মুশফিক-রিয়াদের জায়গায় কে?

পারফরম্যান্সের বিচারে জাতীয় দলে যেকোনো বিপর্যয় নেমে এলেই নতুনত্ব আর পরিবর্তনের সুর শোনা যায় বাংলাদেশের টিম ম্যানেজমেন্টের কণ্ঠে। এবারের এশিয়া কাপে ভরাডুবির পরেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। তবে অন্যবারের মত শুধু মুখে মুখে নয়, কাজের ক্ষেত্রেও পরিবর্তনের ছাপ দেখা গিয়েছে। নতুন করে বড় পরিসরে পরিকল্পনা করতে শুরু করেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)।

আর এই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে অফ ফর্মে থাকা মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে বাদ দেয়া হয়েছে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দল থেকে। অন্যদিকে এই ফরম্যাটে নিজের ভবিষ্যৎ বুঝতে পেরে আগেই অবসরের সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিয়েছিলেন মুশফিকুর রহিম। আর তাই প্রথমবারের মত মুশফিক, মাহমুদউল্লাহকে ছাড়াই বিশ ওভারের ফরম্যাটে বিশ্বকাপ খেলতে যাচ্ছে টিম টাইগার্স।

স্বভাবতই প্রশ্ন উঠেছে এই দুই অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যানের জায়গায় কারা আসছেন দলে। এশিয়া কাপ এবং টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দুইটি স্কোয়াড ভালভাবে লক্ষ্য করলেই উত্তরটা পাওয়া যাবে। উইকেটরক্ষক ব্যাটার মুশফিকুর রহিমের জায়গায় ফিরেছেন আরেক উইকেটকিপার নুরুল হাসান সোহান। এছাড়া মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন ইয়াসির রাব্বি।

নুরুল হাসান সোহান এবং ইয়াসির রাব্বি দুই জনেই ঘরোয়া ক্রিকেটের অতিপরিচিত মুখ। জাতীয় দলের সাথেও আছেন অনেকটা সময়। ইয়াসির রাব্বি মাত্র একটি আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি খেললেও সোহান খেলেছেন ২০ টি। এছাড়া বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নেতৃত্ব দেয়ার অভিজ্ঞতাও আছে এই ডানহাতি ব্যাটসম্যান।

খুব বিশেষ কিছু না ঘটলে মূল একাদশেও সোহান, রাব্বিদের জায়গা নিশ্চিত। টি-টোয়েন্টি দলের মিডল অর্ডারের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ভাবা হচ্ছে তাদের। কিন্তু আলোচনা থেমে নেই এখানেই, কেননা মুশফিক তাঁর সময়ে ব্যাট করতেন চার নম্বর পজিশনে। কিন্তু এই অভিজ্ঞ ক্রিকেটারের উত্তরসূরী হয়ে আসা সোহান একই পজিশনে ব্যাটিং করেন না।

আর তাই মুশফিকের রেখে যাওয়া চার নম্বর পজিশনে কে ব্যাট করবেন তা নিয়েও গুঞ্জন রয়েছে ক্রিকেটপ্রেমীদের মাঝে। প্রথমত ভাবা হয়েছিল আফিফ হোসেন ধ্রুবের ব্যাটিং অর্ডারে হয়তো প্রমোশন ঘটবে। ক্ল্যাসিক্যাল ঘরানার এই ব্যাটসম্যানকে উপরে খেলানোর দাবিটা অনেক দিনেরই, মুশফিকের বিদায়ে সেই সুযোগটাই পেতে চলেছেন তিনি।

কিন্তু জাতীয় দলের নতুন টেকনিক্যাল কনসালট্যান্টের কথায় পাওয়া গিয়েছে ভিন্ন ইঙ্গিত। দলের ইনফর্ম ব্যাটসম্যান লিটন দাসকে তিনি গুরুত্বপূর্ণ চার নম্বর পজিশনের দায়িত্ব বুঝিয়ে দিতে চান। ব্যাখ্যাটাও পরিষ্কার, নতুন বলের চেয়ে পুরোনো বলেই লিটন বেশি সাবলীল আর স্বাচ্ছন্দ্যে ব্যাট করতে পারেন।

এছাড়া ইনিংসের মাঝের ওভারগুলোতে নিয়মিত বাউন্ডারির পাশাপাশি স্ট্রাইক রোটেট করে দ্রুত রান তোলার জন্য টিম ম্যানেজমেন্টের সবচেয়ে সেরা পছন্দ লিটন দাস। চার নম্বরে লিটন খেললে পাঁচে হয়তো দেখা যাবে আফিফ হোসেনকে। সেক্ষেত্রে দুইজনেরই রানিং বিটুইন দ্য উ চমৎকার, এবং একই সাথে গ্যাপ খুঁজে বাউন্ডারি বের করে নিতে পারেন সহজেই।

আর সেজন্যে লিটন এবং আফিফকে পাওয়ার প্লে এর পর থেকে ডেথ ওভার পর্যন্ত সময়ে স্কোরবোর্ড সচল রাখার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তবে লিটন দাসের পরিসংখ্যান চিন্তার কারণ হতে পারে। নিজের টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের অধিকাংশ সময় টপ অর্ডারে ব্যাট করা লিটনের চার নম্বরে রেকর্ড মোটেও ভাল নয়। বরং পাওয়ার প্লেতে ব্যাট করতে পারলেই তাঁর সফলতার হার একটু বেশি।

যাই হোক, এখনই নিশ্চিত নয় লিটন দাসের ব্যাটিং অর্ডার। কনসালট্যান্ট শ্রীধরন শ্রীরাম শীঘ্রই হয়তো এই ব্যাপারে তাঁর সাথে কথা বলবেন, লিটনের মতামতের ভিত্তিতেই নির্ধারিত হবে এই ইনফর্ম ব্যাটারের পজিশন। যদি লিটন ওপেনিংয়েই থেকে যান সেক্ষেত্রে হয়তো চার নম্বরে দেখা যাবে আফিফ হোসেনকে, এবং একইসাথে মিডল অর্ডারে জায়গা পেতে পারেন সাব্বির রহমান রুম্মন।

তবে, রুম্মনের চেয়ে এখানে এগিয়ে আছেন ইয়াসির আলী রাব্বি। কারণ, শ্রীধরণ স্পষ্ট জানিয়েছেন, রিয়াদের বিকল্প হিসেবেই রাব্বিকে গড়ে তুলতে চায় দল।

বিশ্বকাপের আগে নিউজিল্যান্ডে একটি ত্রিদেশীয় সিরিজ খেলবে বাংলাদেশ। এর আগে আরব আমিরাতেও খেলার কথা আছে। এই দুই জায়গাতেই হয়তো নিজেদের সেরা টিম কম্বিনেশন খুঁজে নিবে বাংলাদেশ দল, তখনই বোঝা যাবে বিশ্বমঞ্চে কোন ব্যাটার কোন পজিশনে খেলবেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link