মিরাজ, ট্র্যাজিক হিরো

একটা সিরিজ, স্রেফ একটা সিরিজের কারণে ভারত অনেক দিন মনে রেখেছিল মুস্তাফিজুর রহমানকে। ২০১৫ সালে সেই ওয়ানডে সিরিজে বাংলাদেশের জয়ের নায়ক ছিলেন ফিজ। আবার সাত বছর পর বাংলাদেশে এলো ভারত। এবার ভারতকে নিজের নামটা মনে রাখতে বাধ্য করলেন মেহেদী হাসান মিরাজ।

ওয়ানডে সিরিজে তো তিনিই বাংলাদেশকে দুটি জয় এনে দিয়েছেন। দুই ম্যাচেই তাঁর ব্যাটিং প্রশংসা কুড়িয়েছে। তবে ভারতের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ জিততে পারেনি বাংলাদেশ। না পারলেও ভারতের বুকে আবার ঠিকই কাঁপন তুলেছিলেন মেহেদী হাসান মিরাজ। তবে এবার আর ব্যাটিং দিয়ে নয়, এবার তিনি লড়েছেন বল হাতে।

বিশেষ করে ঢাকা টেস্টের চতুর্থ ইনিংসে তিনি আরেক বার হতে পারতেন জয়ের নায়ক। তবে অনেক কাছে গিয়েও সাদা পোশাকের ক্রিকেটে ভারতকে হারানো হল না। আরেক বার আক্ষেপে পুড়তে হলো বাংলাদেশকে। তবে জয়ের এতটা কাছাকাছি আসতে পারার পেছনেও সবচেয়ে বড় অবদান মিরাজেরই।

চতুর্থ ইনিংসে বাংলাদেশ ভারতের সামনে দিতে পেরেছিল ১৪৫ রানের টার্গেট। মিরপুরের উইকেটে চতুর্থ দিনে রান করা কঠিন হয়ে যায়। তবে জেতার জন্য ১৪৫ রান যথেষ্ট নয়। মিরাজ বোধহয় এমনটা মানতে নারাজ। গতকাল বিকালে বল হাতে নিয়েই নিজের ঘূর্নিতে দিশেহারা করেছেন ভারতের টপ অর্ডারকে।

ইনিংসের শুরুতেই ফিরিয়েছেন ভারতের ওপেনার শুবমান গিলকে। এরপর মিরাজের শিকার চেতেশ্বর পূজারা। অধিনায়ক সাকিব আল হাসানও লোকেশ রাহুলের উইকেট নিয়ে মিরাজকে সঙ্গ দিয়েছেন। তবে মিরাজ নিজের সেরা দানটা বাঁচিয়ে রেখেছিলেন একেবারে শেষের জন্য। দিনের শেষে তুলে নেন বিরাট কোহলির উইকেট। আর তাতেই ম্যাচ জয়ের আভাষ পেতে শুরু করে বাংলাদেশ।

আজ সকালে শুরুটা করেছেন সাকিব, তুলে নিয়েছেন জয়দেব উনাদকাটের উইকেট। এরপর মিরাজ পরপর তুলে নিয়েছেন অক্ষর প্যাটেল ও ঋষাভ পান্তের উইকেট। মিরাজের জোড়া আঘাতে ম্যাচ জয়ের স্বপ্ন ধরা দিতে থাকে বাংলাদেশের কাছে।

ওদিকে পান্তের উইকেট নেয়ার মধ্য দিয়ে টেস্ট ক্রিকেটে আরেকটা ফাইফার তুলে নিলেন এই স্পিনার। ওয়ানডে ফরম্যাটে নিজের ব্যাটিং দিয়ে মুগ্ধতা ছড়ানো মিরাজ এবার দেখালেন তাঁর বোলিং ঘূর্নিটাও। আরেক বার জানান দিয়ে রাখলেন তাঁর অলরাউন্ডার স্বত্বার। আর ভারতের বিপক্ষে এমন পারফর্ম করা মিরাজ যেন বললেন আমার নামটাও মনে রেখো।

ওদিকে ঢাকা টেস্টের চতুর্থদিন সকালটা ছিল রোমাঞ্চে ঠাঁসা। তৃতীয় দিনের খেলা শেষে জিততে পারতো যেকোন দলই। চতুর্থদিন সকালে মিরপুরের উইকেট কথা বলছিল স্পিনারদের পক্ষেও। এমন অবস্থায় ভারকে করতে হত ঠিক ১০০ রান। আর বাংলাদেশের প্রয়োজন ছিল ৬ টা উইকেট।

বাংলাদেশ দল আত্মবিশ্বাসটা পেয়েছিল গতকাল শেষ সেশনেই। ভারতকে ব্যাট করতে পাঠিয়ে সাকিব-মিরাজরা তুলে নিয়েছিল চার উইকেট। শেষ মুহূর্তে বিরাট কোহলির উইকেট ম্যাচে উত্তেজনা যেমন ছড়িয়েছে তেমনি ম্যাচের দৃশ্যপটও পাল্টে দিয়েছিল।

সকালে সেই আত্মবিশ্বাস নিয়েই মাঠে নেমেছিল বাংলাদেশ। মিরাজের পরপর দুই উইকেট তুলে নেয়ার পর জয়টাকে স্রেফ সময়ের ব্যাপারই মনে হচ্ছিল। মাত্র ৭৪ রানেই ৭ উইকেট হারিয়ে ফেলেছিল ভারত।

তবে সেখান থেকেই ভারতকে জয় এনে দেন রবিচন্দ্রন অশ্বিন ও শ্রেয়াস আইয়ার। অশ্বিন খেলেন ম্যাচ বাঁচানো ৪২ রানের ইনিংস। দুজনে মিলে অষ্টম উইকেটে গড়েন ৭১ রানের জুটি। আর এই জুটিতেই শেষ হয়ে যায় ভারতকে হারানোর স্বপ্ন।

লেখক পরিচিতি

আমার ডায়েরির প্রতিটা পৃষ্ঠাই আমার বাইশ গজ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link