বিশ্বকাপ শুরুর আগেই বলে রেখেছিলেন, হেক্সা জয়ের জন্য নিজেকে একদম নিঙড়ে দিবেন। সার্বিয়ার বিপক্ষে বিশ্বকাপের অভিষেকে সেই কথারই যেন প্রতিফলন ঘটালেন রিচার্লিসন। থমকে যাওয়া একটি ম্যাচে হঠাৎ প্রাণ এনে দিলেন।
একই সাথে সেলেসাও সমর্থকদের মনেও প্রশান্তির এক আবহ বইয়ে দিলেন। ব্রাজিলের ২-০ গোলে জেতা ম্যাচে দুটি গোলই আসলো ব্রাজিলিয়ান এই নাম্বার নাইনের পা থেকে। অথচ, তিনি ঠিক নাম্বার নাইন ধাচের খেলোয়াড়ই নন। নেহায়েৎ কেউ নেই বলে এই পজিশনে খেলানো হয়।
রিসার্লিসনের প্রথম গোলটির উৎস ছিল নেইমারের ড্রিবলিং আর ভিনিসিয়াসের গোলমুখো শট। ভিনিসিয়াসের শটে সার্বিয়ান গোলরক্ষক থেকে ফিরে আসা বলেই সার্বিয়ার জালে বল জড়ান রিসার্লিসন। আর এর পরের গোলটি তো রীতিমত দুর্দান্ত। পরের গোলটি রিচার্লিসন করেন চোখ জুড়ানো ওভারহেড বাই সাইকেল কিকের মাধ্যমে।
সম্ভবত এ গোলটিই কাতার বিশ্বকাপের এখন পর্যন্ত সেরা গোল। বল নিয়ে দারুণ নিয়ন্ত্রণে ওভারহেডে বাইসাইকেল কিকে নান্দনিক এক গোল। এমন নান্দনিকতায় মুগ্ধ না হয়ে উপায় কই!
২০১৮ সালে ব্রাজিল জার্সি গায়ে অভিষেক হয়েছিল রিচার্লিসনের। সেই থেকেই সেলেসাওদের আস্থার প্রতিদান দিয়ে আসছিলেন এ স্ট্রাইকার। গোল স্কোরিং সক্ষমতার জন্য তাঁকে নিয়ে ইউরোপের ক্লাব গুলোর কাড়াকাড়ি আগে থেকেই ছিল।
২০২২ জুড়েও ছিলেন দারুণ ছন্দে। বিশ্বকাপ শুরুর আগের ৬ ম্যাচে দিয়েছিলেন ৭ গোল। এবার সেই ফর্ম টেনে এনেছেন কাতার বিশ্বকাপেও। বিশ্বকাপে নিজের প্রথম ম্যাচেই ছড়ালেন দ্যুতি। ব্রাজিলকে জেতালেন। গোল করলেন। স্বপ্নের পথে এগিয়ে গেলেন।
ব্রাজিলিয়ান নাম্বার নাইন বলতে চোখের সামনে ভেসে আছে রোনালদো ডি লিমার নাম। শুধু ব্রাজিলের নয়, তর্ক সাপেক্ষে বিশ্বকাপের ইতিহাসেরই সেরা গোলস্কোরার বলা হয় এই ব্রাজিলিয়ানকে।
ব্রাজিলের শেষ বিশ্বকাপ শিরোপার আসনে বসিয়েছিলেন তিনিই। ২০০২ এর সে বিশ্বকাপে তিনি একাই করেছিলেন ৮ গোল। ৯৮ এর গোল্ডেন বল জয়ী সেবার জিতেন গোল্ডেন বুটের পুরস্কার। একই সাথে নিজেকে কিংবদন্তীর পর্যায়ে নিয়ে যান ঐ বিশ্বকাপ দিয়েই।
রোনালদো ডি লিমার পরে ব্রাজিল দলে আরো বেশ কজন নাম্বার নাইন এসেছেন। কিন্তু ব্রাজিলের হেক্সা জয়ের পথে কেউই সেই দৌড়টা শেষ করতে পারেননি। কাতার বিশ্বকাপে এসে সেই দৌড়ের পথে দুর্দান্ত গতিতে যাওয়ার স্বপ্ন দেখিয়েছেন রিচার্লিসন। নিজের লক্ষ্যের কথা জানিয়েছেন অকপটেই। তবে রিচার্লিসন তাঁর কথাতেই স্থির থাকেননি। উত্তাল সমুদ্রে শত প্রতিকূলতায় সেটি পাড়ি দেওয়ার দু:সাহস দেখিয়েছেন।
রিচার্লিসন কিংবা গোটা ব্রাজিল দল, দুইয়েরই স্বপ্ন একই সূত্রে গাঁথা। সেই স্বপ্নের প্রথম ধাপটা ভালভাবেই উতরে গেছে ব্রাজিল। এখন অন্তিম লগ্নে শিরোপা উঁচিয়ে ধরার জন্য প্রয়োজন আরো বেশ কিছু ধাপ অতিক্রম করা। ব্রাজিলের যেমন দল কিংবা মনোবল, তাতে সে পথ সম্ভবই। হেক্সা জয়ের মিশনে তাদের চোখ আগে থেকেই ছিল।
এবারের টা হয়তো তারা প্রবলভাবে চাইতেই পারে। প্রয়োজন শুধু আরো কিছু ম্যাচে রিচার্লিসনের মতো ব্যক্তি নৈপুণ্য। কিংবা রিচার্লিসন পুরো বিশ্বকাপ জুড়ে সার্বিয়া ম্যাচের রিচার্লিসন থেকে গেলে ২০০২ এর মতো ২০২২ এর রিচার্লিসনের মাঝে রোনালদোকে খুঁজে নিতে পারে ব্রাজিল সমর্থকরা।
না, রিচার্লিসন কোনো ভাবেই রোনালদো হয়ে যাননি। তবে, এটা ঠিক এভাবে গোলের ধারা বজায় থাকলে তিনি নিজের নামেই হয়তো গ্রেটনেস ছুঁতে পারবেন!