যখনই কোনো দল বিপদে পড়েছে, তখনই ত্রাতার ভূমিকায় তার আবির্ভাব হয়েছে। সুইজারল্যান্ডের চতুর্থ সারির ক্লাব ওরতুসুন্ড দিয়ে শুরু, দলটাকে টানা তিন মৌসুমে প্রমোশন পাইয়ে নিয়ে আসেন ইউরোপা লিগের নকআউট পর্বে। এরপর সোয়ানসির রেলিগেশন বাঁচিয়েছেন, ব্রাইটনকে নিয়মিত করেছেন প্রিমিয়ার লিগে। বলা হচ্ছিল চেলসির নতুন কোচ গ্রাহাম পটারের কথা। তার সাথে ২০২৭ সাল পর্যন্ত পাঁচ বছরের চুক্তি করেছে লন্ডনের ক্লাবটি। নতুন মালিকানায় তারুণ্যে ভরা চেলসির ভারটা এখন তারই কাঁধে।
ফ্রাঙ্ক ল্যাম্পার্ডকে বরখাস্ত করার পর চেলসি তখন দিশাহীন। লন্ডনের আকাশে ঘোর অমানিশা, রেলিগেশন জোনের আশেপাশেই ঘোরাঘুরি করছে দল। সে সময়টাতেই দায়িত্ব নিয়ে মাস ছয়েকের মাঝে ভোজবাজির মতো সব পাল্টে দিয়েছিলেন টমাস টুখেল, দলকে জিতিয়েছিলেন চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শিরোপা। কিন্তু শেষ রক্ষা হলো না, এ মৌসুমে শুরুটা বাজে হওয়ায় তার উপর আর ভরসা রাখতে পারেননি চেলসির নতুন মালিক টড বোহেলি।
ছয় ম্যাচে মাত্র তিন জয়, চ্যাম্পিয়ন্স লিগে ডায়নামো জাগরেবের বিপক্ষে হারের পর বিদায় ঘন্টা বেজে যায় টুখেলের। তার বিদায়ের পর অবশ্য দেরি করেনি চেলসি, ১৫ মিলিয়ন পাউন্ডের রিলিজ ক্লজ দিয়ে ব্রাইটন থেকে নিয়ে এসেছে গ্রাহাম পটারকে। আগামী দিনগুলোতে তাই ব্লুজদের ডাগআউটে দেখা যাবে এই ইংলিশম্যানকে।
গত দুই মৌসুমজুড়েই অবশ্য প্রিমিয়ার লিগজুড়ে গ্রাহাম পটার নামটার ফিসফিসানি শোনা যাচ্ছিল। ব্রাইটনের দায়িত্ব পাবার পর থেকেই দলটার পারফরম্যান্সের গ্রাফ ঊর্ধ্বমুখী হচ্ছিল। দ্রুতগতির আক্রমণাত্নক ফুটবল খেলে চমকে দেয়া দলটি গত মৌসুম শেষ করেছিল নবম স্থানে থেকে। প্যাসকেল গ্রোব, ট্রোসার্ড, বিসৌমা, কুকুরেলা, ম্যাক অ্যালিস্টার, কাইসেদোদের প্রশংসায় মেতেছিল ইংরেজ গণমাধ্যম।
আর ডাগআউটে দাঁড়িয়ে এই দলটার নিউক্লিয়াস ছিলেন পটার। এই মৌসুমের শুরুতেই দলের দুই তারকা মার্ক কুকুরেলা আর বিসৌমাকে ছেড়ে দিলেও তাই পথ হারায়নি ব্রাইটন। মৌসুমের শুরুটাই তারা করেছিল জায়ান্ট ম্যানইউকে হারিয়ে, ৬ ম্যাচে ৪ জয় আর এক ড্রয়ে তাদের সংগ্রহ ১৩ পয়েন্ট। বড় অংকের রিলিজ ক্লজ দিয়ে হলেও তাই পটারকে নিয়োগ দিতে দুবার ভাবেননি টড বোহেলি।
অবশ্য টুখেল আর পটার দুজনের খেলার দর্শনে মিল খুঁজে পাওয়া যায়। দুজনেই দলকে ৩-৪-২-১ ফর্মেশনে দলকে খেলাতে পছন্দ করেন। কিন্তু দুজনের পার্থক্যটা ধরা পড়ে আক্রমণ করার সময়, বল জেতার পর তড়িৎ গতিতে আক্রমণে যেতে পছন্দ করেন পটার। অন্যদিকে টুখেলের অধীনে চেলসি আক্রমণে যেত আরেকটু রয়ে সয়ে, নিজেদের মাঝে পাসিং ফুটবল খেলে।
চেলসিতে পটারের পুনর্মিলন হবে নিজের সাবেক শিষ্য মার্ক কুকুরেল্লার সাথে। এ মৌসুমের শুরুতেই ৫০ মিলিয়ন পাউন্ডের বিনিময়ে তাকে দলে ভিড়িয়েছে ব্লুজরা। গুরু-শিষ্যের পুর্নমিলনে কপাল পুড়তে পারে ইংলিশ লেফটব্যাক বেন চিলওয়েলের। থ্রি ম্যান ব্যাকলাইনে উইংব্যাক হিসেবে কুকুরেল্লাই যে হবেন পটারের প্রথম সেটা বলাই বাহুল্য। তাছাড়া পটার মিডফিল্ডে ফিজিক্যালিটি বেশ পছন্দ করেন।
ফলে জর্জিনহোর চেলসি ক্যারিয়ার বলা যায় এক প্রকার হুমকির মুখে। অন্যদিকে কনর গ্যালাঘার কিংবা রুবেন লফটাস চিকের জন্য কোচবদল হয়ে এসেছে আশীর্বাদরূপে। এখন দেখা যাক তারা নিজেদের প্রমাণ করতে পারেন কিনা। তারা যত দ্রুত মানিয়ে নিতে পারবেন, পটারের চেলসিতে সাফল্যের পথ ততই সুগম হবে।
কোচ বরখাস্ত করার ব্যাপারে চেলসির মালিকদের দুর্নাম বহুদিনের। দল সামান্য পা হড়কালেই প্রথম কোপটা পড়ে কোচের উপর। গত চার দশকে চেলসির ডাগআউটে এসেছেন ২৬ জন কোচ। পটার নিজেও জানেন দ্রুত সাফল্য এনে দিতে না পারলে তার অবস্থাও হবে পূর্বসূরিদের মত। এক্ষেত্রে তার সাফল্যের পথে তার বড় বাঁধা দলের অভ্যন্তরীণ সমস্যা। মালিকপক্ষের সাথে দূরত্ব, স্পোর্টিং ডিরেক্টর না থাকা, নতুন আসা খেলোয়াড় – সব সমস্যা সামলে পটার কতটা বদলে দিতে পারেন চেলসিকে সেটাই এখন দেখার বিষয়।