গত জুনেই দক্ষিণ কোরিয়ার মুখোমুখি হয়েছিল ব্রাজিল। ফুটবল পরাশক্তিদের বিরুদ্ধে কোরীয় কোচ পাওলো বেন্তো দেখতে চেয়েছিলেন তাঁর দল লড়াই করতে পারে। এমনিতে তাঁর দলটা এশিয়ার সেরা দলের একটি। স্বাভাবিকভাবেই ‘অ্যাটাক ইজ দ্য বেস্ট ডিফেন্স’ – এই মূলমন্ত্র মেনেই মাঠে নেমেছিল তাঁরা। কিন্তু তাঁদের এই পরিকল্পনা কি কাজে লেগেছিল?
উত্তরটা না। ঘরের মাঠে সেদিন ব্রাজিলের কাছে ৫-১ গোলে উড়ে গিয়েছিল দক্ষিণ কোরিয়া। বিন্দুমাত্র প্রতিরোধ গড়তে পারেনি না তাঁরা, স্রেফ অসহায় আত্নসমর্পন করেছিল। বিশ্বকাপে কোয়ার্টার ফাইনালে উঠার লড়াইয়ের আগে বেন্তোকে তাই নতুন পরিকল্পনাই সাজাতে হবে।
দক্ষিণ কোরিয়া স্বাভাবিকভাবেই আগে নিজেদের রক্ষণ সামলে তারপর আক্রমণে উঠতে চাইবে। ব্রাজিলের সমস্যাটা অবশ্য ভিন্ন, বিশ্বকাপের প্রস্তুতি ম্যাচগুলোতে বেশিরভাগ সময়েই প্রথমার্ধেই ম্যআচ বের করে নিয়েছে তাঁরা। কিন্তু বিশ্বকাপে সেটা সম্ভব হয়নি, তিন ম্যাচের কোনোটিতেই প্রথম ৪৫ মিনিটে প্রতিপক্ষের জালে বল জড়াতে পারেননি নেইমার-রিচার্লিসনরা। ব্রাজিল কোচ তিতে নিশ্চিতভাবেই চাইবেন কোয়ার্টার ফাইনালের আগেই প্রথমার্ধে গোল করার টোটকা আবিষ্কার করতে।
ব্রাজিলের জন্য স্বস্তির খবর যে অ্যাংকেলের ইনজুরি সারিয়ে এই ম্যাচ দিয়ে মাঠে ফিরতে যাচ্ছেন ব্রাজিলের মূল তারকা নেইমার। অবশ্য তাঁকে ছাড়াও ব্রাজিলের আক্রমণভাগ যথেষ্ট শক্তিশালী। তবে অভিষেকের পর থেকেই সেলেসাওদের মূল ভরসা সেই নেইমারই। এমনকি গত বছরের কোপা আমেরিকাতেও নেইমার এবং পাকুয়েতা জুটি ম্যাচ জিতিয়েছে ব্রাজিলকে। তাঁদের দুজনের মধ্যকার রসায়নও চমৎকার।
কোপার পর থেকেই ব্রাজিলের আক্রমণভাগে নতুন সব তারকার আবির্ভাব ঘটেছে। ডান পাশে সদ্য বার্সায় নাম লেখানো রাফিনহা তো আছেনই, বাম প্রান্তে আলো ছড়াচ্ছেন রিয়াল মাদ্রিদের ভিনিসিয়াস জুনিয়র। মাত্র ২২ বছর বয়স হলেও এরমাঝেই চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনালে গোল করা হয়ে গেছে ভিনিসিয়াসের। সার্বিয়া এবং সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচে নিজের সামর্থ্যের জানান দিয়েছেন তিনি।
