উদযাপন গুলো থাকুক

সুরিয়াকুমার যাদব তখন ইনিংসের শেষ বলটি খেলবেন। ২৪ বল খেলে তাঁর ব্যাট থেকে এসেছে ৪৫ রান। শেষ বলটা কব্জির মোচড়ে ঘুরিয়ে স্কয়ার লেগের উপর দিয়ে বিশাল ছয়। অর্ধশতক পূর্ণ হলো সুরিয়াকুমারের। অথচ সেটা বোধহয় খেয়াল করতে পারেননি তিনি কিংবা করলেও উদযাপন করেননি। অন্য প্রান্তে থাকা বিরাট কোহলি এসে জড়িয়ে ধরলেন। একটা উদযাপনের ভঙ্গিও দেখিয়ে দিলেন। যেন সুরিয়াকুমারকে বলছিলেন, ‘হাফ সেঞ্চুরি হলো তো, উদযাপন কর।’

বিরাট কোহলির দেখানো ভঙ্গিতেই এরপর উদযাপন করলেন সুরিয়াকুমার। দুহাত আকাশে তুলে একটু নেচে ওঠার মত। সুরিয়ার অর্ধশতক, অথচ কোহলি মনে করিয়ে দিচ্ছেন, উদযাপনের ভঙ্গি দেখিয়ে দিচ্ছেন। এই ছবিটাই বুঝি একজন কোহলি, একটা জুটি কিংবা একটা ভারত দলকে আলাদা করে, অনন্য করে তোলে।

পাকিস্তানের বিপক্ষে কী অবিস্মরনীয় এক জয় এনে দিয়েছিলেন বিরাট কোহলি। ভারতের জন্য, ক্রিকেট দুনিয়ার জন্য তার চেয়েও বড় স্বস্তি কোহলির সেই চেনা রূপ। ব্যাট হাতে কোহলির সেই রাজত্ব, শরীরি ভাষায় সেই আগ্রাসনটাই যেন বড় পাওয়া। আর সেই আগ্রাসনটাই সুরিয়ার মাঝেও ছড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা কোহলির।

প্রথম ম্যাচে পাকিস্তানের বিপক্ষে জেতার পর নিশ্চয়ই ফুরফুরে মেজাজেই ছিল ভারত দল। আজ নেদারল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচ। তুলনামূলক সহজ প্রতিপক্ষ ভারতের জন্য। তবে সিডনিতে ব্যাট করতে নেমে শুরুটা ভাল হয়নি। লোকেশ রাহুল ইনিংসের শুরুতেই আউট হয়েছেন। এরপর ভারতকে টেনে তোলার চেষ্টা করেছেন রোহিত শর্মা। সঙ্গ দিয়েছেন বিরাট কোহলি।

তবে বাউন্ডারি আদায় করতে পারছিল না ভারত। পাওয়ার প্লেতে ভারত করেছে মাত্র ৩২ রান। এমনকি প্রথম দশ ওভার শেষে ভারতের স্কোর ছিল ৬৭। সেখান থেকে ভারত তাঁদের স্কোর নিয়ে গিয়েছে ১৭৯ তে। আর এই কাজটা করা গিয়েছে সুরিয়াকুমারের হাফ সেঞ্চুরির জন্যই। দুইশোর বেশি স্ট্রাইকরেটে খেলা একটা ইনিংস।

বিরাট কোহলি এই ইনিংসের গুরুত্ব বোঝেন। কোহলি এই হাফ সেঞ্চুরির মাহাত্ম জানেন। তাইতো ইনিংসের শেষ বলে ছয় মারা সুরিয়াকুমারকে উদযাপনের কথা মনে করিয়ে দিলেন। হয়তো বলছিলেন,’ শুধু খেললে হবে, খেলাটাকে উপভোগ করতে শেখ।‘ কোহলির চেয়ে বেশি ক্রিকেটটা কেইবা উপভোগ করতে পারেন।

রোহিত শর্মা, বিরাট কোহলি ও সুরিয়া কুমার তিনজনেরই অর্ধশতকে মাত্র দুই উইকেট হারিয়েই ১৭৯ করেছে ভারত। সর্বোচ্চ স্কোরটা আজও এসেছে কোহলির ব্যাট থেকেই। রোহিত, সুরিয়া দুজনের সাথেই দারুণ জুটি গড়েছেন। আজ কোহলি ৪৪ বল খেলে করেছেন ৬২ রান। ব্যাটিং করেছেন প্রায় ১৪০ স্ট্রাইকরেটে।

এছাড়া রোহিত শর্মা শুরুর ধকলটা সামলাতে একটু ধীর গতিতেই খেলেছেন। তিনি আউট হয়েছেন ৩৯ বলে ৫৩ রান করে। আর সুরিয়াকুমারতো শেষ দিকে এসে রীতিমত ঝড় তুললেন। তাঁর ২৫ বলে ৫১ রানের ইনিংসটাতে ছিল সাতটি চার আর শেষ বলেই ওই একটা ছয়। এই ইনিংসটা, এই ছয়টা হয়তো সুরিয়া ভুলেও যেতে পারবেন, তবে কোহলির সাথে করা এই উদযাপনটা নিশ্চয়ই তাঁর মনে থাকবে অনেকদিন। কোনদিন যদি কোহলি ওই বাইশ গজে না থাকেন, হয়তো সেদিনও।

লেখক পরিচিতি

আমার ডায়েরির প্রতিটা পৃষ্ঠাই আমার বাইশ গজ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link