‘কাটার মাস্টার’ এখন অতীত

সবার চোখের মণি, পছন্দের খেলোয়াড় থেকে অপছন্দের তালিকার দিকে ধাবিত হতে খুব বেশি সময় লাগে না। ঠিক কতক্ষণ সময় প্রয়োজন তা নিশ্চয়ই মুস্তাফিজুর রহমানের খুব ভাল করেই জানা। হঠাৎ বিস্ময়ে চোখ ছানাবড়া করেই মুস্তাফিজুর রহমানের আগমন ঘটেছিল আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে। এরপর মুহূর্তেই বাংলাদেশের ক্রিকেট প্রেমীদের মনে জায়গা করে নেন। দিন বদলেছে। বদলেছেন মুস্তাফিজ। সেই সাথে বদলেছে তাঁর প্রতি ভক্ত-সমর্থকদের ভালবাসা।

লিকলিকে গঢ়নের মুস্তাফিজ এক সময় আতংকের অপর নাম ছিলেন। নিজের দুর্বোধ্য কাটার দিয়ে সমীহ আদায় করেছিলেন। আর সেই মুস্তাফিজকে এখন যেন বলে কয়ে বাউন্ডারি হাকান ব্যাটাররা। ইকোনমিক্যাল ফিজ এখন সবচেয়ে বেশি রান খরুচে বোলারদের একজন। তবুও তিনি অটোচয়েজ হিসেবেই ২০২২ সালে অস্ট্রেলিয়ায় অনুষ্ঠিতব্য টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ দলে স্থান পেয়ে গেছেন।

মুস্তাফিজ তাঁর ক্যারিয়ারের কখনোই জোরে বল করা বোলার ছিলেন না। নিজের কার্য্যকর কাটার আর স্লোয়ার বলের মিশ্রণে তিনি ছিলেন অপ্রতিরোধ্য। সেই অপ্রতিরোধ্য মুস্তাফিজ এখন বড্ড বেশি মলিন। তিনি প্রতিপক্ষ ব্যাটারদের পছন্দের বোলার। একটা সময় মুস্তাফিজের ওভারগুলো দেখে-শুনে খেলার প্রচেষ্টাই থাকত ব্যাটারদের। তবে এখন তাঁর ওভারে রান তোলার জন্যেই মুখিয়ে থাকেন ব্যাটাররা।

এমন পতনের মূল কারণটা বোধহয় মুস্তাফিজ নিজেই। তিনি নিজেকে ছাড়িয়ে যাওয়ার প্রচেষ্টাই যেন করতে চাননা। তিনি যেন আটকে থাকতে চান নিজের গণ্ডিতে। অনুশীলন নিয়ে রাজ্যের যত অনীহা তাঁর। তবে বিশ্বকাপ দলে যেহেতু সুযোগ পেয়েছেন সেহেতু খানিকটা অনুশীলন করা প্রয়োজন। সেই অনুশীলনেও নিজেকে হারিয়ে খুঁজে ফিরছেন মুস্তাফিজুর রহমান। মিরপুর সেন্টার উইকেটেও বিবর্ণ মুস্তাফিজ।

এবারের বিশ্বকাপ দল বাচাইয়ে বেশকিছু সাহসী পদক্ষেপ নিতে দেখা গেছে। অন্তত এটা প্রমাণিত হয় যে বিসিবি এবার যেকোন হার্ডলাইনেই যেতে প্রস্তুত। তেমনটা যদি হয়ে থাকে তবে এবারে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপটা হতে পারে মুস্তাফিজের নিজের ছন্দে ফিরে আসার শেষ সুযোগ। তিনি বোধহয় সেটা খুব ভাল করেই আন্দাজ করতে পেরেছেন। তাইতো মিরপুর হোম অব ক্রিকেটে তাঁর আনাগোনা বেড়েছে। নিজেকে নিয়ে কাজ করছেন তিনি।

জিম থেকে নেট অনুশীলন, সবখানেই ব্যস্ত মুস্তাফিজ। অস্ট্রেলিয়ার কন্ডিশনে মুস্তাফিজ খুব বেশি কার্য্যকর বোলার হিসেবে নিজেকে মেলে ধরতে পারবেন বলে বিশ্বাস করবার সুযোগ নেই। কেননা পেস বান্ধব উইকেট হলেও গতিবান পেসাররাই অজি উইকেটের সর্বোচ্চ ফায়দাটুকু আদায় করে নিতে পারে। সেদিক থেকে ফিজ খানিকটা পিছিয়েই থাকবে। তবুও বুদ্ধিদীপ্ত বোলিং হতে পারে মুস্তাফিজের অন্যতম অস্ত্র।

মুস্তাফিজের স্লোয়ার ইয়োর্কারগুলো বেশ ভয়ংকর। সে অস্ত্রটাই শাণ দেওয়ার চেষ্টা নিশ্চয়ই করবেন মুস্তাফিজ। তাঁর প্রস্তুতির সবচেয়ে বড় মঞ্চ হতে পারে আসন্ন ত্রি-দেশীয় সিরিজ। নিউজিল্যান্ডের কন্ডিশনে নিজের হারানো সত্ত্বাকে খুঁজে পেলে তা বরং বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্যেই ফলপ্রসূ হবে। মুস্তাফিজ হয়ত সে মঞ্চটাই কাজে লাগানোর চেষ্টাটা করবেন। এবারের বিশ্বকাপটা বলাই যায় মুস্তাফিজের বাঁচা-মরার লড়াই।

তাঁকে প্রমাণ করতেই হবে। তাঁকে বাংলাদেশের নবজাগরণের পথিকৃত হতেই হবে। নতুবা ছেড়ে দিতে হবে জায়গা। ‘দুষ্ট গরুর চাইতে শূন্য গোয়াল ভাল’। বাংলার এই প্রবাদের বাস্তবিক উদাহরণ নিশ্চয়ই হতে চাইবেন না মুস্তাফিজ। আবারও মুস্তাফিজ জ্বলে উঠুক। সে প্রত্যাশা নিশ্চয়ই বাংলাদেশ ক্রিকেটের কট্টর বিদ্বেষী লোকটাও করেন। মুস্তাফিজের শরীর থেকে ‘অটোচয়েজ’ তকমাটা উঠে যাক, রঙধনুর মত আবারও বর্ণিল হয়ে উঠুক ‘কাটার মাস্টার’ মুস্তাফিজ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link