কোহলির ‘হ্যাজেলউড-জুজু’

এটাই কোহলির সবচাইতে দুর্বল জায়গা! আপনি যদি কোহলির বেশিরভাগ ডিসমিসাল গুলো দেখেন, খেয়াল করবেন, লাফিয়ে ওঠা অফ সাইডের বলগুলোতে তিনি আউট হন সবচাইতে বেশি। লেগ স্পিনের ক্ষেত্রে যখন রাউন্ড দ্য উইকেটে বল করেন বোলাররা, স্লটে বল ফেলেন, বল লাফিয়ে ওঠে, অফ সাইডে একটু সরে যায়, কোহলি কাবু হয়ে যান!

স্বভাবসুলভ অ্যাকশনে নাথান লিঁও বল ডেলিভারি করলেন। অজিঙ্কা রাহানে বলটাকে ঠেলে দিয়ে দেখলেন, নন স্ট্রাইকে থাকা অধিনায়ক বিরাট কোহলি দৌড় শুরু করেছেন।

সিলি মিড অফ-এ দাঁড়ানো জশ হ্যাজলউড বলটাকে কুড়িয়ে দ্রুত ছুঁড়ে দিলেন নাথান লায়নের হাতে। অজিঙ্কা ততক্ষণে বুঝে গেছেন কি হতে যাচ্ছে, ৭৪ রানে দাঁড়ানো কোহলি ততক্ষণে পিচের মাঝখানে, নাথান লায়ন বল হাতে নিয়ে বেইল ফেলে দিয়েছেন!

জশ হ্যাজলউডের রান আউটে প্যাভিলিয়নে ফিরে যাচ্ছেন কোহলি!

চলতি অস্ট্রেলিয়া-ইন্ডিয়া সিরিজটাতে এই হ্যাজেলউডের কল্যানে কোহলির প্যাভিলিয়নে ফিরে যাওয়াটা অনেকটা কমন দৃশ্য হয়ে গেছে। ওয়ানডে সিরিজটার কথাই ধরুন না, সিডনি হোক বা ক্যানবেরা – কোহলি ধরাশায়ী হয়েছেন জশ হ্যাজেলউডের কাছে!

ওয়ানডে সিরিজ ছাড়িয়ে আমি যদি এই ২০২০ সালের হ্যাজেলউড বনাম কোহলির পরিসংখ্যান ঘাটি তাহলে দেখতে পাব, কোহলি এই এক বছরেই হ্যাজলউডের বলে ডিসমিস হয়েছেন মুখোমুখি হওয়া পাঁচ ইনিংসের চারটেতেই! বল আর রানের হিসাব আমলে নিলে হ্যাজলউডের করা ৪০ বলে কোহলি করেছেন মাত্র ৩৫ রান। মুখোমুখি ৫ ইনিংসে ৪ ডিসমিসাল, ৪০ বল, ৩৫ রান!

বর্তমান বিশ্বের সবচাইতে প্রতাপশালী একজন ব্যাটসম্যান এভাবে একজন বোলারের হাতে ধরাশায়ী হচ্ছেন! ভাবা যায়!

এখন প্রশ্ন হল এমনটা কেন ঘটছে? যদি আমরা সিডনির প্রথম দুটো ওয়ানডের দিকে তাকাই, তাহলে কোহলি দুইবারই আউট হয়েছেন বাউন্সারে ক্যাচ উঠিয়ে দিয়ে! হ্যাজলউড বলকে পিচ করিয়েছেন একটু সামনে, দুই ইনিংসেই বল একটাতে উপরে উঠেছে, একটাতে ওঠেনি, কিন্তু দুইবারই কোহলি সিলি মিড অনে থাকা ফিল্ডারের হাতে তালুবন্দী হয়েছেন!

এর মধ্যে প্রথম ওয়ানডেতে ফিঞ্চের ধরা ক্যাচটা সহজ হলেও, দ্বিতীয়টাতে হেনরিকসকে ক্যাচটা নেওয়ার জন্যে কিছুটা কৃতিত্ব দিতেই হয়!

তৃতীয় ওয়ানডেতে কোহলি যে বলে আউট হয়েছেন, তাতে পুরো কৃতিত্ব অবশ্য হ্যাজলউডকে দিতেই হয়। বলটা ফেলেছিলেন তিনি স্লটে, সামান্য সুইং করে তা অফ সাইডে চলে যায়, কয়েক পা সামনে এগিয়ে আসা কোহলির ব্যাট তা ছুঁয়ে যেতেও ভুল করেনি! হ্যাজেলউডের পরিকল্পনা সফল!

