স্বাগতম, মিস্টার হ্যাগ!

ওল্ড ট্রাফোর্ডে ব্রাইটনের কাছে হারার পর এবার জি টেক কমিউনিটি স্টেডিয়ামে ব্রেন্টফোর্ডের কাছে ৪-০ গোলে হেরে এখন ইপিএলের পয়েন্ট তালিকার একেবারে তলানিতে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। প্রিমিয়ার লীগ চালু হওয়ার পর এর চেয়ে বাজে শুরু তাঁদের কখনো হয়নি। ম্যানেজার এরিক টেন হ্যাগের সামনে আরো কঠিন সময় অপেক্ষা করছে কারণ, সামনের সপ্তাহেই যে নিজেদের মাঠে তাদের মুখোমুখি হতে হবে ইউর্গেন ক্লপের লিভারপুলের। 

ব্রেন্টফোর্ডের প্রতি সম্মান রেখেই বলছি ম্যাচের প্রথমার্ধে ৪-০ তে এগিয়ে যাবে এমন দল তারা নয়। ম্যানেজার টমাস ফ্রাঙ্কের অধীনে গত মৌসুমে চ্যাম্পিয়নশিপ থেকে প্রিমিয়ার লিগে উঠে আসা লন্ডনের এই ক্লাবটি নিজেরাই জানে যে প্রতিপক্ষকে স্টিম রোল করে ম্যাচের ফার্স্ট হাফে বিশাল লিড নিয়ে জয়ের জন্য তারা খেলে না। তাহলে এটা কেন হল? প্রতিপক্ষ ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে বলেই এমনটা সম্ভব হয়েছে। রেড ডেভিলদের বিপক্ষে খেলা এখন অনেক সহজ, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডকে সমীহ করে অন্য দল গুলো খেলবে সেই দিন তো গিয়েছেই এখন ছোট দল গুলোও তাদের দুর্বলতাকে টার্গেট করে নিজেদের ট্যাকটিক্স সাজায়।   

এদিন মিডফিল্ডে ম্যাকটোমিনের বদলে ক্রিশ্চিয়ানে এরিকসেনকে খেলান টেন হাগ। মূলত বল ডিস্ট্রিবিউশনের জন্য এরিকসনকে ডিপ লায়িং প্লে মেকার রোলে খেলানো হয়, তিনি গতিশীল ফুটবলার নন তাই ডিফেন্সিভ ট্রাক ব্যাক বা প্রেসিং এর ক্ষেত্রে রেড ডেভিলরা মিডে কিছুতা দুর্বল হয়ে যায়।

গত মৌসুমে ব্রেন্টফোর্ডের হয়ে খেলেছিলেন এই ড্যানিশ মিডফিল্ডার, টমাস ফ্রাঙ্কের তাই তার সম্পর্কে ভালই ধারনা আছে আর এটাকেই তিনি কাজে লাগান। ব্রেন্টফোর্ডের ম্যানেজার জানতেন এরিকসেনকে আটকে দিলে বল ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের আক্রমনভাগ পর্যন্ত যেতে পারবে না কারণ ফ্রেডের সেই রকম প্লে মেকিং ক্ষমতা নেই। এছাড়াও গত সপ্তাহে ব্রাইটনের প্রেসের কাছে রেড ডেভিলরা কেমন অসহায় ছিল তাও তার অজানা নয়।

ব্রেন্টফোর্ডের মিডফিল্ডার ইয়েনসেন এরিকসনকে ম্যাচজুড়ে চাপে রাখেন এবং দলের অন্যান্য খেলোয়াড়রাও তার পাস লাইন বন্ধ করে দেন। এই ম্যাচেও প্রতিপক্ষের হাই প্রেসের কাছে পরাস্ত হয় ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড এবং নিজেদের হাফেই তারা বল হারাতে থাকে। প্রতিপক্ষের প্রেসের কারণে বার বার চাপে পড়ে যাওয়া রেড ডেভিলদের ডিফেন্ডাররা করতে থাকেন একের পর এক ভুল আর খালি জায়গা পেয়ে ব্রেন্টফোর্ডের খেলোয়াড়রা করতে থাকেন গোলের পর গোল। রেড ডেভিলদের গোলরক্ষক ডেভিড ডি গিয়া সম্ভবত তার ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বাজে কিপিং করেন এই ম্যাচে।

