জহুরী জহুর চিনেছিলেন

২০২১ সালে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে অভিষেক হয় সুরিয়াকুমার যাদবের। এরপর থেকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাঁকে; ব্যাটিং গড়, স্ট্রাইক রেট আর ধারাবাহিকতা – সব দিক দিয়েই সেরা পারফর্মার তিনি। ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট কাউন্সিলের (আইসিসি) টি-টোয়েন্টি র‍্যাংকিংয়ে দুই নম্বরে অবস্থান করাটাই সুরিয়ার অবিশ্বাস্য পারফরম্যান্সের প্রমাণ।

মুম্বাইয়ের এই ক্রিকেটার প্রথম দেশজুড়ে আলোচনায় উঠে আসেন ২০১৮ সালে। ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের (আইপিএল) নিলামে মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স তাঁকে দলে ভেড়ানোর মধ্য দিয়েই নবজাগরণ লাভ করে সুরিয়াকুমারের ক্যারিয়ার। আইপিএলের পরের আসরগুলোতে এই ডানহাতি রান ফোয়ারো সৃষ্টি করেছিলেন, এরপরই ডাক পেয়েছেন ভারতের জাতীয় দলে।

তবে সাবেক অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটার রিকি পন্টিং তেমনটা মনে করেন না। তিনি মনে করেন ২০১৮ সাল নয়, বরং ২০১৪ সালের আইপিএল নিলাম মূলত সুরিয়াকে বদলে দিয়েছে। এর আগে মুম্বাইয়ের শিবিরে থাকলেও ম্যাচ খেলার সুযোগ পাননি এই প্রতিভাবান ক্রিকেটার। ২০১৪ সালে কলকাতা নাইট রাইডার্সে যোগ দেয়ার পরেই তিনি মোটামুটি নিয়মিত মাঠে নামতে শুরু করেন।

পরের চার বছরে কলকাতার হয়ে ৫৪ ম্যাচ খেলেছিলেন সুরিয়াকুমার যাদব। আর এসময় তিনি মোট ৬০৮ রান করতে সক্ষম হন। টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান হওয়া সত্ত্বেও ফিনিশিং ভূমিকায় তাঁকে দেখা গিয়েছিল। আর তাই হয়তো শাহরুখ খানের দলেকে নিজের সবটুকু দিতে পারেননি, তবে খেলোয়াড় হিসেবে বিকশিত হওয়ার পথে এই দলটিই ছিল তাঁর সঙ্গী।

কিংবদন্তি অধিনায়ক রিকি পন্টিং বলেন, ‘আমি যখন মুম্বাইয়ে ছিলাম, সে (সুরিয়া) তখন ১৮-১৯ বছরের কিশোর। সে আমাদের দলে ছিল, কিন্তু মাঠে নামতে পারেনি। পরের বছর কলকাতা তাঁকে কিনে নেয়, সেখান থেকেই তাঁর ক্যারিয়ার সাফল্যের দিকে বাঁক নেয়। কলকাতার হয়ে সুরিয়ার প্রতিভার ঝলক দেখেই মুম্বাই পরবর্তী তাঁকে আবারো কিনে নিয়েছে, এখন তো সে রীতিমতো ম্যাচ উইনার।’

সর্বশেষ দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে দলীয় বিপর্যয়ের মুখে মাত্র ৩৩ বলে ৫০ রান করে ম্যাচ জিতিয়েছেন সুরিয়াকুমার যাদব। এর আগে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে তৃতীয় টি-টোয়েন্টিতে খেলেছেন মাত্র ৩৬ বলে ৬৯ রানের ম্যাচ নির্ধারণী ইনিংস। বিরাট কোহলির সাথে এই ব্যাটারের গড়া শতরানের পার্টনারশিপের উপর ভর করেই সিরিজ জিতেছে ভারত।

সুরিয়াকুমার যাদবের ব্যাটিংয়ের মূলমন্ত্র ইতিবাচক থাকা। তিনি মনে করেন, ‘অ্যাটাক ইজ দ্য বেস্ট ডিফেন্স।’ আর তাইতো ক্রিজে আসার পর থেকেই মাঠের চারদিকে ঝরতে থাকে শটের ফুলঝুরি। মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের হয়ে খেলা শুরু করার সময় থেকেই সুরিয়ার ব্যাটিংয়ের ধরণ এমন, সাহসী অ্যাপ্রোচ অনুসরণ করতেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন এই ক্রিকেটার।

সুরিয়াকুমার যাদব বলেন, ‘যখন আমি বুঝতে পেরেছিলাম যে আমার খেলা কেমন তখন থেকেই আমি এভাবে খেলি। আমার সবসময় চেষ্টা করি একটু আলাদাভাবে পারফর্ম করতে যা আমার দলকে কঠিন সময়ে সাহায্য করবে। আমি চ্যালেঞ্জিং পরিস্থিতিতে ব্যাটিং করতে পছন্দ করি এবং আমি এমন ফ্যাক্টর হতে চাই যা দলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।’

এখন পর্যন্ত সুরিয়াকুমার যাদব নিজের ইচ্ছে-পূরণ করতে পেরেছেন। তিনি এখন ভারতীয় ব্যাটিং লাইনআপের সবচেয়ে ইনফর্ম ব্যাটসম্যান, আসন্ন বিশ্বকাপে রোহিত শর্মার দলের এক্স-ফ্যাক্টরও তিনি। আপাতত শুধু সামনে এগিয়ে যাওয়ার পালা; সুরিয়াও হয়তো তাই চাইবেন। ধারাবাহিকতা ধরে রেখে ভারতীয়দের বারবার উদযাপনের উপলক্ষ এনে দিতে পারলেই সুরিয়াকুমার স্বার্থক হবেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link