২০১৮ সালে যেবার ফ্রান্স বিশ্বকাপ জিতল, সেবার তো কিলিয়ান এমবাপ্পে ছিলেন বড্ড ছোট্ট। সদ্যই কৈশর পার করা এক তরুণ। মাত্র ১৯ বছর বয়সেই তিনি বিশ্বকাপ জেতার স্বাদ পেয়ে যান। উদীয়মান নক্ষত্র। নিশ্চয়ই ঠিক ঠাওর করতে পারেননি যে, হলটা কি? তবে তিনি বুঝে গেলেন, শিখে গেলেন কি করে শিরোপা জিততে হয়। কি করে সেরাদের সেরা হতে হয়। এরপর তো তিনি বিশ্ব ফুটবলে রাজত্ব করতে শুরু করলেন। তাঁকে ঘিরে ইউরোপের ক্লাবগুলো দ্বন্দের শুরু হতে লাগলো।
তবে মধ্যে খানে এমবাপ্পে নিজেকে পরিণত করবার কাজটা করে গেছেন শতভাগ। ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়নদের একটা বাড়তি দায়িত্ব তো থাকে। এবার সেই দায়িত্বের সিংহভাগ এমবাপ্পের কাঁধে। ২৩ বছর বয়সী এমবাপ্পে সেটা খুব ভাল করেই জানতেন। তাইতো নিজেকে প্রস্তুত করেছেন বিশ্বমঞ্চের জন্যে। বিশ্বকাপ শুরু আগে ছিলেন দুরন্ত ফর্মে। সেই ফর্ম সুদূর প্যারিস থেকে বয়ে নিয়ে এসেছেন মরুর বুকে, কাতারে। আর তাঁর অনবদ্য পারফরমেন্সের জোরে আরও একবার বিশ্ব জয়ের স্বপ্নে বিভোর ফরাসিরা।
২০১৮ বিশ্বকাপটা তরুণ খেলোয়াড় হিসেবে, অবলোকন করেছেন। চ্যাম্পিয়ন মেন্টালিটি নিজের মধ্যে ধারণ করেছেন এমবাপ্পে। এবার তিনি একাই যেন ফরাসিদের নব বিপ্লবের পথিকৃৎ। একা হাতেই ফ্রান্সের লোগোতে আরও একটি তারকা যুক্ত করতে মড়িয়া কিলিয়ান এমবাপ্পে। তাইতো এবারে বিশ্বকাপে তিনি ইতোমধ্যেই করে ফেলেছেন পাঁচ খানা গোল। গোল্ডন বুট জেতার তালিকায় রয়েছেন সবার উপরে। বিশ্বকাপের প্রথম দুই ম্যাচেই পেয়েছেন তিন গোল।
বাকি দুই খানা গোল পেলেন নকআউট পর্বের শুরুতেই। পোল্যান্ডের বিপক্ষে রীতিমত এমবাপ্পে শো দেখলো মধ্যপ্রাচ্য। আর ২৩ বছর বয়সী চিতাবাঘের ক্ষীপ্রতা আর দক্ষতার সামনে অসহায় আত্মসমর্পণই করল পোলিশরা। ফ্রান্সের পক্ষে ম্যাচে করা তিনটি গোলের মধ্যে তিনটিতেই অবদান রাখেন এমবাপ্পে। প্রথম গোলটা করান তিনি অলিভার জিরুডকে দিয়ে। ডিফেন্স চেড়া এক পাসে জিরুডকে ইতিহাস রচনায় সহয়তা করেন এমবাপ্পে। এমবাপ্পে নিজেও তো ইতিহাস লিখতেই হাজির হয়েছেন।
দীর্ঘায়িত করেননি, নতুন কোন ইতিহাস রচনার সময়। পোল্যান্ডের বিপক্ষেই বনে যান ফ্রান্সের ইতিহাসে বিশ্বকাপের মঞ্চের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ গোলদাতা। এমনকি বিশ্বমঞ্চে গোল করার দিক দিয়ে তিনি ছাপিয়ে গেছেন কিংবদন্তি খেলোয়াড় পেলেকেও। ২৪ বছর বয়সের আগেই তিনি আটের বেশি গোল করে ফেলেছেন। যা কি-না এতদিন অবধি নিজের দখলে রেখেছিলেন ফুটবলের উজ্জ্বলতম নক্ষত্র পেলে। নিশ্চয়ই নিজের এমন দুর্ধ্বর্ষ যাত্রা অব্যাহত রাখলে এই বিশ্বকাপেই এমবাপ্পে চলে যেতে পারেন সবার উপরে।
তেমনটাই হয়ত করতে চাইবেন এমবাপ্পে। গতিবান এই ফুটবলার খুব সহয়সাই তো থেমে যেতে চাইবেন না। পোল্যান্ডের বিপক্ষেও তো থেমে যাননি। পোলিশ ডিফেন্ডারদের নাকানিচুবানি খাইয়েছেন। তাছাড়া এবারের বিশ্বকাপে দুর্দান্ত পারফরম করে পোল্যান্ডের গোলরক্ষক উইচেক সেজনি রয়েছেন আলোচনায়, তাকেও ভুগিয়েছেন এমবাপ্পে। গ্রুপ পর্বে দুইটি পেনাল্টি ঠেকিয়ে দিয়েছিলেন সেজনি। তবে এমবাপ্পের কাছে পাত্তাই পাননি তিনি। এমবাপ্পের বুদ্ধিমত্তা আর ফুটবলীয় শৈলীর কাছে পরাস্ত হন পোলিশ গোলরক্ষক। তাও দু’বার।
দুই বারই দূর্দান্ত শটে সেজনিকে পরাস্ত করেন কিলিয়ান এমবাপ্পে। একবার জালের ডান পাশের উপরিভাগ দিয়ে। আরেকবার বাম পাশের টপ কর্ণার। সেজনির যেন করারই কিছু ছিলো না। এতটাই দূর্বোধ্য কিলিয়ান এমবাপ্পে। তাঁর এই অসাধারণ ফর্ম অব্যাহত রইলে ফ্রান্সের বিশ্বজয় খুব একটা কঠিন হবার কথা নয়। কেননা অধিকাংশ দলের কাছেই তো এমবাপ্পেকে থামানোর কোন মন্ত্র জানা নেই। এমবাপ্পেও নিশ্চয়ই থামতে চাইবেন না। দুর্বার গতিতে এগিয়ে যেতে চাইবেন।
ইনজুরির কালো মেঘ ঠেলে এমবাপ্পে উজ্জ্বলতম কিরণ হয়েই হাজির হচ্ছে ফরাসিদের বিশ্বকাপ অভিযানে। এই বর্ণিল আলো অটুট ও ধারাবাহিক থাকুক এটাই হয়ত প্রত্যাশা ফ্রান্সের সকল সমর্থকদের। তবেই তো ব্রাজিলের পর টানা দুইটি বিশ্বকাপ জয়ের মধুর অর্জনটা নিজেদের করে নিতে পারবে ফ্রান্স।