বড় ভাই, বিরাট হৃদয়

অস্ট্রেলিয়ার দক্ষিণে জন্ম তাঁর। ক্রিকেট বিশ্বের আলোকিত এক তারকা ইয়ান চ্যাপেল। অজি ক্রিকেটের সমৃদ্ধ এক ইতিহাসের একটা বিশাল বড় অংশ তিনি। মজার বিষয় চ্যাপেল পরিবারের তিন ভাই অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটের সাথে কোন না কোন সময় ছিলেন জড়িত। তবে তিনি বেশ ছিলেন আলোচিত। নিজের ক্রিকেটীয় শৈলীর কারণে হোক কিংবা তাঁর প্রতিবাদী সত্ত্বার কারণে।

অস্ট্রেলিয়ার দক্ষিণে জন্ম তাঁর। ক্রিকেট বিশ্বের আলোকিত এক তারকা ইয়ান চ্যাপেল। অজি ক্রিকেটের সমৃদ্ধ এক ইতিহাসের একটা বিশাল বড় অংশ তিনি। মজার বিষয় চ্যাপেল পরিবারের তিন ভাই অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটের সাথে কোন না কোন সময় ছিলেন জড়িত। তবে তিনি বেশ আলোচিত ছিলেন। নিজের ক্রিকেটীয় শৈলীর কারণে হোক কিংবা তাঁর প্রতিবাদী সত্ত্বার কারণে।

২৬ সেপ্টেম্বর ১৯৪৩ সালে অস্ট্রেলিয়ার দক্ষিণের শহর অ্যাডেলেডে জন্ম তাঁর। পারিবারিকভাবেই ক্রিকেটীয় একটা ডিএনএ হয়ত ছড়িয়ে পড়েছিল ইয়ান চ্যাপেলের মাঝে। অবশ্য তাঁর তিন ভাইয়ের মাঝেই তা ছড়িয়ে গিয়েছিল সমানভাবে। মূলত অলরাউন্ডার হিসেবেই নিজের যাত্রা শুরু করলেও নিজেকে এক পুরাদস্তুর ব্যাটারে পরিণত করেছিলেন ইয়ান চ্যাপেল।

ডান হাতের অনিন্দ সুন্দর ব্যাটিং প্রদর্শন তিনি করে গিয়েছেন বাইশ গজে। মাত্র ১৮ বছর বয়সেই তিনি শুরু করেছিলেন তাঁর প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট ক্যারিয়ার। সে ক্যারিয়ারটা তিনি রাঙিয়েছেন রানের ফোয়ারা, শিকার করা উইকেটের পসরাও সাজিয়েছিলেন ইয়ান চ্যাপেল। তবে বোলিংটা তিনি নিয়মিত করে যাননি নিজের ক্যারিয়ার জুড়ে। এর জন্য অবশ্য দায়ী তাঁর দুর্দান্ত ব্যাটিং স্কিল। তিনি ব্যাট হাতে বাইশ গজের পথের যাত্রা মানেই যেন রান বন্যা হবার প্রবল সম্ভাবনা।

প্রায় কুড়ি হাজার রান তিনি করেছেন ঘরোয়া ক্রিকেটে। ঠিকঠাক সংখ্যাটা ১৯৬৮০। শুরুটাও তিনি করেছিলেন রোমাঞ্চ দিয়ে। স্যার গ্যারি সোবার্সের পরিবর্তে তিনি জায়গা করে নিয়েছিলেন দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ার দলে। প্রথম ম্যাচটা খেলেছিলেন ১৯৬২ সালে। সেখান থেকে শুরু। আর শেষটা ১৮ বছর বাদে। নিজের সুযোগের ব্যবহার তিনি পূর্ণভাবেই করতে পেরেছিলেন। প্রথমবার ১৯৬৩-৬৪ সালে দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ার হয়ে তিন নম্বরে ব্যাট করতে নেমেই খেলে ফেলেন অনবদ্য এক ইনিংস। রান করেন ২০৫।

সেবার শেফিল্ড শিল্ড জেতা দলটার সর্ব কনিষ্ঠ সদস্য ছিলেন চ্যাপেল পরিবারের বড় ছেলে ইয়ান চ্যাপেল। ১৯৬৪ সালেই তাঁর ডাক এসে যায় অস্ট্রেলিয়া জাতীয় দলে। পাকিস্তানের বিপক্ষে মেলবর্ন টেস্টে তাঁকে পরিয়ে দেওয়া হয়েছিল সম্মানের সেই টেস্ট ক্যাপ। তবে নিজের প্রথম টেস্টে খুব বেশি কিছু করতে পারেননি ইয়ান। কেবল ১১টি রান সংগ্রহ করতে পেরেছিলেন তিনি। তবে দুরন্ত ফিল্ডার হিসেবে তিনি তালু-বন্দি করেছিলেন চার খানা উইকেট। এরপর অবশ্য খানিকটা নির্বাসনে চলে গিয়েছিলেন চ্যাপেল।

