ওয়ান সিজন ওয়ান্ডার – বিশ্ব ফুটবলে বেশ পরিচিত একটা লাইন। এক মৌসুমে ঝলক দেখিয়ে এরপর হারিয়ে যাওয়া খেলোয়াড়দের জন্য এর সৃষ্টি। শুধু খেলোয়াড় নয়, কখনো কখনো পুরো দল এই পরিস্থিতির শিকার হয়। এক মৌসুমে দারুণ কিছু করার পর নতুন মৌসুমে সেটি ধরে রাখতে ব্যর্থ হওয়া ক্লাবের সংখ্যা অনেক বেশি।
কিন্তু যদি বলা হয় ম্যানচেস্টার সিটির নাম, তবে গল্পটা মোটেও এমন হবে না। ধারাবাহিকভাবেই তারা ইউরোপে আধিপত্য বিস্তার করেছে। আর সিটি ফুটবলারদের অভিষেক মন মতো নাও হতে পারে, কিন্তু একবার ট্র্যাকে উঠতে পারলে নি:সন্দেহে হয়ে উঠবে সময়ের অন্যতম সেরা। কারন সিটিজেনদের কোচ পেপ গার্দিওলার ফুটবল দর্শনে মানিয়ে নিতে সময় লাগে শিষ্যদের।
জোয়াও ক্যান্সেলো, রিয়াদ মাহরেজ, রদ্রিগো সবার জন্যই এমনটা সত্য। নিজেদের প্রথম মৌসুমে উল্লেখযোগ্য কিছু করতে ব্যর্থ হয়েছিল তারা, কিন্তু এরপর ঘুরে দাঁড়াতে ভুল হয়নি। গত মৌসুমে ম্যানসিটিকে শিরোপা জেতানোর ক্ষেত্রে বড় অবদান ছিল ক্যান্সেলো-রদ্রিগোদের।
ঠিক এই ব্যাপারটা জানেন ম্যানচেস্টার সিটির সবাই। আর তাই জ্যাক গ্রিলিশের পথচলা কিছুটা হতাশাজনক হলেও, সবাই তাঁর সাফল্যের ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী।
১০০ মিলিয়ন ইউরোর বিনিময়ে ইতিহাদ স্টেডিয়ামে আগমনের পরে গ্রিলিশ হয়তো ভেবেছিলেন গোল আর অ্যাসিস্টের ফোয়ারা তৈরি হবে। কিন্তু পুরো আসরে মাত্র ছয় গোল আর চার অ্যাসিস্ট এসেছে তাঁর পা থেকে।
অবশ্য গার্দিওলা মোটেও চিন্তিত নন ইংলিশ তরুণকে নিয়ে। তিনি মূলত গ্রিলিশের অভিজ্ঞতার দিকে আপাতত জোর দিচ্ছেন। দলের ছন্দ এবং সতীর্থদের রসায়ন বোঝার জন্য এই অভিজ্ঞতা গুরুত্বপূর্ণ। আবার কাতালান কোচের ট্যাকটিক্স বেশ অনন্য, সেটির সঙ্গে মানিয়ে নেয়ারও একটা ব্যাপার রয়েছে।
ছয় বছর বয়সে জ্যাক গ্রিলিশ যে ক্লাবে যোগ দিয়েছিলেন, সেই ক্লাব ছেড়ে তারপর ম্যানচেস্টার সিটিতে যেতে হয়েছিল। একটি নতুন শহরে, একটি নতুন দলে, সুপারস্টারদের দ্বারা ঘেরা ড্রেসিং রুমে যাওয়ার পরপরই পারফর্ম করা মোটেও সহজ নয়।
২০২২ সালে নতুন মৌসুমে দলের স্কোয়াডকে জায়গা পেতে প্রাক-মৌসুম সফরে কঠোর পরিশ্রম করতে দেখা গেছে গ্রিলিশকে। তাছাড়া দলের সদস্যদের সাথে ডিনার এবং অন্যান্য ইভেন্টগুলো সতীর্থদের সাথে বন্ধন গঠনে সহায়তা করছে ৷
গ্রিলিশের সাথে নবাগত তারকা আর্লিং হাল্যান্ডের সাথে ভালো বোঝাপড়া দেখা গিয়েছে। বায়ার্ন মিউনিখের বিপক্ষে এই স্ট্রাইকারের গোলেও অ্যাসিস্টও করেছেন গ্রিলিশ। সবমিলিয়ে প্রি-সিজন ক্যাম্পেইনে এই অ্যাটাকিং মিডফিল্ডারের পারফরম্যান্সে প্রায় সবাই মুগ্ধ হয়েছে।
জ্যাক গ্রিলিশ নিজেও জানেন তাঁর উপর প্রত্যাশা ঠিক কতটা। সেই প্রত্যাশার চাপে যেন ভেঙ্গে পড়তে না হয় সেজন তিনি ইতোমধ্যে বেছে নিয়েছেন পরিশ্রমের পথ। প্রথম মৌসুমে ব্যর্থ হলেও তিনি হতাশ হয়ে পড়েননি আবার চ্যালেঞ্জ নিয়েছেন। এবং আসন্ন এই মৌসুমের জন্য নিজেকে প্রস্তুত রাখছেন সর্বোত্তম উপায়ে।
এটা স্বাভাবিক যে, বিশ্বের সব ভক্তরা সবসময় ইংল্যান্ডের সবচেয়ে ব্যয়বহুল খেলোয়াড়ের দিকে তাকিয়ে থাকবে। তাঁর যেকোনো ভুলের সমালোচনা করার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়বে। অন্যদিকে কিছু ফুটবল বিশ্লেষক তার বড় অংকের ট্রান্সফার ফি-কে খোঁচা মারার অস্ত্র হিসেবে দেখেন, যখন গ্রিলিশ কোন ম্যাচে পারফর্ম করতে ব্যর্থ হয়।
আক্রমণভাগের দুই অভিজ্ঞ তারকা রাহিম স্টার্লিং এবং গ্যাব্রিয়েল জেসুসকে ছেড়ে দিয়েছে ম্যানচেস্টার সিটি। ক্লাবের এমন পরিকল্পনা প্রমাণ করে যে, পেপ গার্দিওলা গ্রিলিশকে কতটা ভরসা করেন। কেননা শুরুর একাদশে জায়গা পাওয়ার ক্ষেত্রে এই দুইজন-ই ব্রিটিশ তরুণের বড় প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল।
ইত্তিহাদে আগমনের এক বছর পরে জ্যাক গ্রিলিশের সম্ভাবনার প্রতি বিশ্বাস হ্রাসের পরিবর্তে আরো বেড়েছে। অবাক হওয়ার কোন কারণ থাকবে না, যদি নিজের দ্বিতীয় মৌসুমে বিশ্বের অন্যতম সেরা পারফর্মার হয়ে ওঠেন এই ২৬ বছর বয়সী ফুটবলার।