দক্ষিণ কোরিয়ার বিপক্ষে ম্যাচের আক্রমণভাগে দুই উইংয়ে খেলবেন ভিনিসিয়াস এবং রাফিনহা। তাঁদের পাশাপাশি নাম্বার নাইন হিসেবে নেইমার এবং আক্রমণাত্নক মিডফিল্ডার হিসেবে খেলার কথার লুকাস পাকুয়েতার। অন্যদিকে বিশ্বকাপে দারুণ পারফর্ম করা রিচার্লিসন থাকবেন সবার সামনে, সেন্টার ফরোয়ার্ড হিসেবে। প্রথাগত ফরোয়ার্ড না হলেও বিশ্বকাপে দারুণ ফর্মে আছেন টটেনহ্যামের এই তারকা।
জুন মাসে দক্ষিণ কোরিয়ার বিপক্ষে সেই ম্যাচের প্রথম গোলটাও এসেছিল তাঁর পা থেকেই। ফর্মটা ধরে রেখেছিলেন জাপানের বিপক্ষে পরের ম্যাচেও, বেঞ্চ থেকে নেমে দলের পক্ষে পেনাল্টি আদায় করেন। এরপর থেকেই জাতীয় দলে সেন্টার ফরোয়ার্ড হিসেবেই বিবেচিত হচ্ছেন রিচার্লিসন।
এই চারজনকে একত্রে খেলালে দলের রক্ষণ খানিকটা দুর্বল হয়ে যাচ্ছে কিনা সে প্রশ্নটা থেকেই যায়। বিশ্বকাপের আগে সেই সমস্যারও সমাধান করেছেন তিতে, পাকুয়েতাকে খেলাচ্ছেন খানিকটা নিচে থেকে। ফলে বল পজেশন হারালে পাকুয়েতা মিডফিল্ডে সঙ্গ দিচ্ছেন কাসেমিরোকে। তাছাড়া রক্ষণে আরো বেশি নিশ্চয়তা চাইলে ফ্রেড তো আছেনই। সেক্ষেত্রে অবশ্য বেঞ্চে বসতে হবে পাকুয়েতাকে।
ঘানার বিপক্ষে প্রীতিম্যাচে এবং সার্বিয়ার বিপক্ষে বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে এই পদ্ধতিতেই দলকে খেলিয়েছেন তিতে। ডিফেন্সে খুব একটা সমস্যা হয়নি, বরং পুরো মিডফিল্ড নিয়ন্ত্রণ করেছেন নেইমার-পাকুয়েতা জুটি। কিন্তু নেইমার ইনজুরিতে পড়লে খানিকটা বিপাকে পড়েন তিতে। প্রথমে পাকুয়েতাকে নেইমারের রোলে খেলানো হলেও তিনি সামর্থ্যের পুরোটা দেখাতে পারেননি।
স্কোয়াডে একজন রবার্তো ফিরমিনোর উপস্থিতি ভালোভাবেই অনুভব করছেন তিতে। শেষম্যাচে রদ্রিগোকেও বাজিয়ে দেখতে চেয়েছেন তিতে, তিনি অবশ্য খুব একটা খারাপ করেননি। কিন্তু সঙ্গীর অভাবে বেশিরভাগ আক্রমণই দানাবাঁধার আগে ফুরিয়ে গেছে, ব্রাজিলও হেরেছে ১-০ গোলে।
সে তুলনায় তিন ম্যাচেই ব্রাজিলের উইংগাররা ধারাবাহিকভাবে পারফর্ম করেছেন। দ্রুতগতিতে আক্রমণে উঠেছেন, রক্ষণের ফাঁকা জায়গা ব্যবহার করে গোলের চেষ্টা করেছেন। দক্ষিণ কোরিয়ার বিপক্ষে ম্যাচের আগে তাই ঘুরেফিরে পুরনো প্রশ্নটাই সামনে আসছে। ব্রাজিল কি কেবল উইং বরাবরই আক্রমণ চালাবে, নাকি নেইমার ফেরত আসায় মাঝমাঠটাও সচল থাকবে।
কোরিয়ানরাও সুযোগের অপেক্ষায় থাকবে। গেন্তো অবশ্য নিশ্চিতভাবেই জুনের সেই ম্যাচের মতো আক্রমণাত্নক হতে চাইবেন না। গোল বের করার জন্য ব্রাজিলকে তাই বেশ গলদঘর্মই পোহাতে হবে।