আরো একবার ভারত-পাকিস্তান ম্যাচের অপেক্ষায় রয়েছে ক্রিকেটপ্রেমীরা। ২০২২ সালের এশিয়া কাপে দ্বিতীয়বারের মত মুখোমুখি হতে যাচ্ছে দুই প্রতিবেশি দেশ। শেষ দুই দেখায় দুই দল-ই জিতেছে একবার করে। তাই এখন এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ এসেছে তাদের সামনে।
রবিবারের এই মহাদ্বৈরথে দুই দলেরই চিন্তার কারণ তাদের টপ অর্ডার। একদিকে ভারতের লোকেশ রাহুল, রোহিত শর্মাকে এখন পর্যন্ত সাবলীলভাবে ব্যাটিং করতে দেখা যায়নি। আবার পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে বিরাট কোহলি রান পেলেও স্বাচ্ছন্দ্যে ছিলেন না কখনোই। এছাড়া পিচ স্লো হয়ে গেলে অতি রক্ষণাত্বক হয়ে যায় ভারতের টপ অর্ডার।
তুলনামূলক খর্বশক্তির হংকংয়ের বিপক্ষে সুরিয়াকুমার যাদবের ব্যাটে রক্ষা পেয়েছিল ভারত। এই ব্যাটার মাঠে আসার আগ পর্যন্ত টি-টোয়েন্টির সাথে মানানসই গতিতে রান তুলতে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছিলো ভারতের টপ অর্ডার। বিশেষ করে লোকেশ রাহুল ৩৯ বলে ৩৬ রানের বেমানান একটি ইনিংস খেলেছিলেন।
তাই পাকিস্তান ম্যাচকে সামনে রেখে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে ভারতের টপ অর্ডার নিয়ে। কোচ রাহুল দ্রাবিড় এই ম্যাচে ভিন্ন টপ অর্ডার নির্বাচন করবেন কি না সেটিই এখন আলোচনার বিষয়। কেননা রাহুল, রোহিতরা প্রত্যাশিত সূচনা এনে দিতে পারেননি গত দুই ম্যাচেই। তবে রোহিত আর কোহলি বাদ পড়বেন না সেটা নিশ্চিত, রাহুলকেও হয়তো আরো একবার বাজিয়ে দেখতে চাইবে টিম ম্যানেজমেন্ট।
অন্যদিকে পাকিস্তানের সমস্যা প্রায় একই। বাবর আজম আর মোহাম্মদ রিজওয়ানের জুটি রান করলেও দুইজনের স্ট্রাইক রেট বড্ড সাদামাটা। তাই রান তাড়ায় কার্যকর হলেও আগে ব্যাট করতে হলে পাকিস্তানের জন্য বিপদের কারণ হয়ে যায় এই জুটির ধীরগতির ব্যাটিং।
টপ অর্ডার ছাড়াও ভারতের জন্য শঙ্কার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে রবীন্দ্র জাদেজার ইনজুরি। এই অলরাউন্ডের পরিবর্তে অ্যাক্সার প্যাটেল হয়তো দলে জায়গা পাবেন, তবে দলীয় ভারসাম্য তাতে ব্যাহত হবে সেটা এক প্রকার নিশ্চিতই বটে। আবার রবিচন্দ্রন আশ্বিন কিংবা দীপক হুদা একাদশে জায়গা পেলেও পেতে পারেন।
এছাড়া হার্দিক পান্ডিয়া, দীনেশ কার্তিক এবং রিষাভ পান্তের মধ্যে দুইজনকে সাধারণত একাদশে সুযোগ দেয় ভারত। পারফরম্যান্স বিবেচনায় পান্ডিয়া এবং কার্তিক সুযোগ পেলে ভারতীয় ব্যাটিং লাইনআপে দেখা দেয় বামহাতি ব্যাটসম্যানের শূণ্যতা। পাকিস্তানের বিপক্ষে আগের ম্যাচে জাদেজাকে চার নম্বর পজিশনে ব্যাট করতে পাঠিয়ে সেই শূন্যতা পূরণ করেছিল টিম ইন্ডিয়া। কিন্তু এবার জাদেজা নিজেই খেলার বাইরে ছিটকে গিয়েছেন।
এসব ছাড়াও পেস আক্রমণের অনভিজ্ঞতা ভারত এবং পাকিস্তানের দুশ্চিন্তার কারণ। বিশেষ করে জাসপ্রিত বুমরাহ এবং হার্শাল প্যাটেল না থাকায় ভারতকে তরুণ আভেশ খান এবং আর্শ্বদীপ সিংয়ের উপর অতিরিক্ত নির্ভর করতে হয়। হংকংয়ের বিপক্ষে এই দুইজন-ই ছিলেন বড্ড খরুচে।
একইভাবে শাহিন শাহ আফ্রিদি ইনজুরির কারণে ছিটকে পড়ায় পাকিস্তানের ফাস্ট বোলিং বিভাগে এখন অভিজ্ঞতার অভাব প্রকট। পেসারদের অনভিজ্ঞতার কারণেই গ্রুপ পর্বে ভারতের কাছে হেরেছিল পাকিস্তান। সেই ম্যাচের শেষদিকে পাকিস্তানের বোলারদের অনিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ের ফায়দা লুটেছিল হার্দিকরা।
শক্তি আর দুর্বলতা মিলিয়ে ভারত, পাকিস্তান দুই দল-ই এখন প্রায় সমান সমান ৷ ভারত যেমন পাকিস্তানকে গ্রুপ পর্বে হারিয়েছিল, তেমনি বাবর আজমের দল হংকংকে ১৫৫ রানে হারিয়ে নিজেদের আধিপত্য দেখিয়েছিল। এছাড়া গত এক বছরের সাম্প্রতিক ফর্ম বিবেচনায় কাওকে এগিয়ে রাখাটাও সমীচীন হবে না।
স্কোয়াডের শক্তিমত্তা আর দুর্বলতার ক্ষেত্রে ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে অমিলের চেয়ে মিল বেশি। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের হারিয়ে ফাইনালের পথে এগিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি দুই দলের জন্যই মর্যাদা রক্ষার ম্যাচ এটি। আপাতত তাই আরও একটি উত্তেজনা আর রোমাঞ্চে ভরা ইন্দো-পাক লড়াইয়ের ক্ষণ গনণা করছে সবাই।