বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপ প্রায় শেষের পথে বা বলা যায় শেষই। বিপিএল আয়োজন না করে দেশীয় ক্রিকেটারদের নিয়ে আয়োজিত এই টুর্নামেন্টটা খারাপ হয়নি মোটেও। বরং বলা যায় বেশ উপভোগ্যই হয়েছে।
বেশ জমজমাট এক লড়াই শেষে ফাইনালে উঠেছে জেমকন খুলনা আর গাজী গ্রুপ চট্টগ্রাম। শুক্রবার সাড়ে চারটা থেকে শুরু হবে এই ফাইনাল।
এই ফাইনাল ম্যাচটাতে কোন দল জিততে পারে? জেতার জন্যে কোন দল কেমন পরিকল্পনা নিতে পারে? কোন দলের শক্ত জায়গা কোনটি? দেখা যাক!
গাজী গ্রুপ চট্টগ্রামের শক্ত জায়গা দলের ওপেনাররা। ফাইনাল ম্যাচটা জিততে হলে চট্টগ্রামকে উড়ন্ত সূচনা পেতেই হবে। লিটন আর সৌম্য যদি শুধু নিজেদের খেলাটা খেলতে পারেন, তাহলেই এক্ষেত্রে চলবে। চট্টগ্রামের মিডল অর্ডারে মিঠুন আর শামসুর অবশ্য যোগ্য সঙ্গ দিতেও পারেন। তবে সত্যি বলতে টপ অর্ডার ফ্লপ করলে একা হাতে জেতাতে পারবেন কিনা সেটা প্রশ্নের বিষয়। লিটন আর সৌম্য যদি সলিড স্টার্ট এনে দিতে পারেন, হাত খুলে খেলতে পারবেন মিডল অর্ডারের সবাই। সেক্ষেত্রে শেরে বাংলার উইকেটে একটা জয়ের মত রান পাবে চট্টগ্রাম।
খুলনাকে জিততে হলে চট্টগ্রামের শক্ত জায়গাটাই ভাঙতে হবে । অর্থাৎ তাদের ওপেনারদের দ্রুত ফেরাতে হবে। এই কাজে অবশ্য মাশরাফিই তাদের তুরুপের তাস। ইনিংসের প্রথমে উইকেটকে কাজে লাগাতে পারবেন মাশরাফি। পেস বোলিংয়ে গতির চাইতেও ‘চেঞ্জ অব পেস’ অনেক বেশি দরকারী। মাশরাফির বোলিংয়ে সেটাই আজকাল বোঝা যাচ্ছে। সৌম্য আর লিটনকে ফেরাতে মাশরাফি তাই হতে পারেন যোগ্য সেনানী!
যেহেতু বিকালে খেলা শুরু হবে, শিশিরের সমস্যা থাকবে নিশ্চিত। সাকিবের বিকল্প হিসেবে তাই নাজমুল অপুকেই একাদশে রাখা ঠিক হবে কিনা এই ব্যাপারটা টিম ম্যানেজমেন্ট ভেবে দেখতে পারে। তবে আমার মনে হয়, এক্সট্রা একজন সিমার যোগ করলেই ভাল হবে খুলনার জন্যে । সেটা শহিদুল বা শফিউল যে কেউই হতে পারে। আমরা যদি খুলনা-চট্টগ্রামের শেষ ম্যাচের দিকে তাকাই- মাশরাফি ভাল বোলিং করেছেন, আরিফুলও বল করেছেন রান আটকে। মূলত গতির ওপর ভরসা না করা বোলাররা ভাল করেছেন। যদি খেলা একই উইকেটে হয়ে থাকে, সন্ধ্যার পর শিশিরভেজা উইকেটে স্পিনাররা কাজে আসবেন না বেশি, তাই মাশরাফি আরিফুলের মতই গতির ওপর ভরসা না করা শফিউল, শহিদুলকে চাইলে দলে নিতে পারে খুলনা!
জেমকন খুলনার মূল শক্তিই কিন্তু টিম ওয়ার্ক। আপনি যদি খেয়াল করেন, সেরা উইকেট টেকার কিংবা হায়েস্ট রান স্কোরার কোন তালিকাতেই জেমকন খুলনার কারো আধিপত্য নেই। তবুও খুলনা ফাইনালে উঠেছে। এর কারণ একটাই- টিম ওয়ার্ক! এই টিম ওয়ার্কটা জিইয়ে রাখতে হবে খুলনাকে ফাইনাল অব্দি।
জহুরুল অমি আগের ম্যাচে ভাল ব্যাটিং করেছেন। খুলনা নিশ্চয়ই চাইবে, অমি তার এই পারফর্ম্যান্স বজায় রাখুক, আর চট্টগ্রাম চাইবে অমিকে দ্রুত ফেরাতে। অমিকে ফেরানোর বাড়তি দায়িত্বটা তাই নিতে হবে মুস্তাফিজকে। অমির মূল শক্তির জায়গা মূলত লেগ সাইড। সে হিসেবে ক্রমাগত অফ স্ট্যাম্পে বল করে যাওয়া কাউকে তাই দায়িত্বটা নিতে হবে। সেটা হতে পারেন মুস্তাফিজ, শরিফুল বা সৌম্য!
লিগ পর্ব ও নক আউট ম্যাচের দিকে আমরা তাকালে দেখতে চট্টগ্রাম সেখানে খুলনার চেয়ে পরিষ্কার এগিয়ে ছিলো। ৮ ম্যাচে ৭ জয় নিয়ে তারা কোয়ালিফায়ার খেলেছে। সেখান থেকে অবশ্য প্রথম কোয়ালিফায়ারে হেরেছিলো তারা এই খুলনার কাছে। আর খুলনা ৮ ম্যাচে ৮ পয়েন্ট নিয়ে খেলেছে কোয়ালিফায়ার। সেখানে জয় পয়ে সরাসরি এসেছে তারা ফাইনালে।
গ্রুপপর্বে খুলনা ৪টি জয়ের বিপরীতে ৪টি ম্যাচ হেরেছিলো। আর চট্টগ্রাম গ্রুপপর্বে একটি মাত্র ম্যাচ হেরেছে। ফাইনালের আগে ৩ বার মুখোমুখি হয়েছে চট্টগ্রাম ও খুলনা। এর মধ্যে প্রথম পর্বে সবগুলো ম্যাচ জিতেছে চট্টগ্রাম। কোয়ালিফায়ারে এসে জিতেছে খুলনা। ফলে চট্টগ্রামকে আপনার একটু হলেও এগিয়ে রাখতে হবে।
মাঠের বাইরে আমরা যতই বুলি আওড়াই না কেন, মাঠের খেলাটা ক্রিকেটারদেরই খেলতে হবে। আর সেখানে দিনশেষে যারা পারফর্ম করবে তারাই জিতবে!