প্রকৃতি নাকি শূন্যস্থান শূন্য রাখে না। কেউ না কেউ হয়ত এসে সে জায়গা করে দখল। তবে স্মৃতি আর প্রভাব তো নিশ্চয়ই মুহূর্তেই বিলীন হয়ে যায় না। শূন্যস্থান তৈরি হওয়া থেকে শুরু করে সেটা পূর্ণ হওয়া এবং মানিয়ে নেওয়া, সেটাও তো একটা দীর্ঘ প্রক্রিয়া। সে সময়টুকু তো প্রকৃতি নেয়। আর তখনই তো বাড়ে স্মৃতিকাতরতা। আর এই পৃথিবীর সবকিছুই তো ভিন্ন সত্ত্বা। শূন্যস্থানে আসা নতুন কেউ হয়ত ছাপিয়ে যাবে নয়ত রয়ে যাবে যোজন দূরে।
তেমনই এক শূন্যস্থানের তৈরি হয়েছে স্প্যানিশ ক্লাব রিয়াল মাদ্রিদের মিডফিল্ডে। দীর্ঘ একটা সময় ধরে লুকা মদ্রিচ, টনি ক্রুস আর ক্যাসেমিরো ত্রয়ী নির্ধারণ করে দিয়েছে লস ব্ল্যাঙ্কোসদের খেলার গতিপথ আর ফলাফল। তবে অবশেষে সে ত্রয়ীতে এসেছে ভাঙন। ভাবনায় ছিল মদ্রিচ কিংবা ক্রুস। কিন্তু পরীক্ষায় আসা সিলেবাসের বাইরের প্রশ্নটা ছিল ক্যাসেমিরো। রিয়াল মাদ্রিদের ‘ট্যাঙ্ক’।
২০১৪-১৫ মৌসুমে তিনি এসেছিলেন মাদ্রিদ ডেরায়। এরপর ক্রমান্বয়ে হয়েছেন বিশ্বসেরা। করেছেন গোটা ফুটবল বিশ্বে রাজ। জিতেছেন সম্ভাব্য সবকিছুই। ১৮ খানা শিরোপা জয়ের সাক্ষী হয়ে তিনি ছুটে গেলেন নতুন এক চ্যালেঞ্জের পানে। সেখানে ক্যাসেমিরোর জন্য ঠিক কি অপেক্ষা করছে, তা কেবল সময়ই বলে দেবে। তবে মাদ্রিদ মিডফিল্ডে যে শূন্যতার সৃষ্টি হল সেটা পূরণ করবে কে?
পূরণ হয়ত হয়ে যাবে। রিয়াল মাদ্রিদ ইউরোপ ক্লাব ফুটবলের ইতিহাসে সবচেয়ে সফলতম ক্লাবগুলোর একটি। সে নিয়ে তর্ক হওয়া অবান্তর। সে ক্লাবটা খুব ভাল করেই জানে শূন্যস্থান ঠিক কি করে করতে হয় পূরণ। কেননা এবারই তো প্রথম নয়। এর আগেও তো এমন ‘ভয়েড’ পরিস্থিতি মোকাবেলা করেছেন ক্লাবটি। শুরুটা সম্ভবত ফার্নান্দো রেডন্ডোকে দিয়ে। একটা সময় তিনিও ছিলেন দলের অন্যতম কাণ্ডারি।
মাদ্রিদের সপ্তম ও অষ্টম ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়ন হওয়া দলে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছিলেন তিনি মধ্যমাঠ থেকে। তবে একটা সময় তাঁরও যাওয়ার ক্ষণ চলে আসে। আর মাদ্রিদ কখনোই কোন খেলোয়াড়কে আটকে রাখার চেষ্টাটা করে না। এটাই বোধহয় মাদ্রিদের শিরোপা জয়ের দর্শন। একবার মন থেকে উঠে গেলে সেখানে থেকে যাওয়াটা স্রেফ বেইমানি। যদিও রেডন্ডো নাকি থাকতে চেয়েছিলেন। তবে কর্তারে তাঁকে রাখেননি। সেবারও তৈরি হয়েছিল এক শূন্যস্থান।
সে শূন্যস্থান পূরণ করতে ফ্রেঞ্চ ফুটবলার ক্লদ মাক্কেলেলেকে দলে ভিড়িয়েছিল স্প্যানিশ ক্লাবটি। তিনিও ক্রমশ হয়ে উঠেছিলেন ক্লাবের একজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। তবে পারিশ্রমিক নিয়ে বনিবনা না হওয়ায় তিনিও নিলেন বিদায়। যোগ দিয়েছিলেন চেলসিতে। তবে তাঁর প্রস্থান ভুগিয়েছিল মাদ্রিদকে। এমনকি ক্ষোভ ঝেড়েছিলেন মাদ্রিদ সতীর্থ জিনেদিন জিদান। এরপর একটা লম্বা সময় ভুগেছে দলটি। তবে শূন্যস্থান ঠিক পূরণই হচ্ছিল না।
এরপর ত্রাণকর্তা হয়ে ২০০৯ সালে শুরু হওয়া গ্যালাক্টিকোস যাত্রায় যুক্ত হন জাভি আলোনসো। তিনি এসেই ক্লাবটির মধ্যমাঠের শূন্যস্থান পূরণ করেছেন। মধ্যমাঠের হৃদপিণ্ডে পরিণত হয়েছিলেন তিনি। রিয়াল মাদ্রিদের লা ডেসিমা জয়ে রেখেছিলেন গুরুত্বপূর্ণ অবদান। এরপর হঠাৎ করেই বাজে বিদায় ঘন্টা। তবে আগের বারের পরিস্থিতি বিবেচনায় এবার মাদ্রিদ ছিল প্রস্তুত। দলে নিয়ে এসেছিল টনি ক্রুস আর ক্যাসেমিরোকে। এরা দু’জন আর মদ্রিচ মিলে তো সাদা জার্সিটাকে নিয়ে গিয়েছেন অনন্য এক উচ্চতায়।
ক্যাসেমিরোর বিদায়ের আগেও মোটামুটি প্রস্তুতই বলা যায় রিয়াল মাদ্রিদকে। তরুণ দুই ফ্রেঞ্চ মিডফিল্ডার রয়েছে দলে। আলাপ আলোচনা আর বহুদলের মুখ থেকে ছিনিয়ে এনেছে এডওয়ার্ড কামাভিঙ্গা ও অরেলিয়ন শুয়েমেনিকে। মধ্যমাঠের দায়িত্বভারটা এখন এই তরুণদের কাঁধে এসে পড়বে। তবে তাঁদের থিতু হতে সময় লাগবে। সে সময়ে রিয়াল মাদ্রিদ অন্তত পথ হারাবে না সে প্রত্যাশাই হয়ত করবে সমর্থকেরা। তবে সময় বলে দেবে ক্যাসেমিরোর শূন্যস্থান ঠিক কতটুকু প্রভাব ফেলে।