গত কয়েকদিন ধরেই উত্তপ্ত বাংলাদেশের ক্রিকেট পাড়া। আলোচনার ঝড় উঠেছিল চায়ের কাপে – আর এই আলোচনার বিষয় ছিল দল নির্বাচন। আসন্ন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে কারা থাকছেন স্কোয়াডে সেসব নিয়েই ছিল মাতামাতি। অবশেষে অপেক্ষার প্রহর ফুরিয়েছে, ভাগ্যবান পনেরো জনের নাম ঘোষণা করেছে নির্বাচকরা।
আর সেখানে জায়গা হয়নি বাংলাদেশের দলের দীর্ঘ সময়ের সঙ্গী মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের। টি-টোয়েন্টি দলে তাঁর জায়গা পাওয়া নিয়ে সংশয় ছিল আগে থেকেই, এবার সেটি সত্যি হলো। অস্ট্রেলিয়া বিশ্বকাপে অংশ নেয়া পনেরো জনের মাঝে নেই অভিজ্ঞ এই ক্রিকেটারের নাম। তাকে বাদ দিয়েই ফেরানো হয়েছে তরুণ ইয়াসির রাব্বিকে।
গত এক বছরে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের পারফরম্যান্স মোটেই রিয়াদ সুলভ ছিল না। বাংলাদেশের ‘সাইলেন্ট কিলার’ খ্যাত এই ক্রিকেটার নিজেকে যেন হারিয়ে ফিরছিলেন। গত জুলাইয়ের জিম্বাবুয়ে সিরিজের আগে অধিনায়কত্বও ছাড়তে হয়েছিল অফ ফর্মের কারণে। এরপর এশিয়া কাপে সুযোগ পাওয়া নিয়েি জল ঘোলা কম হয়নি।
তবে সেবার একটা শেষ সুযোগ পেয়েছিলেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। দলের সাথে উড়াল দিয়েছিলেন সংযুক্ত আরব আমিরাতে। বাংলাদেশের খেলা দুই ম্যাচেই ছিলেন মূল একাদশেও। কিন্তু সেই সুযোগ কাজে লাগাতে পারেননি তিনি। দুই ম্যাচেই ব্যর্থ হয়েছেন, আর তাই এই মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যানকে নিয়ে আর ভাবতে চায়নি টিম ম্যানেজমেন্ট।
মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ রান পাচ্ছেন না, এটা সত্য। তবে সেটির চেয়ে বেশি সত্যি রিয়াদের ফিটনেস আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টির সাথে বেমানান। তিনি এখন চাইলেই ডট বলকে সিঙ্গেল কিংবা সিঙ্গেলকে ডাবলে রূপ দিতে পারেন না। একই কথা বলা যায় ফিল্ডিংয়ের ক্ষেত্রেও; ক্যাচ মিস এখন মাহমুদউল্লাহর নিয়মিত সঙ্গী, তড়িতগতির ফিল্ডিংও আর দেখা যায় না।
সবকিছু চাপিয়ে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের বাদ পড়ার কারণ তাঁর ধীরগতির ব্যাটিং। অর্থাৎ সন্তোষজনক স্ট্রাইক রেটে রান করতে না পারাটাই সাবেক অধিনায়ককে দলের বাইরে রাখতে বাধ্য করেছে। গত দুই বছরে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ রান করেছেন বলের সাথে তাল মিলিয়ে। ফিনিশিং রোলে খেলতে নেমেও তাঁর ব্যাট থেকে প্রত্যাশিত হার্ড হিটিং দেখা যায় নি।
২০২১ সালে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ মোট ২৬টি ম্যাচ খেলে ৪৯৬ রান করেছেন। এসময় তাঁর ব্যাটিং গড় ২৩.৬২ আর স্ট্রাইক রেট ১০৫.৩১। গড়টা ঠিকঠাক থাকলেও একজন ফিনিশারের এমন স্ট্রাইক রেট বড্ড চোখে পড়ে। চলতি বছরেও অবস্থার খুব একটা উন্নতি হয়নি। আট ম্যাচ খেলে ১৫১ রান করেছেন এই ডানহাতি ব্যাটসম্যান। যেখানে স্ট্রাইক রেট মাত্র ১১০।
পরিসংখ্যান পাশে সরিয়ে রাখি, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের খেলা দেখা প্রতিটি চোখ এখন জানে বাইশ গজে তাঁর নড়বড়ে অবস্থা। দ্রুত গতিতে রান তোলা দূরে থাক, তিনি সেই চেষ্টাটা ঠিকঠাক করেন না। উল্টো ডট বল খেলে দলের উপর চাপ বাড়ান। শেষদিকে যদি দুই একটা বড় শট খেলেন, সেগুলোও ব্যাটে বলে হয় না। এককথায়, দলের বোঝা হয়ে উঠেছিলেন ৩৬ বছর বয়সী এই ক্রিকেটার।
তারপরও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ সিনিয়র খেলোয়াড়, দেশে তাঁর ভক্ত-সমর্থকদের অভাব নেই। দল থেকে বাদ দেয়া তাই খুব একটা সহজ সিদ্ধান্ত ছিল না। তবু সেই সাহসী সিদ্ধান্ত নিতে পেরেছে টিম ম্যানেজমেন্ট, সেই সাথে তরুণদের নিয়ে নতুন করে শুরু করেছে পরিকল্পনা।
মাহমুদউল্লাহকে ছাড়া খেললেই বাংলাদেশ শিরোপা জিতে যাবে – ব্যাপারটা মোটেই এমন নয়। কিন্তু কেউ যখন দলের বেড়ে ওঠার ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়ায় তখন তাকে সরিয়ে এগিয়ে যাওয়ার একমাত্র উপায়। ব্যক্তির চেয়ে দল বড় – এমনটা উপলব্ধি করে সেটার প্রতিফলন দেখানোর জন্য একটা ধন্যবাদ পেতেই পারেন নির্বাচকরা।
কোথায় থামতে হবে সেটা জানতে হয়, কখনো কখনো নিজে ফুরিয়ে যাওয়ার আগে বিদায় বলতে হয়। মুশফিকুর রহিম সেটা দেরিতে হলেও বুঝেছিলেন, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ বুঝতে পারেননি। তাই হয়তো আজকের এই দিন দেখতে হয়েছে। বুঝতে পারেননি বলেই শেষটা সুন্দর হয়নি রিয়াদের।