এলেন, দেখলেন, জয় করলেন – ক্রিকেটে এর উদাহরণ কম নয়। অনেক তারকা ক্রিকেটারই নিজেদের কুড়িয়ে পাওয়া সুযোগ কাজে লাগিয়ে চোখের পলকে সাফল্যের চূড়ায় পদার্পণ করেছেন। এই যেমন হালের মার্নাশ লাবুশেন, সূর্যকুমার যাদবরা অভিষেকের পরেই জয় করে নিয়েছেন দর্শকদের হৃদয়।
এলেন, দেখলেন, জয় করলেন, এর সাথে যদি হারিয়ে গেলেন যোগ করে দেয়া হয় তাহলেও পাওয়া যাবে অনেককে। এর মধ্যে পেসারদের সংখ্যা একটু বেশিই। ধূমকেতুর মত আবির্ভাবের পর দ্রুতই আড়ালে চলে যাওয়া কয়েকজন বিখ্যাত পেসারদের নিয়ে আজকের আয়োজন।
▪ অ্যান্ডি বিকেল (অস্ট্রেলিয়া)
স্বর্ণকেশী সদা হাস্যজ্বল অ্যান্ডি বিকেল নিজের ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে অস্ট্রেলিয়ার তিন নম্বর ফাস্ট বোলার ছিলেন। কিন্তু ব্রেট লির আগমনের পর গিলেস্পি, ম্যাকগ্রার সাথে তিনিই জুটি গড়েন; বাদ পড়ে যান অ্যান্ডি বিকেল। ২০০৩ বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচটি অ্যান্ডি বিকেলের অনিয়মিত ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বড় হাইলাইটস।
বল হাতে সেদিন বিকেল মাত্র ২০ রানে সাত উইকেট তুলে নিয়েছিলেন। কিন্তু ২০৬ রান তাড়া করতে নেমে ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ে টিম অস্ট্রেলিয়া। এরপর মাইকেল বেভানকে সাথে নিয়ে দলকে জয়ের বন্দরে পৌঁছে দেন বিকেল। এর এক বছর পরেই বিচেলের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের ইতি ঘটে।
সবমিলিয়ে ১৯ টেস্ট এবং ৬৭টি ওয়ানডে খেলেছেন তিনি। সাদা পোশাকে ৫৮ আর রঙিন পোশাকে ৭৮টি উইকেট নিয়েছেন। আরও সুযোগ পেলে হয়তো সমৃদ্ধ হতো তাঁর অর্জনের ঝুলি।
▪ টিম ব্রেসন্যান (ইংল্যান্ড)
লম্বা এক ক্রিকেট ক্যারিয়ার থাকা সত্ত্বেও ইংল্যান্ড জাতীয় দলে কখনও নিয়মিত ছিলেন টিম ব্রেসন্যান। কিন্তু যখনই সুযোগ পেয়েছেন, সামনে থেকে পারফর্ম করেছেন। এমনই একটি ম্যাচ ছিল ২০১০ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে। অ্যাশেজ সিরিজের মেলবোর্ন টেস্টে ব্রেসন্যান হয়ে উঠেছিলেন অতিমানব।
প্রথম ইনিংসে তাঁর কল্যানে অজিদের ৯৮ রানে অলআউট করে ইংল্যান্ড। এরপর দ্বিতীয় ইনিংসে ব্রেসনান তুলে নেন আরও চার উইকেট। কিন্তু ২০১১ সালে ইনজুরির কারনে ছিটকে যান এই মিডিয়াম পেসার। এরপর জাতীয় দলে ফিরলেও ছিলেন না সেরা ছন্দে। সাদা পোশাকে তাঁর ক্যারিয়ার সে সময় থেমে যায়।
