মরুর বুকে একটা বিষাদের আবহ তৈরি হয়েছিল। ২০০২ সালের পরে কি তবে এশিয়ার মাটিতে আবার ফেবারিট হয়ে আসা আর্জেন্টিনার বিদায় হবে? আশঙ্কা তো ছিলই।
তবে, আপাতত সেটি হয়নি। ত্রাণকর্তা হিসেবে আবারও হাজির হলেন লিওনেল মেসি। থমথমে একটা পরিস্থিতিতে হঠাৎই দুরপাল্লার এক শটে প্রাণ এনে দিলেন। লুসাইল থেকে রোজারিও, এমনকি পুরো বিশ্বের কোটি সমর্থককে উচ্ছ্বাসে ভেসে গেল ঐ একটি শটেই। কারণ মেক্সিকোর বিপক্ষে এটিই যে বাঁচা মরার এক লড়াই ছিল আর্জেন্টিনার জন্য।
মেসির শেষ বিশ্বকাপ। তাঁকে ঘিরে স্বপ্নটা ছিল বড়ই। কিন্তু সেই স্বপ্নে ধাক্কা আসে শুরুতেই। সৌদি আরবের কাছে প্রথম ম্যাচে হেরে বসে আর্জেন্টিনা। এমন অপ্রত্যাশিত হারে চাপটা মেসির দিকেই বেশি ধেয়ে আসছিল।
চাপের ম্যাচেই কেন মেসি বারবার মুখ থুবড়ে পড়েন-এমন আলোচনা সমালোচনায় বিদ্ধ হচ্ছিলেন গত কয়েক দিন ধরেই। সেই মেসিই এবার চাপকে জয় করলেন। সমালোচকদের বাঁকা প্রশ্নের উত্তর দিলেন দুর্দান্ত এক গোলে।
তবে মেক্সিকোর ম্যাচে শুরুতে বেশ খাপ ছাড়াই লেগেছিল মেসিকে। খাদের কিনারায় বলে কিনা, ঠিক গুছিয়ে উঠতে পারছিলেন না। সেই সাথে আর্জেন্টিনাও ছন্দ খুঁজে পাচ্ছিল না। প্রথমার্ধ তাই গোল শুন্য থেকেই শেষ হয়।
পরের অর্ধেও সেই এলোমেলো খেলা থেকে বেরিয়ে আসতে পারছিল না আলবি সেলেস্তারা। তাঁর উপর মেক্সিকান ৫ ডিফেন্ডারকে টপকে ডি বক্সের ভিতরেই ঢুকতে পারছিল না মেসিরা। শঙ্কা তাই একটু জেগেছিল বটে।
তবে এমন সময়েই আর্জেন্টিনা ত্রাণকর্তা হিসেবে আবির্ভূত হন মেসি। ডি বক্সের ভিতরে ঢুকতে পারছিলেন না। তাই সিদ্ধান্ত নিলেন বাইরে থেকেই লং শট নিবেন। আর তাতেই মিলল ফল। ফুটবল বিশ্বকাপ আসলেই যে গিলের্মো ওচোয়া চীনের প্রাচীর হিসেবে হাজির হন, সেই প্রাচীরকেই ভেদ করে মেক্সিকোর জালে গোল জড়ান মেসি। আর এতেই হাফ ছেড়ে বাঁচে আর্জেন্টিনা।
মেক্সিকোর বিপক্ষে পরের গোলের যোগানদাতাও মেসি। এনজো ফার্নান্দেজকে পাস দিলেন। আর সেই বল থেকেই দুর্দান্ত এক গোল করেন ফার্নান্দেজ।
২-০ গোলের জয়ে মেসিরা এখন পয়েন্ট টেবিলের দুইয়ে। আর ১ পয়েন্ট নিয়ে মেক্সিকো এখন তলানিতে। বলাই বাহুল্য, তাদের ধরাশয়ী করার কাজটা করেছেন মেসি। এ ম্যাচ জয়ে আর্জেন্টিনা যে খুব নিরাপদ অবস্থানে চলে গিয়েছে তা নয়। তবে একদম থিতিয়ে যাওয়া আবহে পুনর্জাগরণ হয়েছে নিশ্চিতভাবেই।
সৌদি ম্যাচের পর আর্জেন্টিনা দলের মধ্যে বিরাজমান থমথমে পরিবেশ থেকে বেরিয়ে আসার জন্য এমন একটা ম্যাচ জয় খুবই প্রয়োজন ছিল। আর্জেন্টিনা সেই কাজটা সফল ভাবেই করেছে। তবে সাময়িক এ তৃপ্ততা থেকে আলবি সেলেস্তাদের বেরিয়েও আসতে হবে তাড়াতাড়ি। কারণ তাদের চোখ বিশ্বজয়ের দিকে। আর তার জন্য হতে হবে আরও তৃষ্ণার্ত কিংবা আরও ক্ষুধার্ত।
মেসিদের বিশ্বকাপ অভিযানে পরের ম্যাচ পোল্যান্ডের বিপক্ষ। সে ম্যাচে জিতলেই গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে রাউন্ড অফ সিক্সটিনে যাবে আর্জেন্টিনা। আপাতত মেক্সিকো বাঁধা টপকে এখন পরবর্তী চ্যালেঞ্জের জন্য প্রস্তুত হতে হবে মেসিদের। মেসি জানেন তাঁকেই সব সময় জ্বলে উঠতে হবে। সেই জ্বলে ওঠার আপন শক্তিতে পথচলার অনুপ্রেরণা তাঁর নিজে থেকেই নিতে হবে।
তিনিই তো ত্রাণকর্তা আর্জেন্টিনার। তিনি আছেন বলেই তো বিশ্বকাপের স্বপ্ন আছে।