সেরাদের সেরা যারা

বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপের পর্দা নেমেছে, কিন্তু তাঁর রেশ এখন অবধি আছে। গাজী গ্রুপ চট্টগ্রামকে হারিয়ে শিরোপা জিতেছে জেমকন খুলনা। ২৫ দিনের এই লড়াইয়ে অভিজ্ঞদের সাথে সমান তালে পারফর্ম করেছে তরুণেরা।

টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ রান ও উইকেট শিকারী দুজন একই দলে থেকেও যেমন শিরোপার স্পর্শ পাননি তেমনি ব্যাট হাতে দুর্দান্ত খেলেও দলকে প্লে-অফে তুলতে পারেননি নাজমুল হোসেন শান্ত। তবে সেরাদের সেরার লড়াইয়ে ব্যক্তিগত ভাবে ঠিকই বাজিমাত করেছেন তাঁরা। দেখে নেওয়া যাক টুর্নামেন্টের সেরাদের।

সেরা তিন ব্যাটসম্যান

  • লিটন দাস (গাজী গ্রুপ চট্টগ্রাম)

বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপে গাজী গ্রুপ চট্টগ্রামের ইনিংসের গতিপথ অনেকটাই নির্ভর করেছে লিটন দাসের উপর। টুর্নামেন্টে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকও চট্টগ্রামের এই ওপেনার। টুর্নামেন্টে ১০ ম্যাচে ১১৯.৪৫ স্টাইকরেটে ৪৯.১২ গড়ে ৩৯৩ রান সংগ্রহ করে ছিলেন সবার শীর্ষে। সর্বোচ্চ তিনটি হাফ সেঞ্চুরিও এসেছে লিটনের ব্যাট থেকেই। টুর্নামেন্ট জুড়ে ৪১ টি চারের সাথে লিটনের ব্যাট থেকে এসেছে ছয়টি ছয়।

টুর্নামেন্টে নিজের ২য় ম্যাচে খুলনার বিপক্ষে টুর্নামেন্টের প্রথম হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন লিটন দাস। ৮৬ রান তাড়া করতে নেমে দলের জয় নিশ্চিত করেই মাঠ ছাড়েন লিটন। লিটনের ব্যাট থেকে আসে ৪৬ বলে অপরাজিত ৫৩ রান। টুর্নামেন্টের চতুর্থ ম্যাচে রাজশাহীর বিপক্ষে লিটনের ৫৩ বলে অপরাজিত ৭৮ রানে ভর করেই বড় সংগ্রহ পায় চট্টগ্রাম। গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে রাজশাহীর বিপক্ষে লিটন করেন ৪৩ বলে ৫৫ রান। আর ফাইনালে ২৩ বলে ২৩ রান করে দূর্ভাগ্যজনক ভাবে হয়ে যান রান আউট। এছাড়াও গ্রুপ পর্বে এবং কোয়ালিফায়ারে ঢাকার সাথে ৪৭ ও ৪০ রানের দুটি ইনিংস খেলেছিলেন এই ওপেনার।

  • তামিম ইকবাল (ফরচুন বরিশাল)

টুর্নামেন্টের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক ফরচুন বরিশালের অধিনায়ক তামিম ইকবাল। টুর্নামেন্টে তামিমের ব্যাট থেকে নয় ম্যাচে ৪০.৫০ গড়ে ১১৫.৩০ স্টাইকরেটে ৩২৪ রান আসলেও কিছু ইনিংস নিয়ে টুর্নামেন্ট জুড়েই তামিম ছিলেন সমালোচিত। তবে ফরচুন বরিশালের দূর্বল ব্যাটিং লাইনআপে বড় ভরসার নাম ছিলেন তামিম।

টুর্নামেন্টে তামিম সেরা দুটি ইনিংসই খেলেছিলেন রাজশাহীর বিপক্ষে। রাজশাহীর বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে তামিম করেছিলেন ৬১ বলে অপরাজিত ৭৭ ও ২য় ম্যাচে তামিমের ব্যাট থেকে আসে ৩৭ বলে ৫৩ রান। এছাড়া চট্টগ্রামের সাথে দু’টি ও ঢাকার সাথে খেলা তিনটি ইনিংস নিয়ে সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন দেশ সেরা এই ওপেনার। চট্টগ্রামের সাথে দুই ম্যাচে করেছিলেন ৩২ বলে ৩২ ও ৩৯ বলে ৪৩। ঢাকার সাথে প্রথম ম্যাচে ৩১ বলে ৩১ রান, ২য় মাচে ১৭ বলে ১৯ রান ও ঢাকার সাথেই এলিমেনিটরে করেছিলেন ২৮ বলে ২২ রান।

  • নাজমুল হোসেন শান্ত (মিনিস্টার গ্রুপ রাজশাহী)

বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপে সবচেয়ে তৃপ্তিদায়ক ব্যাটিং করেছেন মিনিস্টার গ্রুপ রাজশাহীর অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। গ্রুপ পর্বের আট ম্যাচে ৩৭.৬২ গড়ে ৩০১ রান সংগ্রহ করে সর্বোচ্চ রান সংগ্রহকারীর তালিকায় ৩য় স্থানে আছেন রাজশাহীর অধিনায়ক। টুর্নামেন্টে সর্বনিম্ন ১০০ রান করেছে এমন ব্যাটসম্যানদের ভিতর সর্বোচ্চ স্টাইকরেটও শান্তর। ১৫৬.৭৭ স্টাইকরেট নিয়ে শীর্ষে আছেন তিনি। টুর্নামেন্টে সর্বোচ্চ ২১ টি ছয়ও এসেছে শান্তর ব্যাট থেকেই।

