দৃষ্টিনন্দন ব্যাটার। ব্যাস, এতটুকুই। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এখন আর নতুন করে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার বিন্দুমাত্র প্রয়োজন নেই যে ঠিক কার কথা বলা হচ্ছে। হ্যাঁ, লিটন কুমার দাস। যার ব্যাটিং চোখের প্রশান্তি জোগায়। যে লিটন দাসের খেলা দেখতে ফতুল্লা ছুটে গিয়েছিলেন মাশরাফি বিন মর্তুজা। অনেক সম্ভাবনার প্রদীপবাতি হয়ে যার আগমন ঘটে বাংলাদেশ ক্রিকেটে।
তবে তাঁর সেই সক্ষমতা বা সম্ভাবনার ছিটেফোঁটার দেখা মিলছিলো না। সবাই তখন ভেবেই বসেছিল, লিটন সম্পর্কে বলা প্রতিটা কথাই বড্ড বাড়িয়ে বলা। তবুও মাঝেসাঝে তিনি প্রমাণ করেছিলেন যে, একেবারেই ফেলনা নন তিনি। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের চাপটা ভীষণ। সেই চাপ সয়ে যাওয়া এবং পারফরম করা বাংলাদেশি ক্রিকেটারদের খুব একটা আয়ত্ত্বে নেই। তবুও আস্থা ছিল, ভরসা ছিল। লিটন অবশেষে নিজের সেই বছরটা খুঁজে পেয়েছেন, নিজেকে খুঁজে পেয়েছেন।
২০২২ সালটা লিটনের ক্যারিয়ারের টার্নিং পয়েন্ট হয়ে রইবে। ২৮ বছর বয়সী এই ক্রিকেটারের ব্যাটটা মন-প্রাণ খুলে হেসেছে। লিটনের ক্যারিয়ারের হাইলাইট হয়ে রইবে ২০২২। এই বছরই তিনিটি শতকের দেখা পেয়েছেন তিনি। সব ফরম্যাট মিলিয়ে তাঁর মোট শতকের সংখ্যা আটটি। সুতরাং বোঝাই যায় তিনি ঠিক কতটা সাবলীল ছিলেন এই পুরো বছর জুড়ে।
রানের ফোয়ারা ফুটেছে, লিটন দাসের প্রতি আস্থা বেড়েছে। যতক্ষণই লিটন ক্রিজে ছিলেন বাংলাদেশ প্রতিটাবার বিশ্বাস করেছে ম্যাচটা আসবে তাদেরই পক্ষে। এই যে যেমন বছরের শেষ প্রান্তে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে, ভারতের বিপক্ষে দুর্দান্ত এক ইনিংস খেলে বাংলাদেশের জয়ের আশা বাঁচিয়ে রেখেছিলেন। যেই মাত্র তিনি আউট হয়েছেন বাংলাদেশ যেন নিজেদের আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলে। ঠিক এতটাই গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়ে তিনি পরিণত হয়েছেন।
না হওয়ার অবশ্য কোন কারণ নেই, বাংলাদেশ ক্রিকেটের ইতিহাসে এক পঞ্জিকাবর্ষে সর্বোচ্চ রানের মালিক এখন লিটন কুমার দাস। দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা মুশফিকুর রহিম আর তাঁর মাঝে ব্যবধানটা প্রায় তিন শতাধিক রানের। এই বছর জুড়ে লিটন রান করেছেন প্রায় ৪০ গড়ে। ১৩টি অর্ধশতক করেছেন লিটন। ১৯২১ রান করতে তিনি খরচ করেছেন ৫০টি ইনিংস। ঠিক একই পরিমাণ ইনিংস খেলে ২০১৮ সালে মুশফিক করেছিলেন ১৬৫৭ রান।
এই বছরটা ব্যাটার লিটনের দারুণ কেটেছে, সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না। তাছাড়া দলগত সাফল্যেরও দেখা পাচ্ছেন লিটন। এবারের বাংলাদেশ ক্রিকেট লিগে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে তাঁর দল। সে দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন লিটন। সেই সাফল্যের হাত ধরে লিটন সুযোগ পেয়েছিলেন বাংলাদেশ জাতীয় দলকে নেতৃত্ব দেওয়ার। সেখানেও সাফল্য এসে ধরা দিয়েছে তাঁর ব্যাটের সুইট স্পটে। ভারতের বিপক্ষে বছরের শেষ ওয়ানডে সিরিজটায় জয় পেয়েছে লিটনের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ দল।
প্রতিটা ক্রিকেটার ঠিক এই একটা সময়ের অপেক্ষাই করে। পুরো চিত্রপট বদলে দেওয়ার একটি সুযোগের অপেক্ষার অবসান ঘটলো অবশেষে। লিটন নিশ্চয়ই এই ধারা অব্যাহত রাখতে চাইবেন। এখান থেকে পেছনে ফেরার কোন সুযোগ নেই। আগামী দিনে বাংলাদেশ ক্রিকেটের ব্যাটনটা তাঁর হাতেই থাকবে।
নিজের সক্ষমতা বিকশিত করেছেন লিটন। তাঁর ব্যাটিংয়ের প্রশংসায় পঞ্চমুখ গোটা বিশ্ব। এবার তো ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ থেকেও ডাক এসে গেছে তাঁর। কলকাতা নাইট রাইডার্স এই ব্যাটারকে ভিত্তিমূল্যে নিজেদের ডেরায় ভিড়িয়েছে। টি-টোয়েন্টিতে অ্যাংকরিং করার পাশাপাশি, পাওয়ার প্লের দারুণ ব্যবহার করতে পটু লিটন। অন্যদিকে তাঁর সাম্প্রতিক দুর্দান্ত ফর্ম নিশ্চয়ই কেকেআরকে বাধ্য করবে তাঁর আইপিএল অভিষেকের কালক্ষেপণ না করতে।
২০২২ এ এসে সাফল্যের ছোঁয়া পেতে শুরু করেছেন লিটন। তাঁর ক্ষুধা নিশ্চয়ই এখানেই থেমে যাবার কথা নয়। তাঁর ক্ষুধা বাংলাদেশকে নিয়ে যেতে পারে বহুদূর। তাঁর ব্যাটের হাসিই তো আনন্দ দেবে বিশ্ব ক্রিকেটকে।