সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে সেঞ্চুরি

টেস্ট ক্রিকেটকে বলা হয় আসল ক্রিকেট। টেস্ট ক্রিকেটে পরীক্ষা দিতে একজন ক্রিকেটারের চূড়ান্ত দক্ষতার। মৌন ঋষির ন্যায় উইকেটে আসন গেঁড়ে সাধনা করতে হয় রানের। টেস্ট ক্রিকেটে সাধারণত দ্রুত রান তোলার তাড়া না থাকলেও মাঝেমাঝে ব্যাটসম্যানদের বেরোতে হয় খোলস ছেড়ে, করতে হয় আক্রমণাত্নক ব্যাটিং।

লাল বলে সেঞ্চুরি করা এমনিতেই কঠিন, তবে কয়েকজন ব্যাটসম্যান আছেন যারা কিনা দেড় ঘন্টার কম সময়ে টেস্টে সেঞ্চুরি তুলে নিয়েছেন। আসুন দেখে নেয়া যাক সেই চারজন ব্যাটসম্যানকে যারা কিনা নব্বই মিনিটের কম সময়েই স্পর্শ করেছিলেন তিন অংকের ম্যাজিক ফিগার।

  • স্যার ভিভ রিচার্ডস (ওয়েস্ট ইন্ডিজ)- ৮১ মিনিট

আক্রমণাত্নক ব্যাটিংয়ের প্রসঙ্গ আসবে, আর তাতে স্যার ভিভিয়ান রিচার্ডসের নাম থাকবে না সেটা কখনো হতে পারে না। আশির দশকে আক্রমণাত্নক ব্যাটিং আর খুনে দৃষ্টি দিয়ে প্রতিপক্ষের বোলিং শিবিরে রীতিমতো ত্রাস ছড়াতেন এই ক্যারিবীয় গ্রেট। ভিভ রিচার্ডসের ব্যাটিং নিয়ে একটা গল্প প্রায়ই শোনা যায়। অন্য ব্যাটসম্যানরা নতুন ব্যাটিং এ নামলে ফিল্ডাররা পাঁচ কদম এগিয়ে আসেন আর ভিভ রিচার্ডস নামলে পাঁচ কদম পিছিয়ে যায়। তখনকার দিনে এতটাই বিধ্বংসী ব্যাটিং করতেন তিনি।

১৯২০ সালে জ্যাক গ্রেগরীর দ্রুততম সেঞ্চুরির রেকর্ড টিকে ছিল প্রায় ৬৬ বছর। ১৯৮৬ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে অ্যান্টিগাতে সেই রেকর্ড ভেঙে দেন ভিভ রিচার্ডস। ইয়ান বোথাম, নেইল ফস্টার, জন এমবুরিদের মত বোলারদের সামলে মাত্র ৫৬ বলে ৮১ মিনিট ক্রিজে থেকে সেঞ্চুরি তুলে নেন স্যার ভিভিয়ান। ৫৮ বলে ১১০ রানের অপরাজিত সেই ইনিংস খেলার পথে হাঁকিয়েছিলেন সমান সাতটি করে চার এবং ছক্কা। আপাতনিরীহ ড্রয়ের দিকে ধাবিত হওয়া ম্যাচটা সেদিন ওয়েস্ট ইন্ডিজ জিততে পেরেছিল তাঁর দানবীয় ব্যাটিংয়ের কল্যাণে।

  • ব্রেন্ডন ম্যাককালাম (নিউজিল্যান্ড)- ৭৮ মিনিট

আক্রমণাত্নক ব্যাটসম্যান হিসেবেই নিউজিল্যান্ড ক্রিকেটে আবির্ভাব ব্রেন্ডন ম্যাককালামের। ওপেনিং এ নেমে প্রতিপক্ষের বোলারদের আত্নবিশ্বাস তলানিতে নামিয়ে দিতেন তিনি। অন্যপ্রান্তে যিনিই বল করতে আসুক, ম্যাককালামের তাতে থোড়াই কেয়ার! তিনি অটল থেকেছেন তার মারকুটে ব্যাটিং দর্শনে। অধিনায়ক হিসেবেও তিনি ছিলেন সমান আগ্রাসী, প্রতিপক্ষকে রীতিমতো গুঁড়িয়ে দিতেন। নিউজিল্যান্ডকে তাদের ইতিহাসে প্রথমবারের মত তুলেছিলেন বিশ্বকাপ ফাইনালে।

