আওয়াজে বাবর!

দেশটার কিছুই নেই, না আছে শক্তপোক্ত অর্থনীতি, মাঝেমধ্যেই আন্তর্জাতিক স্তরে হাত পাততে হয়, আর না আছে শিক্ষা, স্বাস্থ্য সহ অন্যান্য পরিকাঠামো। গোটাবিশ্ব সন্ত্রাসবাদের আঁতুড়ঘর বলে এক ডাকে চেনে তাঁদের। থাকার মধ্যে আছে বলতে, জোর করে দখল করে রাখা এক টুকরো কাশ্মীর, টুকটাক শুকনো ফল, মুঘল খাবারদাবার আর… ক্রিকেট!

দেশের ছেলে ছোকরা থেকে শুরু করে বুড়োবুড়ি অবধি সবার মাথায় একই চিন্তা… কবে গোটা কাশ্মীরের দখল পাওয়া যাবে, আর ক্রিকেট মাঠে প্রতিবেশী ভারতকে নাকানিচোবানি খাওয়ানো যাবে। প্রথম ইচ্ছে পূরণ হওয়ার কোনও সম্ভাবনাই দেখা যায় না, স্বপ্ন-বাস্তবের মাঝে চীনের প্রাচীর হয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন ভারতীয় জওয়ানরা। বিক্রম বাতরা, মনোজ পাণ্ডে, যোগেন্দ্র সিং যাদবদের দাপটে চোখের জল শুকোতে পারে না আট থেকে আশির। একমাত্র সহায় সম্বল পড়ে থাকে বাইশ গজে।

সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপের জেরে সেই স্বপ্ন দেখার সুযোগও কমে এসেছে বিগত এক দশকে। মুম্বাই হামলার পর আইপিএলেও খেলার ছাড়পত্র পান না পাকিস্তানি ক্রিকেটাররা। দুই দেশের ক্রিকেট দ্বৈরথ বলতে এশিয়া কাপ, ওয়ার্ল্ড কাপ,চ্যাম্পিয়নস ট্রফির মতো মঞ্চ৷ আর তাতে রেকর্ড ঘাঁটলে দেখা যাবে, ডাহা ফেলুরাম পাকিস্তান। বিশ্ব ক্রিকেটের বড় মঞ্চে ভারতের চাপ নিতে পারে না নিজেদের মোঘল-পাঠানদের বংশধর বলে দাবি করা পাকিস্তানিরা৷ কখনও শচীন-বিরাট কখনও বা গম্ভীর-ইরফান পাঠান ছারখার করে দেন সীমান্তের ওপারের স্বপ্ন৷

গত বছর কোনও এক ইন্টারভিউতে শুনেছিলাম, শোয়েব আখতার বলছেন, বড় মঞ্চে ভারতের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের কোনও রোল মডেল নেই। বোলিংয়ে যাও বা ইমরান-ওয়াসিমকে দেখে অনুপ্রাণিত হন তরুণরা, ব্যাটিংয়ে কেউ নেই, কেউই নেই। আর ঠিক এই অচলায়তনই ভেঙে ফেলেছেন বাবর। যে দেশ শুরু থেকেই ম্যাচ জিততে ভরসা রাখত বোলিংয়ের ওপর, সেই দেশে ব্যাটিং নবজাগরণ এনেছেন লাহোরের তরুণ। সৈয়দ আনোয়ার, জাভেদ মিঁয়াদাদ, ইনজামাম উল হকের কথা মাথায় রেখেই বলা যায়, তাঁর মতো চওড়া ব্যাট পাকিস্তান নিজেদের ইতিহাসে আর দুটো পায়নি।

নিন্দুকরা বলেন, বাবর শুধুমাত্র ছোট দলের বিরুদ্ধে সফল; বিপক্ষে জিম্বাবোয়ে-নেদারল্যান্ডস দেখলেই একমাত্র ঝলসে ওঠে তাঁর ব্যাট। বাবর নিজে এই প্রসঙ্গে তেমন কিছু বলেননি, উত্তর দিয়েছে কাশ্মীরি উইলো! অ্যাডিলেডে অজিদের বিরুদ্ধে, ইংল্যান্ডে ইংরেজদের বিরুদ্ধে, বিশ্বকাপে নিউজিল্যান্ডের মতো শক্তিশালী বোলিংয়ের বিরুদ্ধে সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছেন তিনি। নিন্দামন্দ তাতেও শেষ হয়নি যদিও। সোশ্যাল মিডিয়ায় দেখি, একটা বড় অংশের মানুষ অভিযোগ করেন, বাবর আজম বড্ড স্লো ব্যাটিং করেন।

বিশেষত টি-টোয়েন্টিতে তাঁর মন্থর ব্যাটিং একেবারেই চলে না। কথাটা একদিক দিয়ে ঠিকই। আজকের দিনে কেউ ৫০ বলে ৬০ রানের ইনিংস খেললে তা আত্মঘাতী ইনিংসের পর্যায়ে পড়ে। তবে শতচেষ্টাতেও বাবরকে দোষ দিতে পারি না আমি। দলের ভরসাযোগ্য ব্যাটার বলতে তিনিই। রিজওয়ান, আসিফ আলিরা আছেন ঠিকই, তবে কখনও যদি হুড়মুড়িয়ে উইকেট পড়ে যায়? পাকিস্তানের এই রোগ তো আর নতুন নয়, বহুদিনের৷ কাজেই বাবরকে একটা প্রান্ত ধরে থাকতেই হয়। সেই বুঝে গোটা টিম ব্যাট করতে নামে৷ বাইশ গজে তিনি থাকলে সব ঠিক, আউট হলেই হিসেব ঘাঁটতে শুরু করে।

শোয়েব আখতার আক্ষেপ করেছিলেন না? বড় মঞ্চে ভারতের বিরুদ্ধে রোল মডেল নেই বলে? এইবার কিন্তু রয়েছে! গতবছর এই বাবরের নেতৃত্বেই ভারতকে দুরমুশ করেছিল পাকিস্তান। রান তাড়া করতে নেমে ক্রিজ কামড়ে পড়েছিলেন বাবর, দশ উইকেটে হেরেছিলাম আমরা। আজ আবার মুখোমুখি, ১৩০ কোটি মানুষ চায় গত বছরের হারের শোধ তুলুক টিম ইন্ডিয়া। অধিনায়ক রোহিত শর্মাও তেমনটাই চান নিশ্চয়ই! সেই লক্ষ্যে খেলার শুরুতেই বিপক্ষ তথা বিশ্বের এই মুহূর্তের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যানের উইকেট তুলে নিতে চাইবে ভারত, তুলতেই হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link