ডোমিঙ্গো যুগ যেমন ছিল

একটা অস্থির সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। বিশেষ করে মাঠের বাইরের বিভিন্ন ইস্যুতে বারবার সরগরম হয়ে উঠছে ক্রিকেটাঙ্গন। চলতি মাসের কথাই বলা যাক, এশিয়া কাপের স্কোয়াড ঘোষণা, সাকিবের বেটিং সাইট চুক্তির পর টি-টোয়েন্টিতে নতুন টেকনিক্যাল কনসালট্যান্ট নিয়োগ – সব মিলিয়ে আলোচনা, সমালোচনা বিরাজমান সর্বত্র।

আর এবার স্রোতে গা ভাসালেন বাংলাদেশ দলের হেড কোচ রাসেল ডোমিঙ্গো। বাংলাদেশ ক্রিকেট এবং বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সাথে সম্পর্ক শেষ করার ইঙ্গিত দিলেন তিনি। এখনো আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত না আসলেও বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে এটা ইতোমধ্যে পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে যে রাসেল ডোমিঙ্গোকে টাইগারদের কোচ হিসেবে দেখা যাবে না।

বাংলাদেশ ‘এ’ দল, হাইপারফরম্যান্স ইউনিটের কোচ হতে আবেদন করেছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার সাবেক কোচ রাসেল ডোমিঙ্গো। কিন্তু তৎকালীন সময়ে হেড কোচ না থাকায় জাতীয় দলের কোচের দায়িত্ব দেয়া হয় তাঁকে। অনেকটা হঠাৎ করেই বাংলাদেশ জাতীয় দলের দায়িত্ব নেয়ার পর ক্রিকেট পাড়ায় পরিচিত হয়ে উঠতেও সময় লাগেনি তাঁর।

কিন্তু অনেক ক্রিকেট ভক্ত এমন হঠকারী নিয়োগ মানতে পারেনি। ফলে শুরু থেকেই দেশের ক্রিকেটপ্রেমীদের বিশাল একটা অংশ সবসময়ই চেয়েছে রাসেল ডোমিঙ্গোকে বিদায় বলতে। তাই তাঁর বিদায়টা তাদের প্রত্যাশা পূরণ করেছে।

কিন্তু আসলেই কি রাসেল ডোমিঙ্গো বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের জন্য অনুপযুক্ত ছিলেন, তিনি কি তাঁর দায়িত্বে পুরোপুরি ব্যর্থ? পরিসংখ্যান অবশ্য তেমনটা বলে না, তিন ফরম্যাট মিলিয়ে এই প্রোটিয়া কোচের অধীনে বাংলাদেশ মোট ৯৩টি ম্যাচ খেলেছে। এর মাঝে ৪১ ম্যাচে জিতেছে বাংলাদেশ, অন্যদিকে পরাজিত হয়েছে ৪৯ বার। বাকি দুইবার ড্র-তেই নিষ্পত্তি হয়েছে, আর একম্যাচ হয়েছে পরিত্যক্ত। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এমন সংখ্যাগুলো হেলাফেলা করার মত নয়।

দেশের চেয়ে বিদেশের মাটিতেই রাসেল ডোমিঙ্গোর উল্লেখযোগ্য সাফল্য এসেছে ৷ ভারতের বিপক্ষে তাদের মাটিতে প্রথমবারের মত টি-টোয়েন্টি জয়, নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে কিউই কন্ডিশনে প্রথম টেস্ট জয়, দক্ষিণ আফ্রিকাকে তাদের দেশে সিরিজ হারানো প্রোটিয়া কোচের অন্যতম বড় অর্জন।

অবশ্য তাঁর ব্যর্থতাও কোনভাবে কম নয়। ২০২১ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভরাডুবি, ঘরের মাঠে ওয়েস্ট ইন্ডিজের খর্বশক্তির দলের কাছে টেস্টে হোয়াইট ওয়াশের দায়ভার এড়াতে পারেন না ডোমিঙ্গো।

ক্রিকেটে অবশ্য পরিসংখ্যানের বাইরেও দেখার অনেক কিছু আছে। এক্ষেত্রে রাসেল ডোমিঙ্গো তরুণদের যেভাবে সাহায্য করেছেন সেটা কোচ হিসেবে তাঁর মুন্সিয়ানা প্রমাণ করে। তাঁর সময়েই লিটন দাস নিজের সেরা ফর্ম খুঁজে পেয়েছে, আফিফ-মিরাজরা দলের নির্ভরযোগ্য সদস্য হিসেবে গড়ে উঠেছে। হ্যাঁ, এসবের পেছনে মূল অবদান নিশ্চয়ই তাদের নিজেদেরই; কোচের কৃতিত্ব মোটেও অস্বীকার করা যায় না।

রাসেল ডোমিঙ্গো তাঁর সর্বশেষ সাক্ষাৎকারে এই ব্যাপারটি তুলে ধরেছেন। তিনি বলেন, আমি ওদের (তরুণদের) বেশি গুরুত্ব দিয়েছি। স্বাধীনচেতা হওয়ার সুযোগ করে দিয়েছি। নিজের পারফরম্যান্সের দায়ভার নিতে বলেছি। এখন ওরা সরাসরি টিম মিটিংয়ে কথা বলে। নিজেদের মতামত ভাগাভাগি করে। ওরাও যে গুরুত্বপূর্ণ, সেটা এখন তারা বোঝে।

টিম ম্যানেজম্যান্ট থেকে বলা হয়েছে রাসেল ডোমিঙ্গো ঠিক আক্রমণাত্বক কোচ নয় ৷ কথাটা আসলে ভুল নয়, আগ্রাসী রূপে কখনো এই প্রোটিয়াকে দেখা যায় নি। সত্যি বলতে আধুনিক ক্রিকেটে আগ্রাসী গেমপ্ল্যান বড্ড জরুরি ছিল।

সবমিলিয়ে রাসেল ডোমিঙ্গোর সময়টাতে বাংলাদেশ আহামরি ভালো না করলেও ধীরে ধীরে উন্নতি করতে শুরু করেছিল। সামনেই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ, আগামী বছর ওয়ানডে বিশ্বকাপ – এসব মেগা ইভেন্ট নিয়ে নিশ্চয়ই অনেক আগে থেকে পরিকল্পনা করেছেন রাসেল ডোমিঙ্গো; তাই তাঁর আকস্মিক বিদায়ের ফলে সব পরিকল্পনা শূণ্য থেকে আবার শুরু করতে হবে টাইগারদের।

চান্দিকা হাতুরুসিংহে, স্টিভ রোডস কিংবা রাসেল ডোমিঙ্গো কেউই আসলে প্রত্যাশিত ভাবে বিদায় বলতে পারে নি। তাই নতুন কোচ নিয়োগের ক্ষেত্রে একটু তো সমস্যায় পড়তেই হবে বিসিবিকে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link