নাকের নিচে গোঁফ আঁটা, চুল কখানা বেশ ছাঁটা, মারছে তবু লাগছে না!
লকি ফার্গুসনকে যখন প্রথমবারের মত দেখি এমন একটা কাব্যিক ভাব আপনার মধ্যে আসলে আপনাকে কিন্তু মোটেও দোষ দেওয়া যায়না। ছেলেটার অভিষেক হয়েছিল বাংলাদেশের সাথেই। তাই প্রথম থেকেই লকি ফার্গুসনকে দেখার একটা সৌভাগ্য বা সুযোগ যেটাই বলা হোক না কেন, মিলেছিল!
নিউজিল্যান্ডের কোচ বারবার বলছিলেন, লকি ফার্গুসনের বিশেষত্ব তাঁর গতি। তবে সেই সিরিজে লকি ফার্গুসন মনে করিয়ে দিচ্ছিলেন, লাইন লেংথ ঠিক না রেখে শুধু গতির ওপর বল করে উইকেট পাওয়া আসলে কঠিন। এই কঠিনের জন্যেই কিনা কে জানে, খুব বেশি হইচই তুলতে পারেননি তিনি প্রথমেই।
তবে দিন যত গড়িয়েছে, লকি ফার্গুসন হয়ে উঠেছেন ক্রিকেটের নতুন স্পিড-গান। উনিশ বিশ্বকাপে তো তাকে দেখে ক্রিকেট রোমান্টিকেরা মুগ্ধতার ছড়াগান গেয়ে উঠেছেন নির্দ্বিধায়। গতি, বাউন্স, লাইন, লেংথ, স্কিল- কি নেই লকির ভান্ডারে! একজন ফাস্ট বোলারের বোলিং দেখা কতটা চোখের শান্তি হতে পারে তা শোয়েব আখতার, মিশেল জনসনের পর অনেকদিন বাদে দেখেছে বিশ্ব লকি ফার্গুসনের সৌজন্যে।
তবে ক্রিকেটে ত্রাস ছড়ানো এই ফার্গুসনের প্রথম প্রেম কিন্তু মোটেও ক্রিকেট ছিল না। বাস করেন নিউজিল্যান্ডে, সেখানে ক্রিকেটের চাইতে রাগবি অনেক বেশি জনপ্রিয়। রাগবি খেলোয়াড় ক্রিস্টিয়ান কুলেনকে দেখে তাই অল্প বয়সেই সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছিলেন, রাগবি খেলোয়াড় হবেন!
ক্রিস্টিয়ান কুলেন কিভাবে ফার্গুসনের চোখের প্রেম হয়ে গেলেন, সেটা শোনা যাক ফার্গুসনের ভাষ্যেই, ‘প্রথম যখন আমি কুলেনকে দেখি, তিনি হারিকেন্সের হয়ে মাঠে নেমেছিলেন। প্রতিপক্ষ দল স্কোর করার চেষ্টা করছিল। আমি বসেছিলাম একদম সাইডলাইনে। হঠাৎ করে প্রতিপক্ষের হাত থেকে বল ছুটে গেলে কুলেন দ্রুত তিন জনকে কাটিয়ে ফেলেন, এক প্রান্ত থেকে বল নিয়ে আরেক প্রান্তে ছুটে যান স্কোর করতে। আমি চোয়ালে হাত দিয়ে ওর ক্ষীপ্রতা দেখে ভাবছিলাম, এই লোকটা সাংঘাতিক।’
খেলাধূলা আমাদের প্রভাবিত করে তা আমরা জানি। করেছিল লকি ফার্গুসনকেও। তাইতো সাংঘাতিক এই লোকটাকে দেখেই রাগবি খেলার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছিলেন রাগবি ম্যাচের সাইড গ্যালারিতে বসেই।
তবে এরপর নিয়তি আর তাকে রাগবি খেলোয়াড় বানায়নি। ক্রিকেট দেবীর কোন এক সুপ্ত ইচ্ছাতেই হয়তো তিনি হয়ে গেছেন ক্রিকেটার, পারতপক্ষে ফাস্ট বোলার।
লকি ফার্গুসনের অভিষেক ম্যাচের কথা বলছিলাম। অভিষেকেই যখন তিনি আলো ছড়াতে পারলেন না, নিউজিল্যান্ড দলে বাকি সদস্যদের মধ্যে তখন ছিলেন ট্রেন্ট বোল্ট, টিম সাউদি, ম্যাট হেনরি, কোরি অ্যান্ডারসন-সহ অনেকেই। তাই অভিষেকের পরই তাকে নিয়ে আলোচনা হতে শুরু হল। সেই আলোচনার ঢাল হয়ে দাঁড়িয়ে গেলেন নিউজিল্যান্ড কোচ । বলে দিলেন, উনিশ বিশ্বকাপ ভাবনায় আছেন লকি ফার্গুসন।
লকি ফার্গুসন এরপর দলের সাথে থেকে গেছেন, কখনও কখনও বাদও পড়েছেন। তবে নিউজিল্যান্ড ক্রিকেটের ভাবনা থেকে লকি ফার্গুসনকে সরানো যায়নি কখনই। শুরুর দিকের সীমাবদ্ধতাগুলো আস্তে আস্তে কাটিয়ে উঠেছেন তিনি দিনে দিনে।
লকি ফার্গুসনও হয়ে উঠছেন অসাধ্য এক ফাস্ট বোলার। আইপিএলে ডাকাডাকির হইচই পড়ে গেছে, ফ্রাঞ্চাইজি ক্রিকেটের হট কেক হয়ে গেছেন। তবে রাগবির প্রতি ভালবাসা তাঁর এখনও আছে।
তা থাকুক,প্রথম প্রেম তো আর ভোলা যায়না! এই প্রথম প্রেম বুকে নিয়েও লকি ফার্গুসন জানেন, তাঁর এখনও অনেকটা পথ হাঁটা বাকি!