সেই শফিউল এখন খ্যাপ ক্রিকেটার!

দুই-আড়াই বছর আগেও তিনি একই সিরিজে দু’বার বোকা বানাতে জানতেন স্বয়ং রোহিত শর্মাকে। সেই রোহিত শর্মা আজ দাপটের সাথে অধিনায়কত্ব করছেন ভারতের। কিন্তু, কোথাওই যেন নেই শফিউল ইসলাম। আজকাল রীতিমত পাড়া-মহল্লার খ্যাপ ক্রিকেটও খেলে বেড়াচ্ছেন। সেখানে টুকটাক আর্থিক লাভ হয়তো হচ্ছে, কিন্তু পারফর্ম করাটা আর হয়ে উঠছে না এই ফাস্ট বোলারের।

শফিউলকে পাওয়া গেল আরসিসি টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট টুর্নামেন্টের ফাইনালে। ম্যাচটি সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জের লক্ষ্মীখোলায় অবস্থিত বেগম নূরনাহার অনার্স কলেজের মাঠে। ফাইনালে নিমগাছি দূরুন্ত ক্রিকেট একাদশের হয়ে খেলেছেন শফিউল টি.এস.কে.এফ তেলিজানা’র বিপক্ষে। টুর্নামেন্টটির সপ্তম আসরের ফাইনালে একদমই নিষ্প্রভ ছিলেন শফিউল। বল হাতে চার ওভারে এক উইকেট পেলেও রান গুণেছেন ৬২ টি। ব্যাট হাতে এক বল খেলে কোনো রান না করেই ফিরে গিয়েছেন সাজঘরে। তেলিজানা চ্যাম্পিয়ন হয়।

হায় শফিউল! অথচ, খুব বেশিদিন আগের কথা নয়, আন্তর্জাতিক ময়দানেও প্রায় ত্রাস সৃষ্টি করতেন শফিউল। দেশে ও দেশের বাইরে প্রথমবারের মত ইংল্যান্ডকে হারানোর স্মৃতির সাথে জড়িয়ে আছে তাঁর নাম।

শফিউলকে কেন মনে রাখা দরকার? – এই প্রশ্নের কোনো উত্তর নেই। বরং, তিনি কোনো ভুল না করলে একাদশে তাঁর থাকাটা যেন কোনো ভাবেই বোঝা যেত না।

১০ বছর জাতীয় দলে থাকলেও সব মিলিয়ে আন্তর্জাতিক ম্যাচের সংখ্যা ১০০ টির মাইলফলকও ছোঁয়নি। উইকেট পেয়েছেন ১০৭ টি। তবে, তাঁর আলাদা কোনো বিশেষত্ব ছিল না। তাই, বাংলাদেশের টিম ম্যানেজমেন্টও তাঁকে খুব বেশি ব্যবহার করার সুযোগ পায়নি একদমই।

সব মিলিয়ে শফিউল ইসলাম সুহাস বাংলাদেশ ক্রিকেটের খুবই অদ্ভুত একটি চরিত্র। ইংল্যান্ডের মাটিতে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশের প্রথম জয়ের ম্যাচে শেষ উইকেটটা নিয়েছিলেন। আবার দেশের মাটিতে বিশ্বকাপের মঞ্চে দলকে জেতান, এবার অবশ্য ব্যাট দিয়ে।

জাতীয় দল থেকে অসংখ্যবার বাদ পড়েছেন। অসংখ্যবার ফিরেও এসেছেন। তবে, তাঁর বাদ পড়া বা ফেরা কোনোটারই কোনো স্পষ্ট ব্যাখ্যা নেই। ফিরেও তিনি এমন কোনো কিছু করে দেখাতে পারেননি যে, শফিউলকে নিয়ে হাহাকার করা যায়।

তবে, ইংল্যান্ড বরাবরই শফিউলের প্রিয় প্রতিপক্ষ ছিল। ২০১০ সালে ব্রিস্টলে যেবার ইংল্যান্ডকে হারায় বাংলাদেশ দল, সেবারও অন্যতম নায়ক ছিলেন শফিউলই। এবার অবশ্য তিনি যা করার বল হাতেই করেন। সেদিন চার বলে জয়ের জন্য ইংল্যান্ডের যখন মাত্র ছয় রান দরকার তখন গলার কাঁটা হয়ে থাকা জোনাথন ট্রটকে ফিরিয়ে দেন শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে। ৯৪ রান করা ট্রট টিকে গেলে বাংলাদেশের জয় পাওয়াটা মুশকিল হত। সেবারই প্রথমবারের মত কোনো ফরম্যাটে ইংল্যান্ডকে হারায় বাংলাদেশ।

আবার লিকলিকে গড়নের শফিউল খুবই ইনজুরিপ্রবণ। এর জন্য আজকাল ঘরোয়া ক্রিকেটেও তিনি নিয়মিত দল পান না, পেলেও ম্যাচ পান না। যদিও, খুব বেশিদিন আগের কথা নয়, যেদিন খোদ ভারতের মাটিতেই তাঁর বিপক্ষে ব্যাটিং করতে গিয়ে ভুগতে হয়েছেন আধুনিক টি-টোয়েন্টির অন্যতম গ্রেট রোহিত শর্মাকে।

কিন্তু, সেই শফিউল আজ কোনো আলোচনাতেই নেই। কোনো খবরে খুঁজেই পাওয়া যায় না এই পেসারকে। অথচ, শফিউলের বয়স মাত্র ৩৩। হঠাৎ এমন খ্যাপের ম্যাচগুলোর নিষ্প্রভ পারফরম্যান্সগুলো দিয়ে তিনি খবরে আসেন। বাড়িয়ে দেন আরেকটু আক্ষেপ।

লেখক পরিচিতি

সম্পাদক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link