তবে নিজের সেরা ব্যাটিংয়ের  খানিকটা যেন তুলে রেখেছিলেন শেষের জন্য। ক্রাইস্টচার্চে নিজের শেষ টেস্ট খেলতে নেমে তুলে নেন ৫৪ বলে, যা কিনা টেস্ট ইতিহাসের দ্রুততম সেঞ্চুরির রেকর্ড। সেদিন মাত্র ৭৮ মিনিটেই স্পর্শ করেন তিন অংকের কোটা। শেষ পর্যন্ত ৭৯ বলে ১৪৫ রানের ঝড় চালিয়ে থেমেছিলেন ম্যাককালাম। মাঠ ছাড়লেও ক্রিকেট ছাড়তে পারেননি, বর্তমানে ইংল্যান্ড জাতীয় টেস্ট দলের কোচ তিনি। খেলোয়াড়ি জীবনের আগ্রাসী মনোভাব ছড়িয়ে দিয়েছেন শিষ্যদের মাঝেও। অদূর ভবিষ্যতেই তাই তাঁর শিষ্যদের কেউ দ্রুততম সেঞ্চুরির রেকর্ড ভেঙে দিলেও আশ্চর্য হওয়ার কিছু থাকবে না।

  • রিচি বেনো (অস্ট্রেলিয়া) – ৭৮ মিনিট

সর্বকালের সেরা ব্যাটসম্যান, বোলার কিংবা ফিল্ডার নিয়ে বিতর্ক থেকেই যাবে, কিন্তু সেরা ধারাভাষ্যকার হিসেবে বোধহয় রিচি বেনো অতুলনীয়ই থেকে যাবেন। অথচ ধারাভাষ্যকার হিসেবে তাঁর পরিচয় দিতে গিয়ে অনেকেই ভুলে যান তাঁর ক্রিকেট জীবনের কথা। রিচি বেনো ছিলেন অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা অধিনায়ক, অসাধারণ এক ব্যাটসম্যান, কার্যকরী এক বোলার। দুই হাজার রান এবং দুইশ উইকেটের মাইলফলকে পৌঁছানো প্রথম ক্রিকেটার রিচি বেনো।

এই তালিকার বাকিদের চাইতেও রিচি বেনো খানিকটা আলাদা। বাকিরা টপ অর্ডার কিংবা মিডল অর্ডারে নেমে এই ইনিংস খেললেও, রিচি বেনো ৭৮ মিনিটে সেঞ্চুরির এই ইনিংসটি খেলেছেন নয় নম্বরে নেমে। ১৯৫৫ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের কিংস্টনে এই ইনিংস খেলেন এই কিংবদন্তি। কেবল ব্যাট হাতে নয়, বল হাতেও আলো ছড়িয়েছিলেন বেনো। দ্বিতীয় ইনিংস তিন উইকেট নিয়ে অজিদের জয়ের পথটা সুগম করেছিলেন তিনি।

  • মিসবাহ-উল হক (পাকিস্তান)- ৭৪ মিনিট

এই তালিকার প্রথম নামটি দেখে আশ্চর্য না হয়ে উপায় নেই। পুরো ক্যারিয়ারেই তিনি বারবার আলোচিত-সমালোচিত হয়েছেন নিজের ধীরগতির ব্যাটিং এর জন্য। সমর্থকরা তো তাঁর নামই দিয়েছে ‘মি. টুকটুক’। অথচ তিনিই কিনা টেস্ট ইতিহাসের সবচেয়ে কম সময়ে সেঞ্চুরির মালিক। তিনি মিসবাহ উল হক, পাকিস্তানের সাবেক অধিনায়ক।

২০১৪ সালে আবুধাবিতে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে মাত্র ৫৬ বলে সেঞ্চুরি তুলে নেন মিসবাহ। সেদিনই প্রথম বিশ্ববাসী দেখতে পেয়েছিল সুযোগ পেলে কতোটা বিধ্বংসী হতে পারেন এই ব্যাটসম্যান। তাঁর এই ইনিংসে ভর করে সেদিন অজিদের হেসে-খেলেই হারিয়েছিল পাকিস্তান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link