কিংবদন্তিদের প্রত্যাবর্তনগুলো হয় নতুন সব ইতিহাস হবে বলে। তাই হল, এরপর আর রীতিমত পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি ইয়ান চ্যাপেলকে। ক্রিকেটের সব স্কিল তাঁর আয়ত্ত্ব করা ছিল আগেই। ক্রমাগত সেসব আরও হয়েছে শাণিত। ইতিহাস লেখার কাজটাই যেন তিনি করে গিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার হয়ে। ১৯৬৮ সালে দক্ষিণ আফ্রিকা ও ভারত ট্যুরকে সামনে রেখে নির্বাচকরা তরুণ ইয়ান চ্যাপেলকে রেখেছিলেন দলে। নির্বাচকদের আস্থার প্রতিদান দিতে বিন্দুমাত্র হেলা করেননি ইয়ান।

সে ট্যুরে তিনি সর্বোচ্চ ১২৬১ রান করেছিলেন। যা পরবর্তীতে বর্ধিত করেছে তাঁর প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট ক্যারিয়ারকে। নিজেকে ক্রমশ ছাপিয়ে যেতে শুরু করেন তিনি। ১৯৬৮-৬৯ পঞ্জিকাবর্ষে নিজের ধুন্ধুমার পারফরমেন্সের বদৌলত বনে যান বর্ষসেরা ক্রিকেটার। ১৯৬৯ সালে অজি গ্রীষ্মকালীন পিরিয়ডে যেন নতুনত্বেরই আভাস দিতে শুরু করেছিলেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজে তিনি রান করেছিলেন ৫৪৮। গড়টা ছিল ৬৮.৫০। প্রশংসনীয়!

ঠিক যখন তিনি থিতু হতে শুরু করেছেন অজিদের মূল দলে, তখন থেকেই তিনি নিজেকে সামনে এনেছেন প্রতিবাদী এক সত্ত্বা হিসেবে। খেলোয়াড়দের পারিশ্রমিক নিয়ে তিনি রীতিমত প্রতিবাদকে লড়াই অবধি নিয়ে গিয়েছিলেন। এমনকি অস্ট্রেলিয়ার তো বটেই ক্রিকেটের কিংবদন্তি স্যার ডন ব্র্যাডম্যানের সাথেও সম্পর্কের অবনতি হয় তাঁর। তবুও তিনি দমে জাননি। প্রাপ্যটুকু বুঝে নেওয়ার বিষয়ে তিনি ছিলেন সদা সোচ্চার। তাতে অবশ্য অধিনায়কের দায়িত্ব পেতে কোন ধরণের বেগ পেতে হয়নি ইয়ান চ্যাপেলের।

অস্ট্রেলিয়ার হয়ে ৩০টি টেস্ট ম্যাচে তিনি অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছিলেন। ১৯৭১ থেকে ১৯৭৫ এই সময়কালে অধিনায়কের ব্যাটনটা ছিল তাঁর হাতে। অর্ধেক ম্যাচে তিনি পেয়েছেন জয়ের দেখা। অস্ট্রেলিয়ার সর্বকালের সেরা অধিনায়কদের তালিকায় প্রথম সারিতেই রয়েছেন ইয়ান চ্যাপেল। পাঁচটা হারের বিপরীতে দশটি ড্র-ও করেছেন তাঁর নেতৃত্বাধীন অস্ট্রেলিয়া দল।

তবে অতি অল্প সময়ে তিনি নিজ হাতে থামিয়ে দেন নিজের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ক্যারিয়ার। মাত্র ৩২ বছর বয়সে তিনি ছেড়ে দেন জাতীয় দলের গুরুদায়িত্ব। তবে এর আগে ছোটভাই গ্রেগ চ্যাপেলকে নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার দলকে বহু স্মরণীয় জয় এনে দিয়েছিলেন তিনি। দলের ব্যাটিং অর্ডারের স্তম্ভ ছিলেন ইয়ান চ্যাপেল। তেমনটা তিনি ক্লাবের হয়েও করে গিয়েছেন। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটটা তিনি আরও চালিয়ে যান বছর পাঁচেক।

ক্রিকেট ক্যারিয়ার শেষে তিনি নিজেকে নতুন করে খুঁজে পান ক্রিকেটাঙ্গনে। একজন ক্রীড়া সাংবাদিক ও ধারাভাষ্যকার হিসেবে নিজেকে জড়িয়ে নেন ক্রিকেটের সাথে। নতুন ক্যারিয়ারে বেশ লম্বা সময়ই পার করে ফেলে এখন দিব্যি তিনি রয়েছেন অবসরে। কিংবদন্তি হয়েই তিনি রয়ে যাবেন চিরকাল। অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেটে প্রথম একশত ক্যাচ লুফে নেওয়া ইয়ান চ্যাপেল হয়ে রবেন অবিস্মরনীয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link