নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সবশেষ টেস্ট সিরিজে ব্ল্যাক ক্যাপ পেসারদের বিপক্ষে বেশ ভুগেয়েছিলেন স্টিভেন স্মিথকে। নির্দিষ্ট করে বলতে গেলে ওয়াগনারের শর্ট বলে স্মিথের অসহায়ত্ব ছিল চোখে পরার মত। নিজেকে মেলে ধরতে পারছিলেন না কোনোভাবেই। পাঁচ ইনিংসের তিনবারই ওয়াগনারের শিকার। তিন ম্যাচের ওই সিরিজে দুটি ফিফটি করলেও ঠিক স্মিথসুলভ ব্যাটিং দেখা যায় নি। ওই সফরে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে একমাত্র ওয়ানডেতেও সুবিধা করতে পারেনি স্মিথ।
সিডনিতে এই মূহুর্তে বোর্ডার-গাভাস্কার সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডে চলছে। সিরিজ শুরুর কয়েকদিন আগে ধারণা করা হচ্ছিল স্মিথকে শর্ট বলের কৌশলেই বোতলবন্দী করতে পারে কোহলির দল। সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে স্মিথ বলেছিলেন, ‘আমার জন্য এটা (বাউন্সার সামলানো) নাটকীয় কিছু নয়। আমি স্রেফ ম্যাচ খেলতে নামি, কন্ডিশন পর্যালোচনা করি, বোঝার চেষ্টা করি তারা আমাকে কীভাবে আউট করার চেষ্টা করছে এবং সেটার মোকাবিলা করি। যেটা বলতে চাচ্ছি, অনেক দল এই শর্ট বলের কৌশল ব্যবহার করতে চেষ্টা করেছে। কিন্তু ওয়াগনার যেভাবে পেরেছে, বাকিরা তা পারেনি। ওটা ওয়াগনারের দারুণ স্কিল।’
এরপর ভারতীয় পেসারদের চ্যালেঞ্জ জানিয়ে এই অজি ব্যাটিং জিনিয়াস জানিয়েছিলেন, ‘দলগুলো যদি আমাকে এভাবে আউট করার চেষ্টা করে, তাহলে হয়তো আমাদের দলেরই সুবিধা হবে। কারণ টানা শর্ট বল করতে গিয়ে অনেকেরই শরীরের ওপর ধকল যায়। আমি জীবনে শর্ট বল অনেক খেলেছি এবং খুব বেশি সমস্যা হয়নি। আমার মনে হয়, স্রেফ অপেক্ষা করুন, দেখুন কী হয়।’
এরপর কয়েকদিন অপেক্ষার পর সিডনিতে বোর্ডার-গাভাস্কার সিরিজের প্রথম ওয়ানডের দিকে একটু নজর দেওয়া যাক। টসে জিতে ব্যাটিং সিদ্ধান্ত নিল ভারত। অ্যারন ফিঞ্চ আর ডেভিড ওয়ার্নারের ব্যাটে অজিদের উড়ন্ত সূচনা।
২৮তম ওভারের পঞ্চম বলে ওয়ার্নারের বিদায়ের পর উইকেটে আসেন স্মিথ। শুরুটা একটু দেখেশুনে। প্রথম আট বলে নিলেন কেবল চারটি সিঙ্গেল। এরপর ভারতীয় লিগস্পিনের সেনসেশনাল যুঝবেন্দ্র চাহালকে ডাউন দ্য উইকেটে এসে মিড উইকেটের উপর দিয়ে চার মেরে শুরু। কখনো রবীন্দ্র জাদেজা, কখনো নভদিপ সাইনি, হারডিক পান্ডেয়া জাসপ্রিত বুমরাহ বাদ যায়নি কেউই।
সময়ের সাথে সাথে উইকেটের চারিদিকে স্ট্রোকের পসরা সাজান। কখনো রবীন্দ্র জাদেজা, কখনো নবদ্বীপ সাইনি, হার্দিক পান্ডিয়া, জাসপ্রিত বুমরাহ বাদ যায় নি কেউই। কখনো সাইনিকে পুল শটে খানিকবাদেই সামিকে ফ্লিক করে মিড উইকেট দিয়ে সীমানা ছাড়া মাত্র ৩৬ বলে ফিফটির দেখা পান
কখনো নবদ্বীপ সাইনিকে পুল। ফিফটির পর আরো আগ্রাসী স্মিথের ব্যাট। ইনিংসের প্রথম চার মেরেছিলেন চাহালকে। সেই চাহালের বলেই লং অফের উপর দিয়ে মারলেন ইনিংসের প্রথম ছয়। চাহালের পরের ওভারে আবারো স্লগ সুইপে মিড উইকেটের উপর দিয়ে হাওয়ায় ভাসিয়ে দরির ওপারে। চাহালকে যেন রীতিমতো পেয়ে বসলেন।
এরপর মোহাম্মদ শামিকে স্কয়ার লেগ দিয়ে আর সাইনিকে কভার দিয়ে আরো দুটি ছয়। ৪৯.৩ তম টেলিভারিতে শামির বলে আউট হওয়ার আগে স্মিথের নামের পাশে ৬৬ বলে ১০৫। এই টর্নেডো ইনিংস সাজিয়েছেন এগারো চার আর চার ছয়ে। শেষ পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়া ম্যাচ জিতে ৬৬ রানে। ম্যাচ সেরা স্টিভেন স্মিথ।
এবার আজ দ্বিতীয় ওয়ানডেতে স্মিথের ইনিংসের কাটাছেঁড়া করা যাক। আজও টসে জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন অজি অধিনায়ক অ্যারন ফিঞ্চ। প্রথম ওয়ানডের মত এই ম্যাচেও অজিদের দারুণ শুরু। ১৪১ রানের থামে উদ্বোধনী জুটি। আগের দিন স্মিথ যেখানে থেমেছিলেন এই ম্যাচে শুরু করলেন ঠিক সেখান থেকেই। যতক্ষণ উইকেটে থাকলেন ভারতীয় বোলারদের উপর যেন রোলারকোস্টার চালালেন। যেন এলেন দেখলেন আর জয় করলেন।
পান্ডিয়ার বলে থার্ডম্যানে সামির হাতে ক্যাচ দেবার আগে খেললেন আগের দিন ফটোকপি একটা ইনিংস ঠিক ৬২ বলে সেঞ্চুরি এই ইনিংসেও। ‘আউটস্ট্যান্ডিং, ইনক্রিডেবল, আনস্টপেবল’ এই স্টিভেন স্মিথ কোথায় গিয়ে থামবেন!
স্টিভেন স্মিথ কোথায় গিয়ে থামবেন, সেটা জানতে সময়ে অপেক্ষা করার কোনো বিকল্প নেই। তবে, এই সময়ে ঘোরতর বিপদে আছে ভারতীয় দল। টানা দু’টো বিগ স্কোরিং ম্যাচের দু’টোতেই হারলো বিরাট কোহলির দল। আসলে দু’দলের পার্থক্যটা গড়ে দিলেন ওই স্টিভেন স্মিথ।