তুফানের মাঝে বটবৃক্ষ

ঝঞ্ঝার মত উদ্দাম। প্রলয়কারী তুফানের মাঝেও ঠায় দাঁড়িয়ে থাকা বটবৃক্ষ। কাঠফাঁটা রোদ আর কনকনে ঠান্ডায় মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকা পর্বত শৃঙ্গ। এসব বিশেষণও হয়ত কম হয়ে যাবে সুরিয়াকুমার যাদবের জন্যে। সবকিছু যখন প্রতিপক্ষের হাতের মুঠোয়, তখনও চোখে চোখ রেখে লড়াই করে যাওয়ার এক বৃহদাকার মূর্তি। আক্রমণের জবাবটা যে দিতে হয় পাল্টা আক্রমণ করেই, আরও একবার বুঝিয়ে দিলেন সুরিয়াকুমার যাদব।

গেল আসরের ভরাডুবির পর নতুন উদ্দ্যমে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের অষ্টম আসরে ভারত। রীতিমত উড়ন্ত সূচনা। এরপরের ম্যাচটায় লড়াই করবার তেমন রসদ নেই। এই বিশ্বকাপের প্রথম বারের মত বিশাল এক ধাক্কা খেতে হল টিম ইন্ডিয়াকে। অস্ট্রেলিয়ার পার্থের বাউন্সি এবং পেস বান্ধব উইকেটে বিস্ফোরণে ছড়িয়ে ছিটিয়ে গেছে গোটা ভারতের ব্যাটিং লাইনআপ।

দক্ষিণ আফ্রিকার পেস আক্রমণ এই আসরের অন্যতম আগ্রাসী। একটু সুযোগ পেলেই যেকোন ব্যাটিং লাইনআপকে লণ্ডভণ্ড করে দিতে পারেন লুঙ্গি এনগিডি, এনরিচ নর্কিয়া ও কাগিসো রাবাদা। তাদের তাণ্ডবের ভয়ংকর রুপটার সাক্ষী রোহিত শর্মা, বিরাট কোহলিরা। ৪৯ রানেই ভারতের অর্ধেক ব্যাটিং লাইনআপ প্যাভিলনে। তখনও একজন লড়াই করবেন বলে সিদ্ধান্ত নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন বাইশ গজের শক্ত মাটি আকড়ে। তিনি সুরিয়াকুমার যাদব।

শত হুঙ্কারও যেন দমাতে পারেনি তাঁকে। সুরিয়া নিজের রুপটার ছাড় যেন দিতে চাননি একটা মুহূর্তের জন্যে। স্বরুপে থেকেই সকল আঘাতের জবাব দিতে থাকেন তিনি। ধারাভাষ্যকক্ষ থেকে বারবার প্রশংসা কুড়িয়েছেন সুরিয়াকুমার। সেখানে থেকে বলা হল এবি ডি ভিলিয়ার্স ও সুরিয়াকুমার যাদবের মত ব্যাটারদের জন্যে নাকি ক্রিকেট মাঠের কোন অংশই আর অব্যবহারযোগ্য নেই। তাঁরা সব অঞ্চল দিয়েই তাঁরা রান আদায় করে নিতে পারেন। সুরিয়া সেই চেষ্টাই যেন করে গেছেন শুরু থেকে শেষ অবধি।

ব্যাটিং লাইনআপ যখন তাসের ঘর তখন তিনি চেষ্টায় লড়াই করবার পুঁজি জড়ো করতে। দল বিপর্যয়ের দ্বারপ্রান্তে, তবুও রান করবার গতি কমানোর দিকে ভ্রুক্ষেপ করেননি সুরিয়া। তিনি রান করে গেছেন ১৭০ স্ট্রাইকরেটে। তুলে নিয়েছেন অর্ধশতক। এবারের বিশ্বকাপে এটা তাঁর দ্বিতীয় অর্ধশতক। ধারণা করা হচ্ছিল সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকদের তালিকায় উপরের সারিতেই থাকবেন তিনি। সে ধারণা এখন অবধি সত্য হবার পথে। তবে বিপদের মুখে সুরিয়াকুমারের এই ইনিংসটা আলাদাই মাহাত্ম্য বহন করে।

খাদের কিনারা থেকেও মারকাটারি ব্যাটিং করে প্রতিপক্ষ বোলারদের ভরকে দেওয়ার অন্যতম উদাহরণ স্থাপন করলেন সুরিয়াকুমার। সেই সাথে ভারতের ক্রিকেট ইতিহাসের নিজের নামটা আরও একটু শক্ত করে এঁটে নিলেন। চার বা তার নিচের অবস্থানে ব্যাট করা ব্যাটারদের মধ্যে সর্বোচ্চ অর্ধশতকের মালিক তিনি। সংখ্যাটা নয়। বৈরি পরিস্থিতির মাঝেও সুরিয়াকুমারদের এই ৪০ বলে ৬৮ রানের ইনিংসগুলো প্রমাণ করে ঠিক কতটা পরিপক্কতা অর্জন করে ফেলেছেন তিনি।

ভারতের মহান নেতা মহাত্মা গান্ধী বলেছিলেন যে কেউ একগালে চড় মারলে আরেক গাল এগিয়ে দিতে। তবে নতুন দিনের সুরিয়াকুমাররা পাল্টা আক্রমণে বিশ্বাসী। তাইতো দুরন্ত বোলিংয়ের সামনেও অবলীলায় রান করে গেছেন তিনি। ভারতের মোট সংগ্রহের অর্ধেক রানই এসেছে তাঁর ব্যাট থেকে। তাঁর ওই প্রায় সত্তর রানের ইনিংসে ভর করেই ১৩৩ রানের লড়াই করবার সংগ্রহ পায় ভারত। এরপরের সবটুকু গল্প নিশ্চয়ই নতুন করে বলবার নয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link