পরিকল্পনা কেন বললাম? কারণ এটাই কোহলির সবচাইতে দুর্বল জায়গা! আপনি যদি কোহলির বেশিরভাগ ডিসমিসাল গুলো দেখেন, খেয়াল করবেন, লাফিয়ে ওঠা অফ সাইডের বলগুলোতে তিনি আউট হন সবচাইতে বেশি। লেগ স্পিনের ক্ষেত্রে যখন রাউন্ড দ্য উইকেটে বল করেন বোলাররা, স্লটে বল ফেলেন, বল লাফিয়ে ওঠে, অফ সাইডে একটু সরে যায়, কোহলি কাবু হয়ে যান!

আবার পেস বোলিংয়ের ক্ষেত্রেও কোহলিকে আউট করতে হলে আপনাকে ক্রমাগত অফ সাইডে বল করে যেতে হবে। অবশ্য শুধু অফ সাইডে বল করলেই হবেনা। সেই বলটার লেংথও ঠিক রাখতে হবে। স্লট এর জায়গাতে যদি একটু ওপরে বল ফেলেন, স্বভাবসুলভ কাভার ড্রাইভে নিশ্চিতভাবেই কোহলি একটা বাউন্ডারি হাঁকাবেন তা বলে দেওয়া যায়!

ক্রিকেটকে বলা হয় সাইকোলজিক্যাল গেম। ব্যাট প্যাড বলের চাইতে খেলাটাতে মাথার কাজ অনেক বেশি। সেই মাথার কাজটার সবচাইতে জরুরী ব্যাপার হল ‘অপনেন্ট স্টাডি’। খেলতে নামার আগে প্রতিপক্ষকে পড়ে আসতে হবে, জেনে নিতে হবে। হ্যাজেলউড যে সে ব্যাপারে সফল তা কিন্তু এই তৃতীয় ওয়ানডেতে ক্যানবেরার ডিসমিসালটা দেখেই বলে দেওয়া যায়!

অবশ্য হ্যাজেলউডের সময়টাও বেশ ভাল যাচ্ছে। জোরের ওপর বল করতে পারেন, সেই বলটাকে বাঁক নেওয়াতে পারেন, হ্যাজেলউড আস্তে আস্তে হয়ে যাচ্ছেন অস্ট্রেলিয়া বোলিং লাইনআপের নির্ভরযোগ্য এক নাম। এখন টেস্ট র‍্যাংকিংয়ে আছেন নয় নম্বরে। লম্বা ফরম্যাটের চাইতে অবশ্য তিনি ছোট ফরম্যাটে আরো স্বাচ্ছন্দ্য, ওয়ানডে র‍্যাংকিংয়ে ছয় নম্বরে থাকা সে ব্যাপারটাতে জোর দেয় আরো!

শুধু কী তাই, ১০ মাস আগে পাকিস্তানের সাথে টেস্ট সিরিজেও তো তিনি বারবার ফিরিয়েছেন কোহলির সাথে যার তুলনা হয় সেই বাবর আজমকেও! সেই একই ঢঙে, একই অফ সাইডের বলে, একই সুইংয়ে! পেস বোলিং নিয়ে আজকাল অনেক আক্ষেপ করা হয়, হ্যাজলউড নিজেকে আস্তে আস্তে যে স্তরে নিয়ে যাচ্ছেন, তাতে এই আক্ষেপ অন্তত তিনি কিছুটা হলেও ঘোচাতে পারবেন বলে মনে হচ্ছে!

এখন থেকে দুই বছর আগে আরেকটা অস্ট্রেলিয়া-ভারত সিরিজে হ্যাজেলউড সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন, ‘বিরাটের নেতৃত্বে ভারতের ব্যাটিং লাইনআপ বর্তমান বিশ্বের সেরা।’

তখন হ্যাজেলউড এতটা সেরা হননি, কিন্তু তাতেও কি তিনি জানতেন দুই বছর পর সেই সেরা ব্যাটিং লাইন আপের নেতাটাকে প্যাভিলিয়নে ফেরানো ডালভাত বানিয়ে ফেলবেন তিনি!

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...