আক্রমনে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ছিল একদম নখদন্তহীন। ডিফেন্সে সতীর্থদের একের পর এক ভুল দেখে হতভাগ্য ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোকে আক্রনভাগে যথাযত সার্ভিস দিতে পারেননি দলের কেউ। ব্রেন্টফোর্ডের রাইট উইং ব্যাক ২০ বছর বয়সী স্কটিশ ফুটবলার অ্যারন হিকি আটকে দেন মার্কাস রাশফোর্ডকে। ইংলিশ এই ফুটবলারের খেলা দেখে আবারো সেই পুরান কথাই বলতে হচ্ছে রাশফোর্ড শুধু বামপ্রান্ত থেকে ড্রিবলিং করে ভিতরে ঢুকে শুধু শুট করতে পারেন, তার খেলায় ভিশন বা ক্রিয়েটিভিটির লেশ মাত্র নেই। 

অপর প্রান্তে খেলা সানচো নিজের দ্বিতীয় মৌসুমে এসেও এখন দলের সাথে মানিয়ে নিতে পারেননি, তিনি যে কি করবেন তা যেন তিনি নিজেই জানেন না। রোনালদোর পেছনে এটাকিং মিড রোলে খেলা ব্রুনো ফার্নান্ডেসের পারফর্মেন্স এই ম্যাচের একমাত্র মন্দের ভাল বলা যায়। 

ব্রেন্টফোর্ড দল হিসেবে দুর্দান্ত খেলেছে তাতে কোন সন্দেহ নেই তবে একই সাথে বলতে হবে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের এগারোজন খেলোয়াড় মাঠে ছিল শুধু, দল হিসেবে তারা খেলতে পারেননি। ম্যানেজার এরিক টেন হাগের বড় চ্যালেঞ্জ হল এই খেলোয়াড়দেরকে একত্রিত করে একটা দল হিসেবে দাঁড় করানো, একটা সিস্টেমের মধ্যে তাদেরকে আবদ্ধ করা। 

ম্যাচ শেষে প্রেস কনফারেন্সে টেন হ্যাগ বলেন, ‘ব্রেন্টফোর্ড দল হিসেবে আমাদের চেয়ে বেশি ক্ষুদার্থ ছিল, আমরা খেলোয়াড়দের ইন্ডিভিজুয়াল ভুলের কারণে গোল খেয়েছি আর এমনটি হলে আপনার যত ভাল প্ল্যানই থাকুক তা কোন কাজে আসবে না। ট্যাকটিকাল ভুলের কারণে আমরা কোন গোল খাইনি, প্রথম দুই গোল বল হারানোর কারণে এবং বাকি গুলোও খেলোয়াড়দের ভুল সিধান্তের কারণে হয়েছে।’

ম্যাচ শেষে সাবেক ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড খেলোয়াড়রা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং গণমাধ্যমে নিজেদের হতাশা প্রকাশ করেন। সাবেক ইউনাইটেড রাইট ব্যাক গ্যারি নেভিল বলেন যে রেড ডেভিলরা দল হিসেবে ধুঁকছে আর তা দল যারা চালান সেই মালিক পক্ষের ভুল সিধান্তের কারণে, তিনি আবারো গ্লেজারদের ক্লাব বিক্রি করে দিতে বলেন তার মতে একমাত্র এর মাধ্যমেই রেড ডেভিলরা ঘুরে দাঁড়াতে পারবে। এছাড়াও অন্যান্য সাবেক ফুটবলার এবং ফুটবল বিশ্লেষকরাও বলেন যে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড এই ফলাফল তাদের হতবাক করেছে।  

কিছুদিন আগেই সাবেক ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড পরিচালক এবং ব্রিটিশ ব্যবসায়ী মাইকেল নাইটন ক্লাবটিকে কেনার জন্য বিড করবেন বলে খবরে আসেন। এসময় অনেকেই বলেন যে এটা তো আর ফুটবল ম্যানেজার না যে অমুক কনসোর্টিয়াম ক্লাব কিনতে আগ্রহী তাই তারা হোস্টাইল বিড করলো আর ক্লাব কিনে নিল। তবে বর্তমানে রেড ডেভিলদের কুরুণ অবস্থার কারণে তার সমর্থন বাড়বে বই কমবে না এই কথা বলাই যায়।

বছরের পর বছর ব্যাবসায়ীক দিকটাকে প্রাধান্য দিয়ে খেলোয়াড় কেনা এবং ক্লাবের ম্যানেজারকে তার সিস্টেমের চাহিদা অনুযায়ী খেলোয়াড় কিনে দিতে ব্যার্থ ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের মালিক গ্লেজারদেরদের প্রতি ক্লাব সমর্থকরা এখন চরম ক্ষিপ্ত। গত মৌসুমে লিভারপুলের বিপক্ষে ম্যাচের হাফ টাইমে ওল্ড ট্রাফোর্ড ছেড়ে যায় রেড ডেভিল সমর্থকরা এবারো যে এমনটা হবে না তা কে বলতে পারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link