পিকফোর্ড নামের চীনা প্রাচীর

গুডিসন পার্কে লিভারপুল এবং এভারটনের মধ্যকার ২৪১ তম ডার্বি ম্যাচটি গোলশূন্য ড্র হিসেবে শেষ হলেও আদতে তা ছিল বিনোদনের বারুদে ঠাসা। মিডফিল্ড বাইপাস করে দুই দলের ডি বক্সে হয়েছে একের পর এক আক্রমণ, দুই দলের গোলরক্ষক যা রুখে দিয়ে ম্যাচটির স্কোর 0-0 রাখতে সক্ষম হয়েছে।

তবে এই ম্যাচের আসল হিরো হলেন টফিদের গোলরক্ষক জর্ডান পিকফোর্ড। ছয় ফুট এক ইঞ্চি উচ্চতার এই ইংলিশ গোলরক্ষককে এদিন যেন অন্য কিছুই ভর করেছিল।

লিভারপুলকে সামনে পেয়ে হঠাৎ করে যেন তার মধ্যে অতিমানবিয় শক্তি এসে যায়, অল রেডদের একের পর এক আক্রমণ তাঁর কাছে কোন পাত্তাই পায়নি। এভারটনের গোলপোস্টের সামনে পিকফোর্ড নামক এক বিশাল দেয়ালে ধাক্কা খেয়ে ফিরে গেছে সালাহ, দিয়াজ, ফিরমিনো ও নুনেজদের একের পর এক আক্রমণ

খেলার প্রথমার্ধে নুনেজের ভলি পিকফোর্ডের হাতে বাধা পেয়ে পোস্টে লেগে ফিরে যায়, আরেক লিভারপুল উইঙ্গার লুইস দিয়াজের শটও পোস্টে লেগে ফিরে আসে। লিভারপুলের দুই আক্রমনভাগের খেলোয়াড়ের মত একই ভাগ্য হয় এভারটন মিডফিল্ডার টম ডেভিসের। তাঁর শট গোলরক্ষক এলিসন বেকারকে পরাস্ত করলেও সাইড বারে লেগে তা ফিরে আসে।

খেলার দ্বিতীয়ার্ধে ইঞ্জুরির কারণে মাঠ ত্যাগ করা লিভারপুলের তরুণ মিডফিল্ডার ফ্যাবিও কারভালহোর বদলি হিসেবে নামা রবার্তো ফিরমিনরোকে তিনবার নিশ্চিত গোল পাওয়ার থেকে বঞ্চিত করেন পিকফোর্ড, খেলার শেষ মুহূর্তে মোহাম্মেদ সালাহর শট ঠেকিয়ে দিয়ে খেলার ভাগ্য নির্ধারণ করেন ইংল্যান্ড জাতীয় দলের এই গোলরক্ষক।

এই মৌসুমে উল্ভস থেকে ধারে এভারটনে খেলতে আসা লিভারপুলের সাবেক খেলোয়াড় কনার কোডি অবশ্য টফিদের হয়ে একটি গোল করেছিলেন তবে অফসাইড হয়েছে এই সন্দেহে তা ভারের কাছে পাঠানো হয়। লম্বা সময় ধরে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর ভার গোলটিকে অফসাইড হিসেবে বাতিল করে দেয়।

খেলা শেষ হওয়ার কিছুক্ষণ আগে বদলি হিসেবে নেমে এভারটনের হয়ে একটা গোল প্রায় পেয়েই গিয়েছিলেন তরুণ মিডফিল্ডার ডোয়াইট ম্যাকনিল, তবে তার শট ঠেকিয়ে দেন লিভারপুলের ব্রাজিলিয়ান গোলরক্ষক অ্যালিসন বেকার।

আর্সেনালের হয়ে দুর্দান্ত খেলা অ্যারন রামসডেল যখন ইংল্যান্ডের এক নম্বর গোলরক্ষক হওয়ার জন্য দরজায় করা নাড়ছেন ঠিক তখন এভারটনের হয়ে পিকফোর্ডের এমন দানবীয় পারফর্মেন্স আবারো মনে করিয়ে দিল কেন তিনি থ্রি লায়ন্সদের গোলপোস্ট আগলে রাখার দায়িত্ব পান। এমন পারফরমেন্সের পর তার দল হেরে গেলে সত্যিই খুব অবিচার হতো।

ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের কাছে হারের পর বোর্নমাউথ ও নিউক্যাসেলের সাথে দুই ম্যাচে পুরো তিন পয়েন্ট তুলে নিলেও এভারটনের সাথে খেলায় ড্র করে আবার পয়েন্ট খোয়াতে হল ইয়ুর্গেন ক্লপের লিভারপুলকে। গত মৌসুমে এফএ কাপ এবং লিগ কাপ জয়ী দল যারা মৌসুমের শেষ দিন অবধি লিগ শিরোপার জন্য ম্যানচেস্টার সিটির সাথে লড়াই করেছে। সেই সাথে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে খেলেছে।

এই মৌসুমে তাদের খেলা দেখে কোথাও একটা ঘাটতির যেন আভাস পাওয়া যাচ্ছে। দলের তারকা খেলোয়াড়দের কেউই এখনো তেমনভাবে জ্বলে উঠতে পারেননি, দলের রক্ষনের প্রহরি ভার্জিল ভ্যান ডাইককে এদিনো বড্ড নড়বড়ে ছিলেন। তবে ডিয়েগো জটার ইনজুরি কাটিয়ে দলে ফেরার খবর ক্লপকে কিছুটা হলেও স্বস্তি দিবে।

ম্যাচ শুরুর আগে দুই দলের সমর্থকরা মিলে কিছুদিন আগে খুন হওয়া নয় বছরের অলিভিয়ে প্র্যাট কোরবেলের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন। এসময় লাল ও নীল এই দুই রঙে তৈরি একটি ব্যানার দেখা যায় যেখানে ‘যথেষ্ট হয়েছে, শহরের সকলে আমরা একতাবদ্ধ’ এই বাণী প্রচার করা হয়। যা দুই দলের প্রতিদ্বন্দ্বিতাকে ছাপিয়ে শহরের বাসিন্দাদের ঐক্যের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link