নিজের ছোট এক ক্যারিয়ারে ২৩ টেস্ট খেলে ৭২ টি উইকেট নিয়েছিলেন তিনি। এছাড়া টেল এন্ডার হিসেবে ব্যাট হাতেও পারফর্ম করেছেন।
▪ স্টুয়ার্ট ক্লার্ক (অস্ট্রেলিয়া)
২০০৬ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে মাঠে নামতে পারেননি গ্লেন ম্যাকগ্রা। প্রজন্মের সবচেয়ে সেরা স্ট্রাইক বোলারের অনুপস্থিতিতে কিছুটা দুর্বল ছিল অজি বোলিং লাইন আপ। কিন্তু ম্যাচে ম্যাকগ্রার অভাব মোটেও বোঝা যায়নি।
এই কিংবদন্তি বোলারের পরিবর্তে মাঠে নামা স্টুয়ার্ট ক্লার্ক সেদিন প্রোটিয়া ব্যাটারদের নাভিশ্বাস তুলেছিলেন। প্রথম ম্যাচে ৮৯ রানে নয় উইকেট শিকার করা ক্লার্ক পুরো সিরিজে ২০ উইকেট নিয়েছিলেন। পরবর্তী অ্যাশেজে ক্লার্ক প্রথম সুযোগ পান তৃতীয় টেস্টে।
সেখানেও ইংল্যান্ডকে মাত্র ১০৬ রানে গুটিয়ে দিত বড় ভূমিকা রাখেন তিনি। কিন্তু কোন এক অজানা কারণে সেই সিরিজের পর আর অজি দলে দেখা যায়নি এই পেসারকে।
▪ প্যাট্রিক প্যাটারসন (ওয়েস্ট ইন্ডিজ)
বিশালদেহী এবং দুর্দান্ত অ্যাকশনের প্যাট্রিক প্যাটারসন ছিলেন ব্যাটসম্যানের জন্য ভীতিকর। ১৯৮৫/৮৬ সালে ইংল্যান্ড সফরে টেলিভিশন ব্ল্যাকআউট থাকায় অল্প কয়েকজন মানুষ তাঁর সে সময়ের আগ্রাসী রূপ দেখতে পেরেছিল। এমনকি ইংলিশ কিংবদন্তি গ্রাহাম গুচ নিজেও স্বীকার করেছিলেন যে তিনি সেই সিরিজে প্যাটারসনকে দেখে ভয় পেয়েছিলেন।
১৯৮৮/৮৯ সালে অস্ট্রেলিয়া সফরেও নিজের বিধ্বংসী রূপ নিয়ে হাজির হয়েছিলেন এই ক্যারিবিয়ান বোলার। তাঁর আক্রমণাত্মক বোলিংয়ে মাত্র ১১৪ রানে অলআউট হয়ে গিয়েছিল স্বাগতিকরা। কিন্তু ২৮ টেস্টে ৯৩ উইকেট তুলে নেয়া এই আগ্রাসী বোলার হারিয়ে গিয়েছিলেন দ্রুতই। ক্রিকেট পরবর্তী সময়ে তিনি কি করেছেন সেটিও নিশ্চিত করে জানা যায়নি।
▪ সাইমন জোন্স (ইংল্যান্ড)
তিন বছরের ক্যারিয়ার হলেও সিমন জোন্সের আলোচিত অধ্যায়ের স্থায়িত্ব ছয় সপ্তাহ। দুর্ধর্ষ গতির কারণে অভিষেকের নজর কাড়েন এই ইংলিশ পেসার। কিন্তু লিগামেন্টের ইনজুরিতে পড়ে প্রায় তিন বছরের জন্য ক্রিকেট থেকে বাইরে ছিলেন জোন্স।
এরপর আবারও জাতীয় দলের জার্সি গায়ে জড়ালেও পুরোনো জোন্সকে পাওয়া যায়নি। মাত্র ১৮ টেস্টের ক্যারিয়ারে ৫৯ উইকেটের মালিক বনে যাওয়া এই ব্রিটিশ বোলারকে অবসর নিতে হয়েছে আক্ষেপ নিয়েই৷