে গেলেন তিনি। একজন অফস্পিনার হিসেবেই আলোকিত করেছেন তিনি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট। এর ফাঁকে তাঁর ব্যাটিং সত্ত্বাটা কখনোই বিকশিত হওয়ার সুযোগটাই পায়নি। তবে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে তিনি প্রায় ২৮ গড়ে রান করেছেন। সেখানে আবার দুইটি শতকও রয়েছে তাঁর।
এর মধ্যে একটি আবার দ্বি-শতক। রঞ্জি ট্রফির সেমিফাইনালে তিনি ২০৬ রানে অনবদ্য এক ইনিংস খেলেছিলেন হায়দ্রাবাদের হয়ে। সেবার শিরোপা গিয়েছিল হায়দ্রাবাদের ঘরে। ঘরোয়া ক্রিকেটটা তিনি খেলে গিয়েছিলেন ১৯৯৪ সালে। এরপর নতুন এক পরিচয়ে তিনি আবির্ভূত হন ক্রিকেট দুনিয়ায়। ১৯৯৮ সালের দিকে তিনি হায়দ্রাবাদে শুরু করেন আরশাদ আইয়ুব ক্রিকেট একাডেমি। ক্রিকেটার গড়ে তোলার কারিগরে পরিণত হন তিনি।
এরপর আবারও তিনি একটু বৈচিত্র্য আনলেন নিজের জীবনে। তবুও ক্রিকেটটাকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে রেখেছিলেন আরশাদ আইয়ুব। এরপর সাংগঠনিক দায়িত্ব নিতে শুরু করেন তিনি। হায়দ্রাবাদ ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি দুই দফা। তাছাড়া ক্রিকেট থেকে তিনি কখনোই খুব একটা দূরে থাকতে পারেননি।
ভারত জাতীয় দলের সাথেও তিনি ক্রিকেটার না হয়েও কাজ করেছেন বহুবার। দলের ম্যানেজারের দায়িত্ব তিনি শেষ দফা পালন করেছিলেন ২০১৫ বিশ্বকাপেও। ক্রিকেট থেকে তিনি কখনোই দূরে থাকতে পারেননি। তবে একটা আক্ষেপ নিশ্চয়ই তিনি করেন। জাতীয় দলের হয়ে লম্বা সময় ধরে খেলাটা আর হয়ে ওঠেনি তাঁর।