আইরিশ রূপকথার নেপথ্যে…

স্কটল্যান্ডের দেয়া ১৭৭ রানের টার্গেটে প্রথম ১০ ওভারে ৬৫ রানেই নেই ৪ উইকেট। আইরিশ শিবিরে তখন চিন্তার ছায়া। কারণ তখন পর্যন্ত ৬০ বলে ১১২ রানের লক্ষ্য অনেক দূরের পথ। টানা দুই হারে বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে যাওয়ার আশঙ্কা তাই প্রবল। 

কিন্তু না। আইরিশদের এমন দুঃস্বপ্নের মাঝে আলো জ্বেলে দিতে আসলেন কার্টিস ক্যাম্ফার আর জর্জ ডকরেল। তাদের নিরবচ্ছিন্ন ৫৭ বলে ১১৯ রানের জুটিতে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে নিজেদের ইতিহাসে সর্বোচ্চ রান তাড়া করে জয় পেল আইরিশরা। কার্টিস ক্যাম্ফার খেললেন ৩২ বলে ৭২ রানের ঝড়ো ইনিংস, আর জর্জ ডকরেল করলেন ২৭ বলে ৩৯ রান। 

আয়ারল্যান্ডকে একদম খাদের কিনারা থেকে কিভাবে তুললেন এ দুই ক্রিকেটার? একদম নিঃশেষ হয়ে যাওয়া আশা থেকে কিভাবে আশা পূরণের আনন্দে আইরিশদের ভাসালেন? ম্যাচশেষে সেটি নিয়ে কথা বলেছেন কার্টিস ক্যাম্ফার, জর্জ ডকরেল- দুজনেই। 

ম্যাচ শেষে কার্টিস ক্যাম্ফার বলেন, ‘জর্জ যখন উইকেটে আসে তখন আমরা গভীরভাবে ম্যাচটা পর্যবেক্ষণ করছিলাম। ভিন্ন বোলারদের বিপক্ষে ভিন্ন কিছু পরিকল্পনা এঁটেছিলাম। আর সেটা বেশ ফলপ্রসূ হয়েছে। পরিকল্পনামাফিক কাজ হয়েছে বলেই আমরা জিতেছি। এটা আসলেই ভাল গেম প্লান ছিল।’

ক্যাম্ফারের সাথে ডকরেল আরো যুক্ত করে বলেন, ‘আমার আর কার্টিসের ভাল পরিকল্পনা ছিল। আমরা শেষে বেশ ভাল খেলেছিলাম। কারণ মোমেন্টামটা আমাদের দিকে নিয়ে ফেলেছিলাম ততক্ষণে। আর আমরা প্রথম ম্যাচে ভাল জুটি করেছিলাম। কিন্তু যেটা ঐ দিনে হয়নি সেটা আজকে হয়েছে।’

ডকরেল আরো বলেন, ‘স্কোয়ার বাউন্ডারিটা ছোট ছিল। আর আমি ঐ প্রান্তেই হিট করার টার্গেট করেছিলাম। আর আমি সুইপ শটও ট্রাই করেছি। মূলত পরিকল্পনা আর এক্সিকিউশনে আমরা ভাল সংমিশ্রণ ঘটাতে পেরেছিলাম। নাহলে এমন ম্যাচ জেতা সম্ভব ছিল না’।

কার্টিসের ব্যাটিং নিয়েও কথা বলেন ডকরেল। তার ৩২ বলে বিধ্বংসী ৭২ রানের ইনিংস নিয়ে বলেন, ‘কার্টিস সুইপ এবং রিভার্স সুইপ খুব ভাল খেলে। আর ঐ শট খেলেই ও প্রচুর বাউন্ডারি বের করতে পেরেছে।’

আইরিশদের এ ম্যাচ জয়ে রানিং বিটউইন দ্য উইকেটও বেশ কাজে দিয়েছে। তাঁরা ১৩ টা ডাবল, আর দুইটা তিন রানও নিয়েছেন। এর সাথে বাউন্ডারি তো ছিলই। সব মিলিয়ে একদম পারফেক্ট পরিকল্পনায় এগিয়েছে ক্যাম্ফার-ডকরেল জুটি। 

চাপের মুহূর্তে এমন ব্যাটিংয়ের কৃতিত্ব দিতে ব্যাটিং কোচ গ্যারি উইলসনের কথা ভুলে যাননি জর্জ ডকরেল। তিনি বলেন, ‘যে কোনো পরিস্থিতিতে সঠিক পরিকল্পনায় এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে উইলসনের ভূমিকা অনেক। সে সবসময়ই বলে এসেছে, পরিস্থিতি যেমনই থাকুক, সম্ভাব্য ফল যাই আসুক শুধু সামনের দিকে এগিয়ে যেতে। এর ফল প্রতিদিন আসবে না, কিন্তু এই প্রসেসের ফলে টিম হিসেবে আরো মানসিকভাবে দৃঢ় হওয়া সম্ভব।’

১৭৭ রানের টার্গেটে ডকরেল, ক্যাম্ফারের ব্যাটিংয়ে আরেকটি ব্যাপার লক্ষণীয়। দুজনই ভিন্ন ভিন্ন এরিয়ায় শট খেলেছেন। ডকরেল যেখানে লং অন, লং অফে ১৩ রান করেছেন সেখানে ক্যাম্ফার সেই প্রান্তে বলতে গেলে শটই খেলেননি। মাত্র ৪টি  রান পেয়েছেন ঐ প্রান্ত থেকে। আবার স্কোয়ার লেগে তিনি ২৭ রান করেছেন। যেখানে ডকরেল কোনো রানই করেননি। মূলত দুজন মিলে মাঠের পুরোটাই কাভার করেছেন। আর এখানেই স্কটিশরা পিছিয়ে পড়েছিল। 

স্কটল্যান্ডকে হারিয়ে চূড়ান্ত পর্বে খেলার স্বপ্ন জিইয়ে রাখলেও এখনো পয়েন্ট টেবিলের তলানিতে আইরিশরা। তবে পরের ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারালে সুপার টুয়েলভে চলে যাবে তাঁরা। ক্যারিবিয়ানদের হারানো সহজ কাজ নয়। তবে বড় আসরে এসে চমক দেখানো তাদের ইতিহাসেই রয়েছে। সেই অতীত ইতিহাসকে সঙ্গী করেই আইরিশরা এখন আরেকটি রূপকথার অপেক্ষায়। সে রূপকথার মঞ্চস্থ হতেও আর বেশি দেরি নেই। ২১ অক্টোবরের ম্যাচেই সেটি জানা যাবে।

লেখক পরিচিতি

বাইশ গজ ব্যাসার্ধ নিয়ে একটি বৃত্ত অঙ্কন করার চেষ্টা করি...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link