পাকিস্তান তো বটেই বিশ্ব ক্রিকেটের অন্যতম সেরা পেসার হিসেবে গণ্য করা হয় তাকে। তাঁর স্যুইং বিষে কতশত সেরা ব্যাটারদের নাকাল করেছেন তা তো হিসেবের বাইরে। এবার নিজে বিষাক্ত বস্তুতে আসক্ত থাকার কথা জানিয়ে যেন বোমা ফাটালেন ওয়াসিম আকরাম। নিজের আত্মজীবনীতে লিখেছেন ক্রিকেটের সুইং অফ সুলতান ক্রিকেট ক্যারিয়ারের পরবর্তী পর্যায়ে এসে তিনি বিষাক্ত নেশাজাতীয় দ্রব্যে আসক্ত হয়ে পড়েছিলেন।
১৯৮৪ সালে পাকিস্তানের হয়ে অভিষিক্ত ওয়াসিম আকরাম পরবর্তী ১৯ বছর পাকিস্তানের জার্সি গায়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে খেলেছিলেন। তার সময়ে ওয়াকার ইউনুস, ইমরান খানদের মতো বোলারদের সাথে সমানতালে পারফর্ম করে গিয়েছেন তিনি। ২০০৯ সালে শ্রীলঙ্কার মুত্তিয়া মুরালিধরন একদিনের ক্রিকেটে সর্বোচ্চ উইকেটশিকারীর তালিকায় শীর্ষস্থান দখল করেন। তার আগে পর্যন্ত ৫০২ উইকেট নিয়ে ওয়াসিম আকরামই ছিলেন নাম্বার ওয়ান।
আত্মজীবনী ‘সুলতান: আ মেমোয়ার’ এ ওয়াসিম আকরাম লিখেন, ‘আমি পার্টি করতে পছন্দ করতাম। নিজেকে খুব প্রশ্রয় দিয়ে ফেলেছিলাম।’
তিনি আরো লিখেন, ‘দক্ষিণ এশিয়ার সংস্কৃতিটাই এমন যেখানে আপনি প্রলোভনের বশবর্তী হয়ে বিপথগামী হতে পারেন। আপনি একই রাতে দশটি পার্টিতে যেতে পারেন এবং কেউ কেউ তা করেও। এই সংস্কৃতিই আমার উপর বিরূপ প্রভাব ফেলেছে।’
বইয়ে তিনি কোকেনের উপর কিভাবে তার আসক্তি জন্মানো শুরু করে তা নিয়েও বিস্তারিত বর্ণনা করেন। বইয়ে প্রকাশ করেন, “সবচেয়ে বাজে অবস্থা তৈরি হয়েছিলো যখন আমার কোকেনের উপর আসক্তি তৈরি হয়। অনেকটা অসচেতনভাবেই প্রথমবার গ্রহণ করেছিলাম। ইংল্যান্ডের এক পার্টিতে প্রথমবার কোকেন নেওয়ার পর এটা ধীরে ধীরে আসক্তিতে পরিণত হয়েছিলো আমার জন্য।”
তিনি কোকেন গ্রহণের জন্য তার সাবেক স্ত্রী হুমা আকরামের সাথে মিথ্যার আশ্রয় নিয়েছিলেন বলেও জানান। এই পেসার জানান, ‘হুমা তখন তার মা ও পরিবারের সাথে দেখা করার জন্য করাচিতে স্থায়ী হতে চাইতো। আমি সবসময়ই তাকে বাধা দিতাম কারণ লুকিয়ে করাচি গিয়ে কোকেন সেবন করতাম। তবে একদিন সে আমার মানিব্যাগে কোকেনের প্যাকেট খুঁজে পায়। কোনো ধরনের প্রতিক্রিয়া না দেখিয়ে আমাকে পুনর্বাসনে সাহায্য করার জন্য রাজি হয়।’
বিরল ফাঙ্গাসের আক্রমণে স্ত্রী হুমার মৃত্যু ওয়াসিম আকরামকে পাল্টে দেয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি পুনর্বাসনে অংশ নিলেও এই প্রক্রিয়া আমার উপর তেমন কোনো প্রভাব ফেলেনি। লাহোরের ডাক্তাররা রোগীর দিকে নজর দেয়ার বদলে পরিবারের সাথে কারসাজিতেই মনোনিবেশ করতো। হুমার মৃত্যু আমাকে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করেছিলো। সম্পূর্ণ জীবনে সে নিঃস্বার্থ ভাবে আমাকে সাহায্য করে গিয়েছে। তার মৃত্যুর পর আমি সকল নেশাজাতীয় দ্রব্য সেবন ত্যাগ করি এবং আজ পর্যন্ত পিছনে ফিরে তাকাইনি।’
ওয়াসিম আকরাম পাকিস্তান ক্রিকেটের কিংবদন্তি হিসেবে অবসর নিয়েছিলেন। ১০৪ টেস্ট ম্যাচে ৪১৪ উইকেট শিকার করেছিলেন তিনি। ১৯৯২ বিশ্বকাপজয়ী দলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ছিলেন এই পেসার। ওই আসরের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি ছিলেন তিনি।