জাপানের দ্বিতীয় গোলের সিদ্ধান্ত সঠিক ছিল

কাতার বিশ্বকাপ যেন চমক দেখানোর পসরা সাজিয়েছে। শুরুর আগে নানা বিতর্কে টালমাটাল থাকলেও মাঠের খেলা শুরু হতেই মিলিয়ে গেছে সব। আগের দিন মরক্কোর দেখানো পথ অনুসরণ করে এদিন দ্বিতীয় রাউন্ডে উঠেছে জাপানও। বিতর্ক সৃষ্টি করা এক গোলে স্পেনকে ২-১ গোলে হারিয়ে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়েই পরের রাউন্ডে উঠলো জাপানিরা।

কোনো দল যাতে বাড়তি সুবিধা না পায় সে কারণে গ্রুপপর্বের শেষ ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হয় একই সময়ে। এদিন গ্রুপ ই’র শেষ ম্যাচে রঙ বদলেছে বারবার, স্টেডিয়ামে থাকা দর্শকদের চোখ রাখতে হয়েছে ফোনের স্ক্রিনেও। শেষপর্যন্ত ম্যাচ হেরেও জাপানের সঙ্গী হয়েছে স্পেন। অন্যদিকে কোস্টারিকাকে ৪-২ গোলে হারিয়েও গোল ব্যবধানে কপাল পুড়েছে ২০১৪ বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়ন জার্মানির।

স্পেন বনাম জাপান ম্যাচের শেষটা যদি হয় জাপানের, তবে প্রথমার্ধ পুরোটাই ছিল স্পেনের। জাপান বলের দখল পায়নি একপ্রকার, বল পুরো সময়টা ঘুরাঘুরি করেছে তাঁদের অর্ধেই। ম্যাচের ১১ মিনিটেই দারুণ হেডে স্প্যানিশদের এগিয়ে দেন আলভারো মোরাতা। এ নিয়ে বিশ্বকাপের তিন ম্যাচেই গোল পেলেন এই স্ট্রাইকার। প্রথমার্ধে আরো কয়েকটি সুযোগ পেলেও এগিয়ে যাওয়া হয়নি স্প্যানিশদের।

দ্বিতীয়ার্ধে যেন অন্যরূপে ফেরে জাপান। বলের দখলে যোজন যোজন পিছিয়ে থাকলেও অসাধারণ সব কাউন্টার অ্যাটাকে ব্যতিব্যস্ত করে রাখে স্প্যানিশ রক্ষণভাগ। ৪৮ মিনিটে দোয়ানের জোরালো শট ফেরাতে ব্যর্থ হন স্প্যানিশ কিপার উনাই সিমন, সমতা ফিরে আসে খেলায়। প্রথমার্ধে অলস সময় পার করাতেই কিনা খানিকটা আড়ষ্ট ছিলেন সিমন, নইলে ওই শট ফেরানোর সামর্থ্য ছিল তাঁর।

তবে গোলযোগটা বাঁধে মিনিট দুয়েক পরে। বাঁ প্রান্ত দিয়ে দারুণ গতিতে ঢুকে পড়া দোয়ান বল বাড়ান মিতোমার কাছে। বল ক্রসলাইন অতিক্রম করার ঠিক আগ মূহুর্তে কাটব্যাক করেন মিতোমা। সেখান থেকে বল জালে জড়াতে কোনো সমস্যাই হয়নি তানাকার। তবে সমস্যাটা বাঁধে স্প্যানিশরা দাবি করে মিতোমা কাটব্যাক করার আগে বল লাইন অতিক্রম করেছে। টিভিতে খেলা দেখা দর্শকেরাও সেটাই ভাবছিলেন কারণ টিভি রিপ্লেতে দেখা যাচ্ছিল আড়াআড়িভাবে। সেকারণেই ভার গোলের সিদ্ধান্ত বহাল রাখলে আলোচনার ঝড় উঠে বিশ্বজুড়ে। 

তবে ফিফার নিয়মানুসারে রেফারির সিদ্ধান্ত সঠিক বলেই প্রমাণিত হয়। কারণ নিয়ম অনুযায়ী বলের পরিধির পুরো অংশ দাগের বাইরে গেলেই কেবল বল আউট হিসেবে বিবেচনা করা হবে। বল আড়াআড়িভাবে দেখার সময় বাইরে গেছে মনে হলেও উপর থেকে ক্যামেরা অ্যাঙ্গেল দেখলেই ব্যাপারটা স্পষ্ট হয়ে যায়। বলের কিছুটা অংশ তখনো দাগ স্পর্শ করেছিল।

রীতিমতো অবিশ্বাস্য এক গোলে ম্যাচে প্রথমবারের মতো লিড পায় জাপান। বিশ্বকাপ ইতিহাসের অন্যতম সূক্ষ সিদ্ধান্ত হিসেবেই বিবেচিত হয়েছে এই গোলটি। পরবর্তী সময়ে সাড়াশি আক্রমণ চালিয়েও জাপানি রক্ষণ ভাঙতে পারেনি স্পেন। মাত্র ১৭.৭% পজেশন আর অবিশ্বাস্য এক গোলে রূপকথার এক জয় পায় জাপান। 

দ্বিতীয় রাউন্ডে জাপান মুখোমুখি হবে ক্রোয়েশিয়ার। ২০১৮ বিশ্বকাপের শেষ ষোলোতে বেলজিয়ামের বিপক্ষে ২-০ গোলে গিয়ে থেকেও ম্যাচ হারতে হয়েছিল জাপানকে। এবারের বিশ্বকাপে উড়ন্ত ফর্মে থাকা জাপান নিশ্চিতভাবেই চাইবে না পুরনো ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি। বরং রূপকথার গল্পটা এগিয়ে নিতে চাইবে আরো কয়েকদিন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link