ছোট্ট নাঈম শেখ। খেলা ৭১-এই প্রচারিত প্রতিবেদনের সুবাদে তাঁকে আমরা সবাই চিনি। প্রতিদিন তিনি মিরপুর হোম অব ক্রিকেটের সীমানা প্রাচীর ধরে দাঁড়িয়ে থাকেন। ছোট্ট শিশুর মনে একটা বিশাল জায়গা জুড়ে এখন কেবল ক্রিকেটেরই বসবাস। তিনিও একদিন তারকা ক্রিকেটারদের মত বিশ্ব মাতাতে চান ব্যাট আর বলের ঝংকারে।
তবে এর আগে তাঁর অনেক দিনের ইচ্ছে, তিনি অন্তত দেখা করবেন সব ক্রিকেটারদের সাথে। বিশেষ করে সাকিব আল হাসানের সাথে। কেননা সাকিবই তো তাঁর সবচেয়ে প্রিয় খেলোয়াড়। তাই তো নিজের নামটা নিজেই বদলে রেখেছেন সাকিব আল হাসান। ঠিক কতটা মত্ত হলে ছোট্ট শিশু এমন করে!
হঠাৎ করেই এলো খবর। সাকিব আল হাসান, মানে বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার হয়েছেন টি-টোয়েন্টি দলের অধিনায়ক। যেহেতু তিনি অধিনায়ক হয়েছেন এবং সামনেই এশিয়া কাপ তিনি নিশ্চয়ই আসবেন হোম অব ক্রিকেটে। এই ক্ষুদ্র বিষয়টা ছোট্ট নাঈম ঠিক আন্দাজ করে ফেললেন। মাথার উপর তখন মেঘের আনাগোনা। সেসব আর দেখার সময় কই?
মাঠে তো এসেছেন সাকিব। তাঁকে তো এক নজর দেখতেই হবে স্বঘোষিত সাকিবের। এক পলক দেখার কি আকুতি তাঁর। মাঠের বাইরে এসেই জানতে পারেন সাকিব এসেছেন মাঠে। অনুশীলনও করছেন তিনি। উতলা হয়ে গেল নাঈম। ফন্দি ফিকির করতে লাগলেন। এক নজর, একটিবার অন্তত সাকিবকে সামনে থেকে দেখা চাই তাঁর।
হতাশার চাদর তাঁকে জড়িয়ে ফেলছে। তখনই তিনি খুঁজে পেলেন মাঠের ঢোকার এক পন্থা। সোজা চলে গেলেন গ্যালারিতে। সেখানে দাঁড়িয়ে বসে নাঈম সময় কাটাল। অপেক্ষা সে মাহেন্দ্রক্ষণের। উৎকণ্ঠা নিশ্চয়ই ওই ছোট্ট শরীরটাও আন্দাজ করতে পেরেছিল।
সে নিজেকে আর একস্থানে ধরে রাখতেই পারছিল না। কখনো আসন ছেড়ে উঠে দাঁড়ায়। কখনো আবার সামনে এগিয়ে গ্রিলের ফাঁক দিয়ে ছোট দুই নয়ন খুঁজে ফেরে বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারকে। মাঠের ঐ লোহার গ্রিলগুলো তখন তাঁর কাছে নিশ্চয়ই মনে হচ্ছিল পৃথিবীর সবচেয়ে অবাঞ্ছিত কিছু। তবুও এপারে দাঁড়িয়ে স্রেফ সবুজ ঘাসের পানে অপলক চেয়ে থাকে খুদে নাঈম।
ইচ্ছেটা কি তবে আর পূরণ হবে না? না, এ যাত্রায় খুদে সাকিবের আর দেখা হল না বিশ্ব জয় করা সাকিবকে। একরাশ আক্ষেপ নিয়েই মাঠ ছাড়েন নাঈম। কেননা সে যতক্ষণে মাঠে ঢোকার সুযোগ পেয়েছে ততক্ষণে সাকিব নিজের অনুশীলন সেড়ে মাঠ ছেড়েছেন। হায়রে একটি নজর!
তবে ছোট নাঈম শেখ নিশ্চয়ই এখানে দমে যাবে না। সে বরং আরও কয়েকবার প্রচেষ্টা চালাবে সাকিবকে দেখার। কেননা সে তো অদম্য। সেই তো বলেছিল ‘রিকশা চালিয়ে হলেও ব্যাট কিনব।’
নাঈমকে রিকশা চালাতে হবে না। ব্যাট সে পাবেই। একদিন সাকিবেরও দেখা পাবে নিশ্চয়ই। দেখা তাঁর পেতেই হবে। এই নাঈমরাই তো আগামী দিনের সাকিব!