টুর্নামেন্টের প্রথম সেঞ্চুরিও আসে শান্তর ব্যাট থেকেই। এছাড়া ২ টি হাফসেঞ্চুরিও করেছিলেন তিনি। টুর্নামেন্টে ২টি হাফসেঞ্চুরিই জেমকন খুলনার সাথে করেন শান্ত। খুলনার সাথে ১ম লড়াইয়ে শান্তর ব্যাট থেকে আসে ম্যাচজয়ী ৩৪ বলে ৫৫ রান ও দ্বিতীয় লড়াইয়ে করেন ৩৮ বলে ৫৫ করলেও ম্যাচ হারে রাজশাহী। বরিশালের বিপক্ষে ৫৫ বলে ১০৯ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলেন রাজশাহীর অধিনায়ক। দলীয় ব্যর্থতায় প্লে-অফের আগেই বাদ পড়ে শান্তর রাজশাহী, যার কারনে শীর্ষ রান সংগ্রাহকের দৌড়ে থাকতে পারেননি তিনি।

সেরা তিন বোলার

  • মুস্তাফিজুর রহমান (গাজী গ্রুপ চট্টগ্রাম)

বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপে সর্বোচ্চ উইকেট শিকার করে টুর্নামেন্টের সেরা ক্রিকেটার ও সেরা বোলার নির্বাচিত হয়েছেন চট্টগ্রামের পেসার মুস্তাফিজুর রহমান। টুর্নামেন্টে ১০ ম্যাচে ৬.২৫ ইকোনোমিতে ২২ উইকেট শিকার করে সবার শীর্ষে ছিলেন মুস্তাফিজ।

টুর্নামেন্টে পাঁচ উইকেট না পেলেও তিন বার ম্যাচ সেরা হয়েছিলেন কাটার মাস্টার। জেমকন খুলনার সাথে পাঁচ রানে চার উইকেট শিকার করেছিলেন এই পেসার। এছাড়া বরিশালের সাথে ২৩ রানে তিন উইকেট ও রাজশাহীর সাথে ৩৭ রানে তিন উইকেট শিকার করেছিলেন তিনি। এছাড়াও প্রতিটা ম্যাচেই ডেথ ওভারে ভালো বোলিং করেছেন তিনি। চট্টগ্রামকে ফাইনালে নিতে অধিনায়কের সবচেয়ে বড় অস্ত্র ছিলেন মুস্তাফিজ।

  • মুক্তার আলী (বেক্সিমকো ঢাকা)

শীর্ষ উইকেট শিকারীর তালিকায় সবচেয়ে বড় চমক মুক্তার আলী। বোলার হিসাবে তারকাখ্যাতি ছিলো না তেমন। বলেও ছিলো না তেমন গতি। তবে ঢাকার অধিনায়ক মুশফিকের জন্য কার্যকরী এক অস্ত্র ছিলেন মুক্তার আলী। দলকে ব্রেক-থ্রু এনে দেওয়ার পাশাপাশি ডেথ ওভারেও ভালো বোলিং করেছেন তিনি।

টুর্নামেন্টে ১০ ম্যাচে ১৭ উইকেট নিয়ে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উইকেট শিকারী হলেও একটু ব্যয়বহুল ছিলেন মুক্তার আলী। টুর্নামেন্টে ওভার প্রতি ৯.১৯ রান করে গুনতে হয়েছে তাকে। গ্রুপ পর্বে রাজশাহীর বিপক্ষে ২ ম্যাচেই ঢাকার সেরা বোলার ছিলেন তিনি। ১ম মাচে ২২ রানে ৩ উইকেট ও দ্বিতীয় ম্যাচে শিকার করেছিলেন ৩৭ রানে ৪ উইকেট। এছাড়ও এলিমেনিটরে বরিশালের বিপক্ষে নিয়েছিলেন তিন উইকেট।

  • কামরুল ইসলাম রাব্বি (ফরচুন বরিশাল)

নয় ম্যাচে ৮.৬৬ ইকোনোমিতে ১৬ উইকেট নিয়ে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারীর তালিকায় তৃতীয় স্থানে রয়েছে ফরচুন বরিশালের পেসার কামরুল ইসলাম রাব্বি। টুর্নামেন্টে একমাত্র হ্যাটট্রিকও করেছিলেন তিনি। রাজশাহীর বিপক্ষে ৪৯ রানে ৪ উইকেট পাওয়ার ম্যাচে হ্যাটট্রিক করেন তিনি। রাজশাহীর বিপক্ষে গ্রুপ পর্বের প্রথম ম্যাচেও ২১ রানে চার উইকেট শিকার করেছিলেন এই পেসার। এছাড়া খুলনার সাথে দ্বিতীয় লড়াইয়ে নিয়েছিলেন ৩৩ রানে তিন উইকেট।

  • শরিফুল ইসলাম (গাজী গ্রুপ চট্টগ্রাম)

যুব বিশ্বকাপ জয়ী এই পেসার নিজেকে এবার ঘরোয়া ফ্র্যাঞ্চাইজি আসরে প্রমাণ করেছেন। তিনিও রাব্বির সমান ১৬ টি উইকেট পেয়েছেন, যোগ্য সঙ্গ দিয়ে গেছেন মুস্তাফিজুর রহমানকে। টুর্নামেন্টে ১০ ম্যাচে ৮ ইকোনোমিতে ১৬ উইকেট শিকার করেছেন চট্টগ্রামের এই পেসার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link